রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা, কে রাখে কার খবর

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

দেশে ফিরতে না পারার হতাশায়, ক্যাম্পে আটকে থাকার শঙ্কায়— রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সমুদ্র পথে দেশ ছাড়ার ঝুঁকি নিচ্ছে অহরহ। বাংলাদেশের ক্যাম্পে কোনও ভবিষ্যৎ না দেখে বিদেশ যেতে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে হয় পড়ছেন জলে, না হলে জেলে। সময় পেরিয়ে গেলে বুঝছেন— যে আশা নিয়ে রওনা হয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ সেখানেও নেই। কিন্তু সেই পথে যেতে তদের গুণতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই টাকার লেনদেন হয় ইয়াবার বিনিময়ে। প্রশাসন বলছে, তাদের কাছে নৌকায় পালানোর তথ্য আছে। কিন্তু করণীয় নেই। কত জন ছিল ক্যাম্পে, এখন কত জন আছে— সেই হিসাব আছে কিনা, প্রশ্নে প্রশাসন বলছে, পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরিবারগুলো সদস্যদের জন্য বরাদ্দ রেশন ঠিকঠাক তুলছে।

দুই সপ্তাহে মালয়েশিয়া

১৭ বছরের মোহাম্মদ হোসেনকে বুঝানো হয়— এক লাখ টাকা দিলে দুই সপ্তাহের মধ্যে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ মিলবে, এপথে কোনও ঝুঁকি নেই। একদিন প্রায় দেড়শ’ জন যাত্রীসহ নৌকা রওনা হয়। আন্দামান সাগর পার হয়ে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালদের এক লাখ টাকা দিয়েছিল সে। নৌকায় যাত্রার ছয় দিনের মাথায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সঙ্গে থাকা দালালরা এক সময় নৌকার লোকজনকে পানি ও খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তার সঙ্গে রওনা হওয়া দেড়শ’ জনের মধ্যে ২০ জন মরে গেছে। কারণ, তারা দালালের কথা মতো না চলে যথাসময়ে খাবার চেয়েছিল। সেই ২০ জনের মৃত্যুর কোনও হিসাব নেই। যে কয়জন পৌঁছাতে পেরেছিল, তাদের কাছ থেকে পরিবারের লোকেরা জানতে পেরেছে— পুরো পথ তাদের ওপর কী অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। ভয় দেখানো হয়েছে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার। মারামারি, হাতাহাতি এতো নিত্যদিনের বিষয়। এতসব করেও মালয়েশিয়ায় ১৪ দিনে যাওয়া তো দূরে থাক, এক মাস সমুদ্রে ঘুরে ঘুরে শেষমেষ ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছায় তারা।

অনেকেই এখন এই পথে

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসাব বলছে, গত বছর ৩৯টি নৌকায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আন্দামান সাগর এবং বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ’ সমুদ্রে মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে গতবছরের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ বলেও উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা।

কেউ কাজের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ছে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কেউ ইন্টারনেটে যোগাযোগ হওয়ায় না জেনেশুনেই পাড়ি দিতে চাইছে, আবার কেউ জানেই না তাকে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে।

কুতুপালংয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাজির (ছদ্মনাম) জানান, এখান থেকে কিশোরী- যুবতী নারীর চলে যাওয়ার সংখ্যা অনেক। দালালদের নজরও তাদের প্রতি বেশি। আমার বোনও মালয়েশিয়া চলে গেছে। এখানে পরিবারগুলোকে জিজ্ঞেস করে দেখেন— তাদের যে সদস্যরা বিদেশে গেছে, তাদের মধ্যে কয়জনের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়েছে। এবং এরা চেনে দালালকে, চেনে দালাল কোথায় থাকে। কিন্তু তার বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করার সাহস রাখে না। আবার, এই যে ছেলে-মেয়ে, স্বামী বা পরিবারের যেকেউ চলে যাওয়ার পর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটা নিয়ে তারা কোথাও অভিযোগ করতেও পারছে না। কারণ, কোনটাই বৈধ না। আবার সবাই যে নিজেদের ইচ্ছায় ক্যাম্প ছেড়ে যায়, তাও না।

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। কুতুপালং বাজার। বেলা ১টা। ক্যাম্পে ঢোকার মুখে সারি সারি দোকান অনলাইনে টাকা পাঠানোর উন্মুক্ত পোস্টার। নিয়ম না থাকলেও এসব দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা পাঠানোর সুব্যবস্থা আছে। মোবাইল ও হেডফোনসহ কিছু সরঞ্জামাদি নিয়ে খোলা একেকটি দোকানে ঢুকে জানতে চাই— এক লাখ টাকা পাঠানো যাবে কিনা। দোকানদার বিস্মিত হয়ে বলেন, কেন যাবে না। একবারে একদিনে কত পরিমাণ টাকা পাঠানো যায়, প্রশ্ন করা হলে প্রত্যেকের পাল্টা প্রশ্ন— কত টাকা পাঠাতে চান? আপনি যতটাকাই দেন, ওপাশের মানুষ পেলেইতো হলো? এই কাস্টমারের (প্রতিবেদক) আস্থা ফিরিয়ে আনতে দেখানো হয়— কীভাবে টাকা আসার পরে এক রোহিঙ্গাকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একাধিক ফার্মেসিতেও এই সুব্যবস্থা আছে।

গতবছর ২২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে জানানো হয়, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার করছে একাধিক চক্র। এমন একটি চক্র এমএফএস ব্যবহার করে চার মাসে তিন কোটি টাকা পাচার করেছে। এমএফএসের দুই হাজার এজেন্ট সিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে তারা।

সবাই জানে আবার কেউ জানে না

কারা টাকা পাঠায়, কোথায় টাকা যায় প্রশ্ন করা হলে এসব দোকানেরই একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হাজার হাজার রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে অবস্থান করছেন। এসব দেশ থেকে প্রতিনিয়ত বৈধ চ্যানেল বাদ দিয়ে তারা হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন। কারা সেই হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ করছেন জানতে চাইলে দেশি বা রোহিঙ্গা উভয়েরই নাম উঠে আসে। ক্যাম্পের বাজারে দীর্ঘদিন দোকান করছেন এমন এক বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, এসবের সঙ্গে প্রশাসন জড়িত থাকে। না-হলে কাজটা করা সম্ভব না। আপনি দয়া করে এসবে আমাদের জড়িয়ে বিপদে ফেলবেন না। তবে এদের সংখ্যা বেশি না।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হুন্ডি ব্যবসা সম্পর্কে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কারা হুন্ডি করছে বা ‍হুন্ডি হচ্ছে— এমন কোনও তথ্য আমার সুনির্দিষ্টভাবে জানা নেই। আপনার কাছে (প্রতিবেদকের কাছে) তথ্য থাকলে আপনি দিন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকাতো পাঠাবেই।’ ‍হুন্ডির মধ্য দিয়ে টাকা পাচারকারীদের আটক এবং এটা যে হচ্ছে, তা নিয়ে গত নভেম্বরে সিআইডির একটি সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওনাদের কাছেই জানতে চান, আমার এখানে কেউ মামলা করেনি।’

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION