সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

গণক ও জ্যোতিষী থেকে সাবধান

শায়খ হোসাইন বিন আবদুল আজিজ আলে শায়খ:

বিশুদ্ধ আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ মর্মে দৃঢ় ইমান ও বিশ্বাস পোষণ করা আল্লাহ ছাড়া আর কেউই গায়েব জানেন না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আল্লাহ ছাড়া আসমান ও জমিনে কেউই গায়েব জানেন না এবং তারা উপলব্ধিও করেন না কখন উত্থিত হবে।’ -সুরা আন নামল: ৬৫

বর্ণিত আয়াত থেকে গণক, জ্যোতিষী ও রাশিফল গণনাকারী, হস্তরেখাবিদ এবং বাটি চালানে পারদর্শীরা যেসব অদৃশ্যের জ্ঞান রাখার দাবি করেন তাদের মিথ্যা ও প্রতারণার বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। সেই এটাও জানা যায়, যেসব জিনিসের আশ্রয়ে ভবিষ্যতে যা ঘটবে এবং যা মানুষের থেকে অদৃশ্য, সেসব বিষয়ে তাদের সংবাদ দেওয়ার মিথ্যা ও প্রতারণামূলক দাবির বিষয়টি। বিভিন্ন পন্থায় রাশিচক্রবিদ্যা এবং জ্যোতিষবিদ্যা অথবা অনুরূপ নামে এগুলো সম্প্রচারের বিষয়টি স্পষ্ট। এগুলোর সবই বানোয়াট মিথ্যা ও বৈচিত্র্যময় কল্পকাহিনী। এসব গণক ও জ্যোতিষবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত, যার কোনো বাস্তব ও শরিয়তসম্মত ভিত্তি নেই।

জ্যোতিষবিদ্যার প্রতি বিশ্বাস এবং তা মেনে নেওয়ার বিষয়টি ছাড়াও ইসলামি শরিয়ার বিজ্ঞ আলেমরা জ্যোতিষবিদ্যার অনুরূপ বিদ্যা শেখা, তা চর্চা করা এবং শোনা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন. ‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষবিদ্যার কিছু শিক্ষা অর্জন করল, সে যেন জাদুবিদ্যার একটা শাখা আয়ত্ত করল। সুতরাং সে যত বেশি তা চর্চা করবে, ততই তার জাদুবিদ্যার চর্চা হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ

সহিহ বোখারির বর্ণনায় হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বলে, অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে আমাদের ওপর বৃষ্টিপাত হয়েছে, সে আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে।’ যে কেউ এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে, সে পর্যায়ক্রমে আরও দুর্যোগের মধ্যে পতিত হবে, তার চাহিদার বিপরীত ফলস্বরূপ। আর বান্দার সঙ্গে এটাই আল্লাহর রীতি, যে ব্যক্তি তাকে ছাড়া অন্য কারও কাছে শান্তি খুঁজবে কিংবা অন্যকে অবলম্বন করবে অথবা কোনো মাখলুকের (সৃষ্টির) প্রতি নির্ভরশীল হবে, এর কারণে তিনি তাকে তার চাহিদার বিপরীত বস্তু দান করবেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো কিছু লটকায় তাবিজ কিংবা কড়ি জাতীয় কিছু, তাকে সেদিকেই ন্যস্ত করা হবে।’

ইসলাম তারকারাজির প্রকৃত জ্ঞান সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে। তারকারাজি মূলত আসমানের শোভা, দিকসমূহ নির্ণয়, ফসলি মৌসুম, বাৎসরিক ঋতুর সময়কাল ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের নিদর্শন। এগুলো ছাড়া যে ভ্রান্ত মতগুলো মানুষদের সৃষ্টিকর্তা, বিশ্বজগতের অধিপতি, সৃষ্টিজগৎ ও বস্তুজগতের একক পরিচালক আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কারও সঙ্গে যুক্ত করতে চায়; তা হলো সঠিক দ্বীন ও ত্রুটিমুক্ত আকিদা থেকে বিচ্যুতি ও ভ্রষ্টতা। জ্ঞানগত ভিত্তি ও শরয়ি দলিলের ওপর যা নির্মিত নয়, তা মানুষকে মিথ্যা ধ্যান-ধারণা এবং অজ্ঞতাপূর্ণ বিশ্বাসে নিপতিত করে। এ জন্য সুস্পষ্ট কুফরি এবং বিশুদ্ধ দলিলের বিরোধিতার অন্তর্গত হলো, ‘প্রভাব বিজ্ঞান’ নামক বিদ্যার ওপর বিশ্বাস রাখা। অর্থাৎ এ বিশ্বাস লালন করা, তারকারাজি যুদ্ধবিগ্রহ, অনিষ্ট-অকল্যাণের মতো ঘটনাবলি সৃষ্টিতে কার্যকর প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এ ধরনের বিশ্বাস লালন বড় শিরক, যা ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তারকারাজিকে তার চলাচল, আবর্তন ও স্থানান্তরের দ্বারা বিভিন্ন জিনিস ঘটার সময় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার কারণ হিসেবে নির্ধারণ করে, অতঃপর সে ব্যক্তি যা ঘটেনি বা ভবিষ্যতে যা ঘটবে এমন গায়েবি সংবাদ তারকারাজির উদয়স্থানের মাধ্যমে জানার দাবি করে; আলেমদের কাছে এটি আল্লাহর সঙ্গে কুফুরি হিসেবে স্বীকৃত। কেননা এটি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখার দাবির নামান্তর, যে বিষয়ে এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সুতরাং ইলমে গায়েবের দাবিদার ব্যক্তি হলো আল্লাহ ও তার রাসুলকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী।

যেসব জ্যোতিষী ও গণক প্রতারণা ও মিথ্যাশ্রয়ে ইলমে গায়েব সম্পর্কে জানার দাবি করে, সরলমনা ও প্রতারিতদের বুদ্ধি-বিবেক নিয়ে খেলা করে তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ ও আকিদা ধ্বংস করার লক্ষ্যে; তাদের কাছে যাতায়াত, কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা এবং তাদের কথা বিশ্বাস করা শরিয়তের অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে হারাম। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে গেল এবং তাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল; তার চল্লিশ রাতের নামাজ কবুল করা হয় না।’

মুসলমানদের উচিত তাদের কাছে যাওয়া, কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করা থেকে সাবধান থাকা। এগুলো হারাম ও ঘৃণ্য পাপ। সহিহ বোখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘লোকেরা রাসুল (সা.)-কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের বললেন, তারা কিছুই নয়। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! কখনো কখনো তারা এমন কিছুও বলে যা সত্য হয়। রাসুল (সা.) বললেন, ওগুলো সত্য কথার অন্তর্ভুক্ত। জিনেরা এসব ছোঁ মেরে শোনে, পরে তাদের দোসরদের কানে মুরগির মতো করকর রবে নিক্ষেপ করে। এরপর এসব জ্যোতিষী সামান্য সত্যের সঙ্গে শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটায়।’

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘ফেরেশতারা মেঘমালার আড়ালে অবতরণ করে আকাশের ফায়সালাসমূহ আলোচনা করেন। তখন শয়তানেরা তা চুরি করে শোনার চেষ্টা করে এবং তার কিছু শুনেও ফেলে। অতঃপর তারা সেটা গণকের কাছে পৌঁছে দেয় এবং তারা তার সেই শোনা কথার সঙ্গে নিজেদের আরও শত মিথ্যা মিলিয়ে বলে থাকে।’ -সহিহ বোখারি

যে ব্যক্তি কোনো গণক কিংবা এ ধরনের কাউকে সত্যায়ন করবে, তা তাকে তার কর্মের কারণে মুশরিক বানিয়ে ফেলবে এবং তাদের কথার প্রতি তাকে বিশ্বাসী বানিয়ে দেবে। আর যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ জানার দাবি করবে তাকে বাতিল হিসেবে বিশ্বাস করা আবশ্যক। কেননা অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্যোতিষী, জাদুকর কিংবা গণকের কাছে উপস্থিত হয়ে তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর সে যা বলল তা সত্য হিসেবে বিশ্বাস করল, তাহলে ওই ব্যক্তি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি কুফরি করল।’ -তিরমিজি

সব কিছুর তাকদির আল্লাহর নির্ধারিত এবং সমস্ত কিছুর পরিমাণ নির্ধারণ তারই হাতে আর এগুলোর উৎসও তারই ফয়সালাক্রমে। কোনো কিছু ঘটার আগেই তিনি সে বিষয়ে অবগত, ফলে তা তারই ফয়সালায় চলে। কোনো কিছুই তার ইচ্ছের বাইরে নয়, ভালো-মন্দ সবই তার এখতিয়ারে। একজন মুমিন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আল্লাহর জ্ঞান সব কিছুকে বেষ্টন করে আছে এবং প্রত্যেক বস্তুকে আগে থেকেই আয়ত্তে রেখেছে। সে এও বিশ্বাস করে, যা কিছু ঘটবে তা মহান আল্লাহ লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। সে আল্লাহর কার্যকরী ইচ্ছা ও সামগ্রিক ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করে। তিনি যা চান তা-ই হয়, যা চান না তা হয় না। সে আরও বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই সৃষ্টিকুলের স্রষ্টা, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক।

সুতরাং আপনি আপনার রবের ওপর ভরসা করুন, তার কাছে আপনার সব বিষয় সোপর্দ করুন এবং তিনি যা নির্ধারণ করেন ও পরিচালনা করেন সে বিষয়ে তার উত্তম দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখুন। কল্যাণ আনয়ন ও ক্ষতি প্রতিহতের ক্ষেত্রে আপনার অন্তর যেন তার স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ -সুরা আত তালাক: ৩

আর যে ব্যক্তি তার ররেব প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে তার হৃদয়ে প্রফুল্লতা ও অন্তরে প্রশান্তি আসে এবং সে ইহকাল ও পরকালে সুখী হয়। আপনার রবের এ বাণীটি মনোযোগ দিয়ে পাঠ করুন, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো করুণা করলে কেউ তার নিবারণকারী নেই এবং তিনি যা নিবারণ করেন তারপর কেউ তার প্রেরণকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ -সুরা ফাতির: ২

১৮ নভেম্বর মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা।

অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION