সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মুমিনের আচরণ

ধর্ম ডেস্ক:

হজরত নুমান ইবনে বাশির (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক দয়া, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে তুমি মুমিনদের একটি দেহের মতো দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। সহিহ বোখারি : ৫৪৭৩

ইসলামি শরিয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনপদ্ধতি, যা সব দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠনের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এসব দিকের মধ্যে গুণাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’ সহিহ বোখারি : ৩৭৫৮

মানুষের মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার অন্যতম বিশেষ গুণাবলি হচ্ছে, চারিত্রিকভাবে পরিচ্ছন্নতা। একজন মুমিনকে জীবনের প্রকৃত আকাক্সক্ষা হিসেবে আচরণ বিশেষভাবে বেছে নেওয়া সুন্নত। পারস্পরিক ভালোবাসার মাধ্যমে তা বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। এদিক থেকে হাদিসটির গুরুত্ব অপরিসীম।

মানুষ জন্মগত স্বভাবেই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে; নিজেকে ভালোবাসে। পাশাপাশি মহান আল্লাহর প্রতিও ভালোবাসা সৃষ্টিগতই। আত্মার ভুবনে মূলত ভালোবাসা দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। একটি হলো স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির প্রেম, অন্যটি হলো সৃষ্টির সঙ্গে সৃষ্টির প্রেম। নিজের প্রতি ভালোবাসার মূল সূত্র ধরেই মানুষ তার বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে ভালোবাসে। স্রষ্টা নিজেও তার সৃষ্টিকে ভালোবাসেন এবং সৃষ্টির সেরা জীবের জন্য পৃথিবীকে সুশোভিত করেছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ইমানদাররা! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায়, (তাহলে ফিরে যাক), আল্লাহ এমনিতর আরও বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদের আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং তারা আল্লাহকে ভালোবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে।’ সুরা মায়িদা : ৫৪

সৃষ্টিকে না ভালোবাসলে স্রষ্টাকেও ভালোবাসা যায় না। মানুষ প্রকৃতিপ্রেমে নিমগ্ন হয়, অনেকে আপনজনহীন হয়েও একদল অনাত্মীয়ের ভিড়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। কেউ অসহায় কোনো মানুষ, শিশু বা জীবজন্তুকেও নিঃস্বার্থভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

জাগতিক সব কাজকর্ম ও নেক আমল আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা সুদৃঢ় করার উপলক্ষ মাত্র। সৃষ্টিকর্তার ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভই ধর্মপ্রাণ মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদার সম্বল। স্রষ্টাপ্রেম অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার প্রতি গভীর ধ্যানমগ্নতা, আত্মসমর্পণ ও মনোনিবেশ করা। সমগ্র সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে ভালোবাসে, আর স্রষ্টা নিজে তার সর্বোত্তম সৃষ্টি ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে ভালোবাসেন। মানবীয় গুণাবলির বিকাশসাধন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পরপারে পরিত্রাণ লাভ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ বাস্তবায়নে ও তার ভালোবাসা অন্তরে স্থান দেওয়া ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঘোষিত হয়েছে, ‘হে নবী! লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’

মানবশ্রেণিতে সর্বাধিক ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম পাত্র হচ্ছেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। উম্মতে মুহাম্মদির প্রতি তার অনুগ্রহ ও অবদান সবচেয়ে বেশি। নবী করিম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা একটি অপরিহার্য কর্তব্য, যার অবর্তমানে ইমান পরিশুদ্ধ হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, সেই আল্লাহর শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানাদির চেয়ে অধিক ভালোবাসার পাত্র হই। সহিহ বোখারি : ১৩

মুমিনের সবচেয়ে বড় দৌলত ইমান। এই মহা-দৌলতের স্বাদ যার নসিব হয়, সব দুঃখ-কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। মহব্বতের কারণে সব তিক্ত মিষ্টে পরিণত হয়। আর এই স্বাদ সে-ই পায়, যার কাছে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ইমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে ১. আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে অন্য সবকিছু হতে অধিক প্রিয় হওয়া; ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা ও ৩. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। সহিহ বোখারি : ১৫

মানুষ যে উৎসের পরিপ্রেক্ষিতে একে অন্যকে ভালোবাসে, এ নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করলে নির্দ্বিধায় বলতে বাধ্য হবে আমার প্রেম-ভালোবাসা, জীবন-মৃত্যু, আমার সর্বস্ব সেই মহান সত্তার জন্য নিবেদিত, যিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা; যেমনিভাবে বলেছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। পবিত্র কোরআনের ভাষায় বলো, আমার নামাজ, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর জন্য। সুরা আনআম : ১৬২

তাই মুমিন-মুসলমান হতে হলে অবশ্যই প্রত্যেক মানুষকে তার জীবন, সম্পদ, সন্তান-সন্ততি সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ ও তার রাসুলকে সর্বাধিক ভালোবাসতে হবে। তার বিধিবিধানগুলো স্রষ্টার প্রতি ভালোবাসার জন্য পালন করতে হবে।

সৃষ্টিকর্তা মানুষের স্বভাব-চরিত্রে যে প্রেমবোধ দিয়েছেন, তা শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সর্বব্যাপী। ফলে দয়া-মায়া, প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও হৃদয়ের টান একজন মানুষের পক্ষ থেকে অন্য মানুষ অবশ্যই পেতে পারে। ভালোবাসার পাত্র হতে পারেন সন্তান-সন্ততির জন্য তাদের মা-বাবা, মা-বাবার জন্য তাদের ছেলেমেয়ে, ভাইয়ের জন্য বোন, বোনের জন্য ভাই এবং অপরাপর আত্মীয়-অনাত্মীয় যেকোনো আপনজন। ভালোবাসা পোষণ ও প্রকাশের বৈধ কোনো সম্পর্ক ছাড়া ইসলামে একজন মানব-মানবীর মধ্যে হৃদয়ের কোনো টান থাকা এবং প্রেমকে আরও গভীর করার কোনো সুযোগ নেই। দয়া, ক্ষমা, সবর, বিনয়, সৎস্বভাব, সুন্দর আচরণ মানব চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই উত্তম চরিত্রবানই উত্তম ইমানদার।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION