শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ব্যাধি-মহামারী বনাম মার্কস-লেনিন

হরিপদ দত্ত:

কার্ল মার্কসের পাথরমূর্তি আজও বহাল তবিয়তেই রয়েছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ফ্যাসিস্ট বদমাশদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিলেতে মার্কসের পাথরমূর্তি আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টির মূর্তির চেয়েও মহিমান্বিত। অন্যদিকে রুশ বিপ্লবের জনক তথা বিশ্বের মেহনতি জনতার মুক্তিদাতা ভøাদিমির ইলিচ লেনিন রয়েছেন মমি হয়ে, মস্কোয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংসকারী গর্বাচেভ আর ইয়েলেতসিন সে মমিকে স্পর্শ করার সাহস পায়নি। সোভিয়েতের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রাক্তন প্রধান বর্তমান রুশ রাষ্ট্রনায়ক ভøাদিমির পুতিনও লেনিনের মমিকে জাদুঘর থেকে অপসারিত করে কবরগুহায় স্থানান্তর করেননি। লেনিনের সে সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ আর নেই, মহাশক্তিধর হিসেবে এক দিন সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে ছিল দণ্ডায়মান, তা অতীত। কিন্তু মমিতে পরিণত হয়েও লেনিন আছেন, মানবসভ্যতার অবশ্যম্ভাবী আগামী মহাবিপ্লবের ঘুমন্ত ভলকানো হয়ে। এটাই পুঁজিবাদের চিরস্থায়ী আতঙ্ক। দুঃস্বপ্ন। তবে লেনিন যে একেবারে ভাগ্যশূন্য এমন দাবি করা যাবে না। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলোপ হলে আমেরিকার ইন্ধনে এবং গোপন অর্থে সারা দেশে বুলডোজার দিয়ে লেনিনের মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাজনৈতিক বিবর্তন ঘটলেও একই কাণ্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের একেবারে কানঘেঁষা ক্ষুদ্র ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরায়ও উগ্র হিন্দু মৌলবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি ক্ষমতায় আসামাত্র লেনিনের মূর্তিকে দুরমুশ করা হয়েছে।

মূর্তি ভাঙার ঐতিহ্য মানবসমাজের নতুন কোনো দর্শন নয়। এর শুরু সভ্যতার একেবারে গোড়ায়। এর পেছনে রয়েছে আধিপত্যবাদী বাসনা। রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম-বিশ্বাসের ইন্ধন শক্তি। মানবসভ্যতার প্রাচীন এবং মধ্যযুগ তো হচ্ছে মূর্তি ভাঙার যুগ। আধুনিক যুগ তার উত্তরসূরি। আমরা স্মরণ করতে পারি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। বিদ্যাসাগর হচ্ছেন বাঙালির মাতৃভাষা চর্চার আদি গুরু। সত্তর দশকে কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তির মুন্ডু ছেদন করে মাওবাদী নকশাল কমিউনিস্টরা। পরে তারা ভুল স্বীকার করলেও ইতিহাস ভোলা যায় না। তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মূর্তিও পুলিশ পাহারায় ছিল কিছুদিন। কী অপরাধ রবীন্দ্রনাথের? না তিনি ‘বুর্জোয়া কবি’। একেবারে হালে বিদ্যাসাগরের নিজের কলেজের ভেতরই তার ক্ষুদ্র মূর্তিটি ভেঙে দেয় আরএসএস, বিজেপির উগ্রহিন্দু মৌলবাদী মিছিলকারী যুবকরা। কেন এই আদিম অভ্যাস ভাঙাভাঙির? ভয়! আতঙ্ক! মূর্তিকে আবার ভয় কী? সে তো জড়পদার্থ। শক্তিহীন। প্রতিরোধ-শূন্য। ভয় অবশ্যই আছে, মূর্তির ভয় নয়, ভয় আদর্শের, মূর্তি-হয়ে-যাওয়া একদা জীবন্ত মানুষটির অগ্নিময় মতাদর্শের। এই মতাদর্শের তো মৃত্যু নেই। সে অমর। রবীন্দ্রনাথ তার ‘ছবি’ কবিতায় মৃত স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে আত্মপ্রশ্ন জাগিয়েছিলেন, ‘হায় ছবি, তুমি কি কেবল ছবি শুধু পটে লিখা?’ কবি শামসুর রাহমানের একটি অসাধারণ কবিতা আছে অকাল-মৃত পুত্রের ছবির দিকে তাকিয়ে। কবির শ্যামলীর বাসায় এ বিষয়ে তাকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম। কবি ছিলেন নীরব। ঠোঁট কাঁপছিল। চোখ সজল। তাতেই আমি উত্তরটাও পেয়ে যাই। অনেকক্ষণ পর কবি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হরিপদ, আপনি কি সাঁতার জানেন?’ কেননা এ প্রশ্নের পেছনে ছিল কবিপুত্রের পানিতে ডুবে অকালমৃত্যু।

অন্যদিকে মূর্তির অমরত্বের পেছনে যে শুধু শুভশক্তিই রয়েছে তা কিন্তু নয়। অশুভ শক্তিও আছে। ধরা যেতে পারে মহাসমুদ্র অভিযাত্রী কলম্বাসের কথা। সাম্রাজ্যবাদ আর উপনিবেশবাদ সমর্থক ইতিহাসবিদরা কলম্বাসের গুণকীর্তনে মুখর। শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের উপনিবেশ স্থাপনে যেসব সমুদ্র-অভিযাত্রী নতুন দেশ-ভূমি আবিষ্কার করে সহায়তা করে দিয়েছেন, কলম্বাস তাদের অন্যতম। আমেরিকার ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে কলম্বাসের একটি মূর্তি ছিল। তা ভেঙে দেয় আমেরিকার আদিবাসী ভূমিপুত্রদের একদল রাগী যুবক। এতে হয়তো তাদের শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় দখলদারদের প্রতি ঘৃণাই প্রকাশ পেল। কিন্তু উপনিবেশবাদের ইতিহাস, বর্ণবিদ্বেষের ইতিহাস বদলানো কি গেল? নিশ্চয়ই নয়। ইতিহাসের কবর খুঁড়লে তো স্তূপের পর স্তূপ শোষণ-নির্যাতনের কঙ্কাল বেরিয়ে আসবে। অন্যদিকে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ভেতর আজও সগৌরবে বিরাজ করছে একটি মূর্তি। পলাশী যুদ্ধের খলনায়ক, ভারতবর্ষে ইংরেজ উপনিবেশ স্থাপনের স্থপতি রবার্ট ক্লাইভের। ইংরেজের তৈরি মূর্তি। অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে। কই, এত বছর পরও কোনো বাঙালি তো সেই মূর্তি ভাঙতে গেল না? ভাঙল বিদ্যাসাগরের মূর্তি! এ কী রহস্যময় বাঙালি চরিত্র?

কলকাতার নগরের রাজপথে স্থাপিত মার্কস অথবা লেনিনের মূর্তি ভেঙে ফেলা মোটেই কঠিন কাজ নয়। স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতা পকেটে গোটা কতক নোট আর পেটে এক পেগ ঢুকিয়ে হাতে একটা কুড়াল তুলে দিলেই কেল্লা ফতে! অথচ আজ এই করোনা মহামারী আর অর্থনৈতিক, মানবিক মহাবিপর্যয়ের দিনে বারবার মনে পড়ে মার্কস-লেনিনকে। কেন মনে পড়ে মার্কসকে? মনে পড়ে, কেননা মহা-ভয়ংকর অজ্ঞাত-অচিন্ত্যনীয় ব্যাধি সর্বগ্রাসী মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে মানবসভ্যতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদী বিশ্ব ভয়ে থরহরিকম্প। পুঁজিবাদী অর্থনীতি, পুঁজিবাদী সমাজরাষ্ট্র, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষা, যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিল্প-কারখানাসব লুটিয়ে পড়েছে। ক্যাপিটালিজমের সব অর্জন মিথ্যে হয়ে গেছে। আমরা ভুলিনি, সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের সময় লুটেরা পুঁজিবাদের তল্পিবাহকরা বগল বাজিয়ে নেচে-কুঁদে ঘোষণা করেছিল মার্কসবাদ মৃত, সমাজতন্ত্র মৃত, বাতিল ওসব ডগমা। তখন বিলেতে পাথরমূর্তির ভেতর মৃত কার্ল মার্কস হাসছিলেন। মস্কোয় কাচঘেরা ঘরে মমি হয়ে ঘুমিয়ে-পড়া লেনিন মুচকি হাসিতে কাচের দেয়ালে শীতল ভেপার তৈরি করেছিলেন।

পৃথিবীর দেশে দেশে কোটি কোটি কৃষক, যাদের পূর্বপুরুষরা চাষাবাদ করে জীবন কাটাত গ্রামের মাঠে-খামারে, শ্রমিক হয়ে আজ তারা শহরে চলে গেছে। চাষাবাদ তাদের খাদ্য জোগাতে পারে না। চাষিপুত্র আজ চাষি হতে চায় না। বাধ্য হয় দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে মজুর হতে। মহাব্যাধি আর মৃত্যু তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে বন্ধ হয়ে যাওয়া নির্মাণকাজ আর কারখানা থেকে। দেশের ঠিকানায় ছুটতে ছুটতে বিশ্বায়নের মানুষ, মুক্তবাজার অর্থনীতির মানুষ শুনছে রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণাআসছে মহামন্বন্তর! প্রশ্ন হলো, কোথায় গেল পুঁজিবাদী দেশের বা মাতৃভূমির পবিত্র সংবিধানে বর্ণিত নাগরিকের অধিকার? কোথায় হারাল বাঁচার অধিকার, চিকিৎসার অধিকার? রাজনীতি কি শুধু ভোটের উৎসব? বাংলাদেশের মানুষের কি মনে পড়ে না একাত্তরের অঙ্গীকার? একাত্তরে তাদের মুক্তিযোদ্ধা পূর্বসূরিরা রাজনীতি বলতে কী বুঝত? তাদের কাছে রাজনীতিটা কি ছিল না শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন? এসবই তো ছিল মার্কসের কথা। কার্ল মার্কস তো এটা বলেননি যে টাকাপয়সার শক্তি বিদ্যা আর জ্ঞানচর্চার চেয়ে অধিক।

আমরা যে শ্রেণিতে অবস্থান করছি তাকে পেছনে ঠেলে শুধু ওপরে উঠতে চাইছি। যত অর্থ-মুদ্রা আছে তারও ওপরে উঠতে উন্মাদ আমরা। অথচ মার্কস তার বিরুদ্ধে। একসঙ্গে চলতে বলেছেন তিনি। বলেছেন শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বারবার বলেছেন ক্ষুধাহীন সমাজ আর রোগ-শোক-ব্যাধি-শূন্য আনন্দময় এক সমাজের কথা। ডাস ক্যাপিটাল লিখে দুনিয়ার অর্থনীতির সংজ্ঞা বদলে দিয়েছেন। শুধু ইংল্যান্ডে নয়; জার্মানি-সমেত ইউরোপের দেশে দেশে তিনি প্লেগের দাপট দেখেছেন। বুঝেছেন পুঁজিবাদী সমাজ সফলভাবে এই রোগের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ। কেননা পুঁজিবাদে মানবতা নেই। স্বার্থপরতা আছে। চিকিৎসার বদলে চলে চিকিৎসা-বাণিজ্য। কেন থাকবে শুধু একচেটিয়া ধনীদেরই চিকিৎসা-অধিকার? কার্ল মার্কস পাথরের বা ধাতব কোনো মূর্তির ভেতর নেই, তিনি আছেন আদর্শে, দর্শনে। আজ মানুষ মার্কসের চোখ দিয়েই দেখছে এইডসের মতো ঘাতক রোগ কেন সমাজতান্ত্রিক সমাজে নেই। এটাও দেখছে পুঁজিবাদ অতি-মুনাফার লোভে কী করে ধ্বংস করছে বিশ্ব পরিবেশ এবং জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন ব্যাধির। মার্কস আছেন অন্নহীন, গৃহহীন, ব্যাধিতে-আক্রান্ত মানুষের মুক্তির স্বপ্নে। মার্কসই জানিয়েছেন মানুষের রোগমুক্তির অধিকার, আনন্দময় জীবনের অধিকার হচ্ছে তার মৌলিক অধিকার। পুঁজিবাদ তা গ্রাস করতে পারে না।

