বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৬ অপরাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জমজমাট আসর। এদিন কার্ডিনিয়া পার্ক স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা ও নামিবিয়ার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে বিশ্বকাপের। প্রথম রাউন্ড থেকে চারটি দল সুপার টুয়েলভে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রথম পর্বের ম্যাচগুলো হবে জিলং ও হোবার্টে। শ্রীলঙ্কা, নামিবিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম পর্বে খেলবে বাছাই উতরে আসা চার দল। আগের তিন আসরে প্রথম পর্ব খেলে চূড়ান্ত পর্বে যেতে হলেও এবার র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।
২২ অক্টোবর বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও হোবার্টে বাংলাদেশের মিশন শুরু হবে ২৪ অক্টোবর। প্রথম রাউন্ডের ‘এ’ গ্রুপের রানার্স-আপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২৭ অক্টোবর সিডনিতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ব্রিসবেনের গ্যাবায় ৩০ অক্টোবর প্রথম রাউন্ডের ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে খেলবে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এরপর অ্যাডিলেডে হবে বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচ। ২ নভেম্বর ভারত পরীক্ষার পর ৬ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়বে সাকিব আল হাসানরা।
সুপার টুয়েলভ শেষে সিডনিতে ৯ নভেম্বর হবে প্রথম সেমিফাইনাল। পরদিন দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ভেন্যু অ্যাডিলেড। আর ১৩ নভেম্বর মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের ফাইনাল।
তাছাড় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রত্যেকটি দলেই আছে একজন করে ‘পোস্টার বয়’। তাদের কেউ ব্যাটিংয়ে দলের সেরা তারকা। কেউবা বোলিংয়ে। কারো কারো অবদান দুটোতেই। বাংলাদেশ দলের কথা বললেই যেমন সবার আগে সাকিব আল হাসানের কথা ভেসে ওঠে চোখে। পাকিস্তানের আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, ভারতের রোহিত শর্মা। অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও দলে ভূমিকার বিচারে ১৬ দলের সেরা খেলোয়াড়কে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
ইংল্যান্ডে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। যদিও আরব আমিরাতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে হতাশ করেন তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় সাকিবই বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকা।
১০৪ ম্যাচে ২১৯৯ রান ও ১২২ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। রান সংগ্রহে বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনি শীর্ষে। আর টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক উইকেট শিকারে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির সঙ্গে যৌথভাবে এক নম্বরে রয়েছেন সাকিব।
মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান)
গত দুই বছর ধরে পাকিস্তানের সেরা টি-টোয়েন্টি তারকা মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাকে বলা হয় পাকিস্তানের ব্যাটিং স্তম্ভ। ২০২১ সালে স্বপ্নের মতো একটি বছর কেটেছিল এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের। এক পঞ্জিকা বর্ষে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। চলতি বছরও কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে রিজওয়ানের ব্যাট। এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে ৫৪.৭৩ গড়ে সর্বাধিক ৮২১ রান করেছেন তিনি। এ বছর টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক ৯ ফিফটিও এসেছে তারই ব্যাট থেকে।
রোহিত শর্মা (ভারত)
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার। ১৪২ ম্যাচে ৩১.৯৪ গড়ে ৩৭৩৭ রান করেছেন তিনি। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি ৪ সেঞ্চুরিও রোহিতের। সর্বাধিক ফিফটিতে স্বদেশি বিরাট কোহলি (৩৩) ও পাকিস্তানের বাবর আজমের (২৯) পরেই রয়েছেন রোহিত (২৮)। এ বছর ভারতীয়দের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। ভারতীয় ওপেনার ২৩ ম্যাচে ১৪২.৪৮ স্ট্রাইকরেটে ৫৪০ রান করেছেন।
জস বাটলার (ইংল্যান্ড)
উইয়ন মরগানের কাছ থেকে সাদা বলের নেতৃত্ব পেয়েছেন জস বাটলার। মরগানের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংলিশদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান বাটলারের। ৯৭ ম্যাচে ৩৩.৯৫ গড়ে ২৩৭৭ রান করেছেন তিনি। একমাত্র সেঞ্চুরিটি বাটলার হাঁকান গত বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ায় ৮ ম্যাচে ৩৫.৮৫ গড়ে ২৫১ রান করেছেন বাটলার। চলতি বছর ৯ ইনিংসে তার গড় ২৯.৬২। স্ট্রাইকরেট ১৭৯.৫৪!
নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
টি-টোয়েন্টি প্রসঙ্গে সবার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কথাই আসে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল দল তারাই। আরব আমিরাতে ক্যারিবিয়ানদের গত আসরটা ছিল ব্যর্থতায় মোড়ানো। তবে নিকোলাস পুরানের নেতৃত্বে নিজেদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে নেমেছে দলটি। এই বছর টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান পুরানের। ২০ ম্যাচে ৩২.৭৬ গড় আর ১৩৩.৫৭ স্ট্রাইকরেটে ৫৫৭ রান করেছেন তিনি।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
গত টি-টোয়েন্টি আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এখন পর্যন্ত ৪৪ ম্যাচে ৭১ উইকেট নিয়েছেন এই লেগি। ইকোনমি রেট ৬.৭২। পাশাপাশি ১২৪.৪৪ স্ট্রাইকরেটে ৪৪৮ রান করেছেন হাসারাঙ্গা। শ্রীলঙ্কাকে এশিয়া কাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপেও লঙ্কানদের কান্ডারি হবেন তিনি।
রশিদ খান (আফগানিস্তান)
আফগান ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় তারকা রশিদ খান। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই হোক আর আন্তর্জাতিকÑ সবখানেই তার লেগস্পিন দারুণ কার্যকর। যেকোনো পিচ ও কন্ডিশনে রশিদ সেরাটা বের করে আনতে পারেন। টি-টোয়েন্টিতে উইকেট শিকারে সাকিব আল হাসান, টিম সাউদির পরেই রশিদ খান। ৭১ ম্যাচেই ১১৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। রান খরচে বেশ কিপ্টে রশিদ। ইকোনমি রেট ৬.২৪।
মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)
নিউজিল্যান্ডের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাতটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন মার্টিন গাপটিল। অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেন এই ওপেনার। টি- টোয়েন্টিতে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির পর সর্বাধিক রানের মালিক গাপটিল। ১২২ ম্যাচে ৩১.৮১ গড়ে ৩৫৩১ রান করেছেন তিনি। দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি হাঁকিয়েছেন ২০টি।
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া)
তার নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টিতে প্রথম শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি রান ফিঞ্চের। ১০০ ম্যাচে ৩০১৩ রান করেছেন ৩৩.৮৫ গড় ও ১৪৪.০২ স্ট্রাইকরেটে। রয়েছেন দুটি সেঞ্চুরি ও ১৮টি হাফসেঞ্চুরি। এ বছর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রান ফিঞ্চের। ১৭ ম্যাচে ২৫.৩১ গড়ে ৪০৫ রান করেছেন তিনি।
ডেডিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা)
টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে রেকর্ড ১০৪ ম্যাচ খেলেছেন ডেভিড মিলার। এই ফরম্যাটে প্রোটিয়া ব্যাটারদের মধ্যে হয়ে সবচেয়ে বেশি ২০৬৯ রানের মালিক মিলার। বাঁহাতি এই মারকুটে ব্যাটার চলতি বছর তুখোড় ফর্মে রয়েছেন। ১২ ম্যাচে ৫৬.৬০ গড় ও ১৮৬.১৮ স্ট্রাইকেরেটে ২৮৩ রান করেছেন। ভারতের মাটিতে সিরিজে একটি সেঞ্চুরি হাঁকান মিলার।
সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)
সিকান্দার রাজার ব্যাটে চড়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার স্বপ্ন দেখছে জিম্বাবুয়ে। ২০২২ সালে রান সংগ্রহে ভারতের রোহিত শর্মার পরেই রাজার অবস্থান। ১৬ ম্যাচে ৩৯.৬৯ গড়ে ৫১৬ রান করেছেন তিনি। রয়েছে ৪টি ফিফটি। টি-টোয়েন্টিতে মোট ৫৮ ম্যাচে ১০৪০ রান করেছেন রাজা।
পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড)
আইরিশদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টিতে রান সংগ্রহে পাঁচ নম্বরে রয়েছেন স্টার্লিং। ১১৪ ম্যাচে ৩০১১ রান করেছেন ১৩৪.৮৪ স্ট্রাইকরেটে। ২০২২ সালে ২০ ম্যাচে ৪০৫ রান করেছেন এই ওপেনার।
মোহাম্মদ ওয়াসিম (আরব আমিরাত)
আরব আমিরাতের এই ওপেনার ১৭ টি-টোয়েন্টিতে ৪০.৬২ গড়ে ৬৫০ রান করেছেন। দুটি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তার। স্ট্রাইকরেট ১৫২.৫৮। ওয়াসিমের ধরাবাহিতায় বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার স্বপ্ন দেখছে আরব আমিরাত।
ম্যাক্স ও’দাউদ (নেদারল্যান্ডস)
টি-টোয়েন্টিতে নেদারল্যান্ডসের সবচেয়ে বড় তারকা ম্যাক্স ও’দাউদ। ৫০ ম্যাচে ২৯.০৩ গড়ে ১৩৪৭ রান করেছেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী এই ওপেনারের নামের পাশে রয়েছে একটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফসেঞ্চুরি। ডাচদের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ও’দাউদ।
রিচার্ড বেরিংটন (স্কটল্যান্ড)
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্কটিশদের নেতৃত্ব দেবেন রিচার্ড বেরিংটন। স্কটল্যান্ডের হয়ে ৭৬ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৭১৮ রান করেছেন বেরিংটন। জর্জ মানসির সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে দলের মাত্র দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান বেরিংটন।
ডেভিড ভিসা (নামিবিয়া)
২০১৫তে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও ডেভিড ভিসা এখন নাবিমিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও নামিবিয়ার দলে ছিলেন। ১৬ ম্যাচে ১৪ উইকেট এবং ২৬.৮১ গড়ে ২৯৫ রান করেছেন ভিসা।
ভয়েস/জেইউ।