বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৮ অপরাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
নেইমারের হতে যাচ্ছে তৃতীয় বিশ্বকাপ। গ্যাব্রিয়েল জেসুস ছিলেন রাশিয়া বিশ্বকাপে। ব্রাজিলের আক্রমণে ভাগের বাকিদের মধ্যে ভিনিসিউস জুনিয়র, রদ্রিগো রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন গতবার, এবারো গোলের মধ্যে আছেন। রিচার্লিসন ২০১৮ থেকেই ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগে নিয়মিত খেলে আসছেন। তার অভিষেকের সময় থেকে নেইমার করেছেন ৩১ ম্যাচে ১৮ গোল, রিচার্লিসন ৩৮ ম্যাচে করেছেন ১৭ গোল।
এই নামগুলোর সঙ্গে পেদ্রো, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেলি নাম দুটি চমকে ওঠার মতো। এ বছরই অভিষিক্ত ৩ ম্যাচ খেলেছেন। কোনো গোল করা হয়নি। তিতে তাকে সুযোগ দিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুসের সঙ্গে আর্সেনালের হয়ে দারুণ এক মৌসুম কাটানোর পুরস্কার হিসেবে। ১৩ ম্যাচে ৫ গোল করেছেন এই লেফট উইঙ্গার। সেন্টার ফরোয়ার্ড পেদ্রো ব্রাজিলের হয়ে দুই ম্যাচ খেলেছেন, দুটিতেই নেমেছেন রিচার্লিসনের বদলি হিসেবে। সেপ্টেম্বরে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিলের ৫-১ গোলের শেষটি করেন এই তরুণ। ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে ব্রাজিলের ঘরোয়া আসরগুলোতে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানোয় (৫৯ ম্যাচে ২৯ গোল) তিতের চোখে চোখে ছিলেন তিনি।
তবুও বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়াটা অবাক করেছে এই তরুণকে। আবেগের টেউ বইয়ে গেছে তার মধ্যে। খবরটি শুনে পরিবারের সঙ্গে মেতে ওঠেন উল্লাসে। তখনই বান্ধবী ফের্নান্দা নগেইরাকে চমকে দেন হাঁটু গেড়ে আংটি হাতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্মিত নগেইরা প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পেদ্রোকে দ্বিগুণ আনন্দে ভাসান। বলেছেন, ‘আমার জন্য বিশেষ এক দিন। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া আমার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।’ পেদ্রো প্রথম বিশ্বকাপ খেলবেন তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া দানি আলভেসের সঙ্গে। ২০১০, ২০১৪-তে খেলেছিলেন এই রাইটব্যাক। ২০১৮তেও খেলবেন, সব ঠিকঠাক। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র কদিন আগে ফ্রেঞ্চ কাপ ফাইনালে হাঁটুর ইনজুরি কাঁদিয়েছিল তাকে। নেইমার-জেসুসদের উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য কেউ কাঁদবে না। কেউ যেন আমার জন্য মন খারাপ না করে। আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে থাকব।’
চার বছর পর আবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়ে আনন্দে কেঁদেছেন ৩৯ বছর বয়সী এই রাইটব্যাক। এই বয়সে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার আনন্দে আবেগে ভেসে কাল একটি ভিডিও প্রকাশ করেন পেশাদার ফুটবলে সর্বোচ্চ ৪৬টি শিরোপা জেতা আলভেস। ‘আজ বিজয় দিবস এবং আমি খুব খুশি। খবরটা পেয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টি বোধ হচ্ছে। চার বছর আগে এই একই পরিস্থিতিতে থাকতে চোটের কারণে সুযোগ না পাওয়ায় কেঁদেছিলাম। সেটা ছিল দুঃখের কান্না। কিন্তু আজকের কান্নাটা আনন্দের।’
বার্সেলোনা ছেড়ে মেক্সিকোর একটি ক্লাবে খেলতে গেছেন আলভেস। ব্রাজিলের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন সেই জুলাইয়ে। তারপরও তাকে যে কারণে আস্থায় নিয়েছেন তিতে ‘(দলে) অন্য সবার যে মানদণ্ড, আলভেসেরও তাই। ব্যক্তিগত দক্ষতা, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার পুরস্কার এটি। অন্যদের মতোই তার হয়তো একাধিক যোগ্যতা আছে।’ আলভেস নিজেও তাই মনে করেন, ‘বহুল চর্চায় ক্লিশে হয়ে আসা সেই কথাটা “কখনো হাল ছেড়ো না” এটা সত্যি এবং আমি তা প্রমাণ করতে চাই। চার বছর পর আবারও বিশ্বকাপ এবং আমিও আছি। এটা কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার।’ এই বয়সেও উইং ধরে দ্রুতগতিতে দৌড়ানোর পাশাপাশি নিখুঁত ক্রসের অভ্যাস ভুলে যাননি আলভেস। কাতারে একটি রেকর্ডও তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ব্রাজিলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়বেন আলভেস। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে ৩৭ বছর বয়সে খেলা দালমা সান্তোস এখনো দখলে রেখেছেন সেই রেকর্ড। তিনিও ছিলেন রাইটব্যাক। আলভেসও একই পজিশনের। দালমার রেখে যাওয়া সেই পজিশনে খেলে নতুন মাত্রা যোগ করেন আলভেস। ২০০৬ সালে ব্রাজিল দলে অভিষেকের পর ডানপ্রান্তের উইং কিংবা রক্ষণে তার চেয়ে ভালো ফুটবলার খুব কমই দেখা গেছে।
ব্রাজিলের সুনির্দিষ্ট কোনো অধিনায়ক নেই। কখনো নেইমার থাকেন তো কখনো মার্কিনহোস। তবে আলভেসের ওপর আস্থা রাখতে পারেন তিতে। আর তা হলে গত বছর টোকিও অলিম্পিকের শ্রেষ্ঠত্বের মতো বিশ্বকাপটাও হাতে নিতে পারেন দানি আলভেস। ২০ বছর ধরে ব্রাজিলের কাপটা জেতা হয়নি।
ভয়েস/আআ