মানবসভ্যতায় মার্কসের তত্ত্বের সফল প্রয়োগ প্রথম যিনি করেন তার নাম লেনিন। তিনিই প্রথম বিশ্বের মধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে জনস্বাস্থ্য পরিষেবার উদ্ভাবক। বিপ্লবের পর ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নানা দেশের স্প্যানিশ ফ্লু-আক্রান্ত সৈন্যরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষেও এই ঘাতক ব্যাধি চলে আসে। বাংলাসহ এই ভারতবর্ষেই দুই লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। রাশিয়া আরও সংকটে পড়ে ফ্লু-এর সঙ্গে কলেরা-মহামারী শুরু হলে। এদিকে বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় সাম্রাজ্যবাদীরা। বাইরে থেকে ওষুধ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। লেনিন দৃঢ় হাতে মহামারী দমনে নেমে পড়েন। তিনি গড়ে তোলেন জনস্বাস্থ্য কমিসারিয়েট। এর কার্যভার তুলে দেওয়া হয় শ্রমিক কাউন্সিলগুলোর ওপর। লেনিন ঘোষণা করেন, ‘হয় ব্যাধির জীবাণু ধ্বংস করবে সমাজতন্ত্রকে, নয়তো সমাজতন্ত্রই পরাভূত করবে মহামারীকে’। তাই তিনিই বিশ্বে প্রথম শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য পরিষেবা তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে জাতীয়করণ করেন। বিনা মূল্যে নাগরিকরা স্বাস্থ্য পরিষেবা লাভ করেন। লেনিনই প্রথম বিশ্বনেতা যিনি সদ্য (১৯১৭) বিপ্লব-করা দেশে দুবছর পর ১৯১৯ সালে বিপ্লব রক্ষার্থে রাজধানী মস্কোর রেলস্টেশনগুলোকে জীবাণুমুক্তকরণে স্যানিটাইজার পদ্ধতি গ্রহণ করেন। বিপ্লবী স্বাস্থ্যকর্মীর (বিপ্লবে অংশগ্রহণ-করা জনফৌজ) অসংখ্য গ্রুপ তৈরি করে রেলযাত্রীদের চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করেন। সারা বিশ্ব (পুঁজিবাদী) অবাক হয়ে দেখে বিস্ময়কর সেই কর্ম-প্রচেষ্টা।

আজকে করোনা আক্রান্ত দেশে দেশে রোগীদের যে লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, নিভৃতবাসে পাঠিয়ে চিকিৎসা দান করা হয়, তার উদ্ভাবক হচ্ছেন ইলিচ লেনিন। তিনি জানতেন বিপ্লব রক্ষা করতে গেলে মহামারীকে পরাজিত করতেই হবে। আমাদের আক্ষেপ-কষ্ট এই, আমরা স্মৃতির দংশনে ক্ষত-বিক্ষত হই, যখন মনে পড়ে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে সংক্রামক ব্যাধি এবং মহাদুর্ভিক্ষের কথা। সেদিন আমরা ব্যাধি, ক্ষুধা আর যুদ্ধপীড়িত সদ্য-স্বাধীন জনগণকে সেবা দিতে পারিনি। যে রাশিয়া আমাদের যুদ্ধবিজয়ে বিরাট ভূমিকা নিয়েছিল তার অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করিনি। শিক্ষা নিইনি। আজকে যে বিশ্ববাসী করোনাকে পরাভূত করার ওষুধ আবিষ্কারের জন্য হাতড়ে মরছে, ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সাল অবধি রাশিয়ার অবস্থা ছিল তাই। শতভাগ নিরাময় হতে পারে, কলেরার জন্য এমন ওষুধ তখনো আবিষ্কার হয়নি। কলেরায় রাশিয়ায় মৃত্যু ঘটেছিল ২০ লাখ মানুষের। রুশ বিপ্লবের বিপ্লবী বাহিনীর সদস্য তো বটেই, মৃত্যু ঘটেছিল রেড আর্মির অন্যতম নেতা, লেনিনের সহযোদ্ধা লিও ট্রটস্কির পিতার। সেদিন লেনিন স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউনিয়নের সম্মেলনে ঘোষণা করেন, ‘বিপ্লবী যুদ্ধে আমরা রক্তপাতের পথে সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্ত ধ্বংস করতে পেরেছি। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধে ব্যাধি মহামারীকে পরাভূত করা’।

(আগামীকাল দ্বিতীয় কিস্তিতে সমাপ্য)

লেখক: কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION