বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় ইসলাম

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে ৩০ মিলিয়ন শিক্ষক এবং ৫০০টি সংগঠন শিক্ষকদের সম্মানার্থে এ দিবসটি পালন করে থাকে। এদিন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশায় অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশে যেমন মানসম্মত শিক্ষকের সংকট রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। তবুও যে সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন, তাদের সবাইকে অবশ্যই আদর্শ শিক্ষক হয়ে উঠতে হবে।

ইসলাম মানুষকে জ্ঞানের পথে চলতে বলে এবং জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করে। জাহেলি আরবে শিক্ষিত লোক ছিল মাত্র ১৭ জন। তৎকালীন সমাজ ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়ার এটাও একটি কারণ ছিল। মহান আল্লাহ সে অন্ধকার সমাজে সর্বপ্রথম নির্দেশ দেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে। পড়ো, তোমার প্রতিপালক মহিমান্বিত। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক ১-৫)। এ আয়াত থেকেই মুসলিম সমাজে জ্ঞানচর্চা এবং সেটার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষের মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ইসলাম শিক্ষকসহ জ্ঞানচর্চা ও প্রসারের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ (সুরা জুমার ৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা ২৬৯)।

শিক্ষকরা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিল ব্যাপক সমাদৃত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখো। তাকে সম্মান করো, যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।’ সুতরাং যার থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয় তিনিই আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকের মর্যাদায় ইসলামের বক্তব্য ও সংক্ষিপ্ত একটি নমুনা তুলে ধরা হলো, একবার হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সওয়ারিতে ওঠার জন্য রেকাবে (পাদানিতে) পা রাখলেন। তখন ইবনে আব্বাস (রা.) রেকাবটি শক্ত করে ধরেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুলের চাচাতো ভাই! আপনি (রেকাব থেকে) হাত সরান। উত্তরে ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, না। আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়।’ জ্ঞানই মানুষের যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথ নির্দেশ দিতে পারে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে বা আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই তো রাসুল (সা.) বদরের যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার চুক্তি করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন জনৈক বয়স্ক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হলে উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম নিজ স্থান থেকে সরে তাকে জায়গা করে দেন। তখন তিনি ইরশাদ করেন, যারা ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। (জামে তিরমিজি)

ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতার পেশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে আমাদের সমাজে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। যা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। আবার অনেক শিক্ষককে দেখা যায়, শিক্ষকতার এ মহান পেশাকে কলঙ্কিত করে নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত কাজে জড়িয়ে পড়ে, যা অত্যন্ত ঘৃণিত ও বর্জনীয় কাজ। অথচ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার আপন নয়।’

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথাই বলি। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাকে কত যে লাঞ্ছনা আর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা তো সবারই জানা। কিন্তু তিনি পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রেরিত হুকুম-আহকামগুলো মানুষকে শিক্ষা দিতে কখনো পিছপা হননি। জাগতিক কোনো কিছুর জন্য নয় বরং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তিনি আজীবন শিক্ষাদানের কাজটি করে গেছেন। যার ফলে বিশ্ব আজ পেয়েছে শান্তির এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান ইসলাম, যা ইহকাল আর পরকালের শান্তি ও কামিয়াবি লাভের উপায়। তাই বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অঙ্গীকার হোক শিক্ষকের প্রতি যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের অঙ্গীকার। আসুন আমরা প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের অনুসরণ করি। শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদা দিই। শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করে দুনিয়া ও আখেরাতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তওফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION