সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন
ধর্ম ডেস্ক:
মুসলমানদের কাছে ইমান অতি মূল্যবান সম্পদ। এটি তাদের সফলতা ও মুক্তির মানদণ্ড। পরকালীন পুরস্কার ও প্রাপ্তি ইমানের ওপর নির্ভরশীল। পার্থিব জীবনে শত কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যেও ইমান সুরক্ষায় সচেতন থাকা প্রতিটি মুসলমানের গুরু দায়িত্ব। পবিত্র কোরআন-হাদিসে ইমানের চর্চা বাড়ানো ও সুরক্ষা বিষয়ে সবিস্তার আলোচনাসহ ইমান বিনষ্টের কারণগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। এখানে ইমান বিনষ্টকারী কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো
আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা : আল্লাহর সঙ্গে ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করাকে শিরক বলে। শিরক মহাপাপ ও গুরুতর অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ সুরা মায়েদা : ৭২
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে কঠিন পাপ কী? তিনি বলেন, সবচেয়ে কঠিন পাপ হলো তুমি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাবে অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ মুসলিম : ১৫৯
মুশরিক-কাফেরদের সম্পর্কে মনোভাব : সৃষ্টিগতভাবে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সমান হলেও তাওহিদ ও শিরক এবং ইমান ও কুফরের কারণে তাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণিত হয়। নির্ধারিত হয় পরকালীন সফলতা-মুক্তি, প্রাপ্তি ও শাস্তির চূড়ান্ত পথ। কোরআন-হাদিসে কাফির-মুশরিকদের অপবিত্র ও নিকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সম্পর্কে আল্লাহ ও তার রাসুলের দায়মুক্তির ঘোষণা এসেছে। মুসলমানদের জন্য তাদের এমনটাই জ্ঞান করা ইমানের দাবি। এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা, তাদের ধর্মবিশ্বাস সঠিক কিংবা তাদের পূতপবিত্র মনে করা ইমান নষ্টের কারণ। তবে তাদের সঙ্গে সামাজিক-সৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রাখা ইসলামের নির্দেশ। তাদের সঙ্গে মুসলমানদের মর্যাদাগত পার্থক্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ইমান আনে। অবশ্য মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদের তোমাদের কাছে ভালো লাগে এবং তোমরা (নারীরা) কোনো মুশরিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ইমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভালো, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোজখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ সুরা বাকারা : ২২১
মুসলমানের বিপক্ষে কাফেরকে সাহায্য করা : তাওহিদ ও শিরক যেমন এক নয়, তেমনি তাওহিদ-রিসালাতে বিশ্বাসী ও কুফর-শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো এক হতে পারে না। মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ককে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এঁটে দিয়েছে ইসলাম। কাফের-মুশরিকদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখা, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, তাদের জীবনাচার ও সংস্কৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যতা অবলম্বন এবং মুসলমানের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা; ইমান বিনষ্টের কারণ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আমার এবং শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা তোমাদের কাছে যে সত্য এসেছে, তা অস্বীকার করেছে।’ সুরা মুমতাহিনা : ০১
এ ছাড়া ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ, কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ, খতমে নবুয়ত (রাসুলুল্লাহকে সা. শেষ নবী হিসেবে) অস্বীকার, কাউকে শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা এবং ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া; এসব ইমান বিনষ্টের কারণ হয়। ইমানের প্রকৃত স্বাদ পেতে নিম্নের হাদিসটি লক্ষণীয়হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ইমানের স্বাদ পাবে; আল্লাহ ও তার রাসুল সব থেকে প্রিয় হওয়া, কাউকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসা এবং কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত ঘৃণ্য হওয়া।’ সহিহ বোখারি : ১৬
ভয়েস/আআ