সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বাবা-মার প্রতি অবহেলা পাপ

আমীর হামযা:

সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধ বাবা-মার প্রতি ছেলেমেয়েদের নিষ্ঠুর আচরণ বেড়ে গেছে। কী সচ্ছল, কী গরিব, কী সামর্থ্যবান, কী বিত্তহীন, সব ধরনের পরিবারে বয়স্ক বাবা-মা এখন অবহেলার পাত্র। তারা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার। বাবা-মা নিজেদের যৌবনে সন্তানকে মানসিক ও বৈষয়িকভাবে সক্ষম করে তুলতে কী করেন না! সেই তারা বার্ধক্যে এসে পরিবারের কাছে হয়ে পড়ছেন মূল্যহীন। এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেওয়া দুরূহ। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা তত্ত্বীয় ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন নিশ্চয়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, যাদের কাঠামোগত জ্ঞান নেই; তারা খাবি খাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

এ-সংক্রান্ত নানা ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, প্রতিবেশী ভারতেও এ জাতীয় সংবাদ নিয়মিত জায়গা করে নিয়েছে গণমাধ্যমে। শুধু গণমাধ্যমের খবর দেখে নয়, আমাদের সমাজের চারপাশে বাবা-মার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে ভূরি ভূরি। এর পরও বাবা-মার কাছে সন্তান যে কত প্রিয় তা উদাহরণ দিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে বাবা-মা নিষ্ঠুর আচরণ পেলেও এখনো অনেক বাবা-মা সন্তানের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকারে পিছপা হন না। কোনো কার্পণ্য করেন না।

চরম ত্যাগ স্বীকারকারী বাবা-মায়ের প্রতি দিন দিন উদাসীন হয়ে পড়ছে অনেক সন্তান। অবহেলার শিকার হচ্ছেন বাবা-মা। ভোগবাদী জীবন তাদের প্রতি উদাসীন করে তুলছে আমাদের, এ কথা এখন পরীক্ষিত সত্য। পশ্চিমা দুনিয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে সন্তানরা কাছে রাখতে চায় না। সেখানে এ সংস্কৃতি পুরনো; কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যবাদী সমাজেও এ বিষবৃক্ষ এখন শেকড় গেড়েছে। ফলে চারপাশে সন্তানের কাছে বাবা-মাকে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে ও প্রকাশ পাচ্ছে।

এ কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই যে, দুনিয়ায় বাবা-মা দুজনই সন্তানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের জন্য বাবা-মা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। দুনিয়া দেখার উপলক্ষও তারা। সন্তানের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সার্বিক বিষয়ে নিবেদিতপ্রাণ ও যত্নশীল। সন্তানের জন্য এতটাই নিঃস্বার্থ যে সবকিছুর ওপর কোনো কাজে বাবা-মা কখনো কোনো বিনিময় চান না। এজন্যই প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ বাবা-মার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। পরিবারেও বাবা-মার মর্যাদা ও সম্মান সবার ওপর।

কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তাকে (আল্লাহ) ছাড়া আর কারও ইবাদত করো না এবং বাবা-মার প্রতি উত্তম আচরণ করো। তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ্ বলো না এবং তাদের ভর্ৎসনা করো না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র ভাষায় কথা বলো। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাকো। আর বলো‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ সুরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪

সন্তানের কাছে বাবা-মার অধিকার একটি মহান দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদে বাবা-মার হকের বিষয়টি তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং বাবা-মার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ সুরা নিসা : ৩৬

একজন বিশ্বাসী মুমিনের কাছে কোরআন সত্যের মানদণ্ড। তার পরও বাবা-মায়ের অধিকার বিষয়ে দেশে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অনেকে জানেন না, মা-বাবা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান, কর্মক্ষম সন্তানের কাছে তখন তাদের আইনত কিছু প্রাপ্য রয়েছে। প্রচলিত আইনে বৃদ্ধ মা-বাবা তার সাবালক ও কর্মক্ষম সন্তানের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান ও ভরণপোষণে আইনের আশ্রয় চাইতে পারেন। দেশে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ বলবৎ রয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক কর্মক্ষম সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দিতে হবে, এ বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো মা-বাবার একাধিক সন্তান থাকলে সে ক্ষেত্রে সন্তানরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে।

কোনো সন্তান তার মা কিংবা বাবা বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধনিবাস কিংবা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও পরিচর্যা করতে হবে। এমন যদি হয়, মা এবং বাবা আলাদা থাকেন, সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে উভয়ের সঙ্গে আলাদা করে নিয়মিত সাক্ষাৎ করাতে হবে। মা-বাবা স্বেচ্ছায় অন্য কোনো জায়গায় বাস করলে তাদের মাসিক বা বার্ষিক আয়ের যুক্তিসংগত অর্থ নিয়মিত দিতে হবে সন্তানকে। মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করলে এবং আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করলে অভিযুক্ত সন্তানের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।

তবে সব থেকে বড় কথা নৈতিকতা। নৈতিকতা বলে প্রত্যেকের উচিত বাবা-মায়ের যথাযথ অধিকার সংরক্ষণ করা। বাবা-মা যখন বার্ধক্যে পৌঁছান, তখন তাদের প্রতি ধৈর্যশীল আচরণ করা। কারণ সন্তান শৈশবে যা দেখে সে সম্পর্কে বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করে থাকে। সে সময় বাবা-মা সন্তানের জিজ্ঞাসায় বিরক্ত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিশোর বয়সে সন্তান যখন কোনো বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত তখনো বাবা-মা সন্তানের ক্ষিপ্ততায় রেগে না গিয়ে ধৈর্য ধারণ করতেন। সুতরাং সন্তানের উচিত বাবা-মা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের সঙ্গে ধৈর্যশীল হওয়া। এটি সন্তানের প্রতি বাবা-মার প্রাপ্য অধিকার। বাবা-মা যদি কাছে না থাকেন তাহলে তাদের খোঁজখবর নেওয়া। এতে তারা প্রফুল্লবোধ করেন, সন্তানের সঙ্গে কথা বলে তারা মনে প্রশান্তি অনুভব করেন। সন্তানের উচিত তাদের কাছে রাখা ও যথাযথ সেবাযত্ন করা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION