সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মানসিক চাপ নিরসনে ইসলাম

ধর্ম ডেস্ক:

মানসিক চাপ হলো- মানুষের কাছে অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা বা পরিস্থিতি। যা তার অনুভূতিতে প্রচণ্ড আঘাত করে। এর ফলে তার মধ্যে অস্থিরতা, বিষণœতা, হতাশা-নিরাশা, দুশ্চিন্তার উদ্রেক হয়। একসময় এ পরিস্থিতি এমন প্রকট আকার ধারণ করে যে, ব্যক্তি আগামী জীবনের সব আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন-পরিকল্পনা ভুলে হীনম্মন্যতায় নিজের জীবনকে শেষ করে ফেলে। এমনকি মহান রবের দেওয়া অসংখ্য-অগণিত নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়, যা সুস্পষ্ট কুফরি চিন্তা-মানসিকতা।

আমরা অনেক পাপ সম্পর্কে সচেতন থাকি, কিন্তু মানসিক অস্থিরতায় ভুগে নিরাশ হওয়া, হতাশ হওয়া, দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত থাকাও কঠিন পাপ- তা অনেকেই অনুধাবন করি না। শয়তান মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতাকে ব্যর্থ করার জন্য প্রথম তীর ছোড়ে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও ব্যর্থতার। বলা হয়, ‘শয়তানের পাঠশালার প্রথম পাঠ হলো, হতাশা-নিরাশা, দুশ্চিন্তা।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায়, অভাবের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়।’ -সুরা আল বাকারা: ২৬৮

বর্ণিত আয়াতে ‘দারিদ্র্যের ভয়, অভারের ভয়’- এর ব্যাখ্যায় মুফাসসির বলেছেন, স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি। অর্থাৎ শয়তান মুমিনকে ভবিষ্যতে বিপদ-মুসিবত, দুরবস্থা, হতাশা-নিরাশার ভয় দেখায়। অপূর্ণতার হাহাকারে বিষণœ করে তোলে, যেন সে তার ওপর দেওয়া আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। আর এমন অকৃতজ্ঞ মানসিকতা মানুষকে ক্রমাগত কুফরির দিকে নিয়ে যায়।

ইসলাম একটি শাশ্বত পরিপূর্ণ ধর্ম। এতে মানুষের দুনিয়া-আখিরাতে সফলতার পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে। মানসিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দুশ্চিন্তা হতাশা থেকে মুক্তির জন্য ইসলামের মৌলিক দিকনির্দেশনাগুলো হলো-সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর আস্থা : একজন মানুষ যত বেশি আল্লাহর ওপর আস্থা রাখবে, নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেবে মানসিক শক্তি ও স্থিরতা ততই বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।’ -সুরা তালাক: ৩

লক্ষ করুন, আল্লাহর পক্ষ থেকে কী চমৎকার ঘোষণা! কেউ যদি তার ওপর ভরসা করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। জীবনে চলার পথে মহান আল্লাহকে নিজের ভালো-মন্দের ক্ষেত্রে পূর্ণ কল্যাণকামী হিসেবে গ্রহণ করাই হলো আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা, নির্ভরশীল হওয়া। আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হওয়ার একটি চমৎকার উপমা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পেশ করেছেন। হজরত উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিজিক দেওয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিজিক দেওয়া হতো। এরা সকালে খালি পেটে বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ -সুনানে তিরমিজি: ২৩৪৪

তাকদিরের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস : মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে বাঁচার অন্যতম মাধ্যম হলো নিজের ভালো-মন্দ, আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া। ঘটমান সব অবস্থা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তা হৃদয় থেকে মেনে নেওয়া। পৃথিবীতে যা কিছু হয় সব কিছুই বহু আগে মহান পরিচালক আল্লাহতায়ালা একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন যাকে তাকদির বলা হয়।

তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাওয়া মুমিন ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। এতে আপনার কোনো কর্ম যদি আপনার আশা-আকাক্সক্ষা, চাহিদার বিপরীত হয় তবুও হতাশ না হওয়া। আপনার তাকদিরে মহান আল্লাহ যা কিছু নির্ধারণ করে রেখেছেন তা কোনো মানুষ ইচ্ছা করলে পরিবর্তন করতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে ছিলাম। তিনি বলেন ‘হে বৎস! আমি তোমাকে কিছু কথা শিক্ষা দিচ্ছি; তুমি আল্লাহর হুকুম-আহকাম যথাযথ আদায় করবে, আল্লাহ তোমাকে সব বিপদ-মুসিবত থেকে যথাযথভাবে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহতায়ালার হুকুম-আহকাম যথাযথ আদায় করবে; তাহলে তুমি আল্লাহতায়ালাকে তোমার সামনে পাবে। আর তুমি যখন কিছু চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন কোনো সাহায্য চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে। জেনে রেখো, যদি সব মানুষ তোমার কোনো উপকার করার ইচ্ছা করে তবে তারা শুধু এ পরিমাণ উপকারই করতে পারবে; যা আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর সব মানুষ তোমার কোনো ক্ষতি করার ইচ্ছা করে তবে তারা কেবল এ পরিমাণ ক্ষতিই করতে পারবে যা আল্লাহতায়ালা তোমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।’ -সুনানে তিরমিজি: ২৫১৬

আল্লাহর কাছে দোয়া : মুমিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো নিজ আশা-আকাক্সক্ষা, পরিকল্পনা ও দুঃখ-কষ্টের কথাগুলো আল্লাহর কাছে বলা, এ বৈশিষ্ট্য অর্জন করাই আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়ার মূল উদ্দেশ্য। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হতাশা দুশ্চিন্তা দুঃখ-কষ্ট মানসিক চাপ থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে কীভাবে দোয়া করব তা বলে দিয়েছেন।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়াল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি ওয়া দ্বালাইদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে পানাহ চাচ্ছি। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৩

বান্দা যত আল্লাহতায়ালার অভিমুখী হবে, তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে সঁপে দেবে, দুঃখ-কষ্ট বিপদ-মুসিবতে আল্লাহর সিদ্ধান্তকে মেনে নেবে, সে তত বেশি প্রশান্তিময় জীবন লাভ করবে। ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন আলোহীন পথেও স্বস্তি অনুভব করবে। কঠিন দুর্ভিক্ষে দিনের পর দিন অনাহারে অতিবাহিত হওয়ার পরও হতাশা দুশ্চিন্তা আচ্ছন্ন করবে না। হৃদয়ে বারবার উদ্ভাসিত হবে, আমার মহান অভিভাবক আল্লাহ আমার জন্য কল্যাণকর সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে উত্তম নিয়ামত রেখেছেন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION