সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২১ অপরাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
বিপদাপদ জীবনের অংশ, একে এড়ানো সম্ভব নয়। আজ একটি তো কাল আরেকটিএভাবে তা লেগে থাকে। কখনো তা আসে পাপের কারণে, কখনো পরীক্ষার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান, মাল ও ফসলের ক্ষতি করে।’ সুরা বাকারা : ১৫৫
অন্যত্র বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের (পাপের) কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; ফলে তিনি তাদের কোনো কোনো আমলের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ সুরা রুম : ৪১
অতএব বিপদ-মুসিবত আসবেই। নিজেকে তখন নিয়ন্ত্রণ করাই প্রধান দায়িত্ব। নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কী হবেতাও আল্লাহতায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন; যা অবলম্বন করলে মনের দুঃখ লাঘব হবে এবং অশেষ পুরস্কার মিলবে। আসুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক
ধৈর্য ধারণ : বিপদগ্রস্তের প্রথম কাজ ধৈর্য ধারণ। ধৈর্যের অর্থ নিজেকে আপন অবস্থানে অটল-অবিচল রেখে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলে দেওয়া পদ্ধতিতে বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ অবলম্বন। এ ক্ষেত্রে ভাগ্যকে দোষারোপ, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ও বিরক্তি প্রকাশসহ নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। মাথায় হাত, মুখে চপেটাঘাত, চুল ছেঁড়া, জামা ছেঁড়া কিংবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি কিছুতেই উচিত নয়। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসিবতে পড়ে স্বীয় গালে চপেটাঘাত করে, গায়ের জামা ছিঁড়ে এবং জাহেলি যুগের লোকদের মতো চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ সহিহ বোখারি : ১২৯৭
হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘ধৈর্যের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছি সর্বোত্তম জীবন।’ সহিহ বোখারি : ৬৪৭০
আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ : বালা-মুসিবতের মালিক যেহেতু আল্লাহ তাই যেকোনো বিপদাপদে তার প্রতি সর্বাগ্রে মনোনিবেশ করা মুমিনের কর্তব্য। এতে মনের দুঃখ লাঘব হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর তার কাছেই আমরা ফিরে যাবতাদের ওপরই বর্ষিত হয় রবের দয়া ও রহমত এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত।’ সুরা বাকারা : ১৫৬-১৫৭
নবী-রাসুলদের মুসিবত স্মরণ : বিপদে প্রশান্তি লাভের এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতি স্বয়ং আল্লাহ তার প্রিয় বন্ধুকে সান্তনা প্রদান ও ধৈর্যশিক্ষার নিমিত্তে শিখিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে পঁচিশজন নবী-রাসুলসহ তার নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দুঃখ-কষ্টের জীবনেতিহাস টেনে নবীজিকে শুনিয়ে বলেছেন, ‘হে নবী, কাফেররা যা বলে তার ওপর ধৈর্য রাখুন।’
সুরা ত্বহা : ১৩০
কোরআন মজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’ সুরা বাকারা : ১৫৩
নৈরাশ্য পরিহার : ইসলামে নৈরাশ্যবাদের কোনো স্থান নেই। এ থেকে নানা অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়। আত্মহত্যা, বৈরাগ্যবাদ হতাশার ফসল। তাই বিপদে হতাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় দুঃখের সঙ্গে আছে সুখ। কষ্টের সঙ্গে আছে স্বস্তি।’ সুরা ইনশিরাহ : ৫-৬
সৎলোকের পরামর্শ : ভালো মানুষের সঙ্গে বিপদের কথা শেয়ার করে তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে মানসিক প্রশান্তির সঙ্গে বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ পাওয়া যায়। নবী করিম (সা.) ও তার সাহাবিরা এমন করতেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর কাজ-কামে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।’ সুরা আলে
ইমরান : ১৫৯
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি সাহাবাদের সঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অপেক্ষা বেশি পরামর্শকারী কাউকে দেখিনি।’ ইবনে হিব্বান : ৪৮৭২
সদকা প্রদান : দানের বহুবিদ ফায়দা রয়েছে। এর মধ্যে পাপমোচন ও বিপদাপদ দূর হওয়ার বিষয়টি অন্যতম। হাদিসে এসেছে, ‘দান-সদকা পাপকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেভাবে আগুন পানিকে নিভিয়ে দেয়।’ সহিহ আততারগিব : ৯৮৩
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘সদকার আশ্চর্যজনক একটি ফায়দা হলো, এর দ্বারা বিভিন্ন বিপদাপদ দূর হয়; হোক তা পাপী, জালেম কিংবা কাফেরের পক্ষ থেকে। এটি সাধারণ ও বিশেষ শ্রেণি সবার কাছেই স্বীকৃত ও সমাদৃত।’ আল ওয়াবিলুস সায়্যিব মিনাল কালিমিত তায়্যিব : ৩১
তওবা-ইস্তিগফার : ‘তাওবাকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন’ (সুরা বাকারা : ২২২)। ইস্তিগফার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘এর ফলে তিনি তোমাদের ওপর সুষম বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং নানান বাগ-বাগিচা ও নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন।’ সুরা নুহ : ১১-১২
দোয়া : বিপদাপদ দূরীকরণে দোয়া একটি অব্যর্থ আমল। সব নবী-রাসুল সমস্যা সমাধানে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বান্দার খুব কাছেই থাকি। সে যখনই আমার কাছে দোয়া করে, আমি তার দোয়া কবুল করি।’ সুরা বাকারা : ১৮৬
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রভু খুবই লজ্জাশীল। বান্দা যখন দোয়ার জন্য হাত ওঠায়, সে হাত তিনি খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ সুনানে আবু দাউদ : ৩৩৭০
ভয়েস/আআ