বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগে যোগ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসইভাবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের লক্ষে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তিনি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারে শুরু হওয়া তিনদিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বিশেষ অধিবেশনে তিনি বলেন, “আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না, এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।”
ইউনূসের প্রস্তাবে কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি, অর্থ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সংলাপ প্ল্যাটফর্ম গঠন, সীমান্তবর্তী অপরাধ মোকাবিলা, জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক জবাবদিহি প্রক্রিয়া গতিশীল করার কথা বলা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও মিয়ানমারেই নিহিত। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নৈতিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মুখে আর চুপ করে থাকা সম্ভব নয়।”
প্রফেসর ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব
প্রথমত: রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরিতে কাজ করতে হবে। কথার জালে আর বন্দি থাকা যাবে না।
দ্বিতীয়ত: ২০২৫-২৬ সালের যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অর্থ ঘাটতি পূরণে আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী ও মানবিক অংশীদারদের অব্যাহত সহায়তা জরুরি।
তৃতীয়ত: রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সবধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এজন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, জীবিকা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের ভেতরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ ঘরে ফিরতে দিতে হবে।
চতুর্থত: মিয়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস ও সংঘাত নিরসনে সংলাপ প্ল্যাটফর্ম জরুরি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে হবে যাতে পুনর্মিলন, অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়।
পঞ্চমত: আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অপরিহার্য। মানবপাচার, মাদকপাচার, ছোট অস্ত্রের চোরাচালানসহ সীমান্তবর্তী অপরাধ মোকাবিলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ষষ্ঠত: জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। মিয়ানমার, আরাকান আর্মি ও অন্যান্য সংঘাতপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংকট নিরসনের স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সপ্তমত: আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় চলমান জবাবদিহি প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে হবে। আইসিজের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ কার্যকর করতে হবে এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানও রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন। সংলাপে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রাউফ মাজুও বক্তব্য রাখেন।
২০১৭ সালে মাত্র কয়েক সপ্তাহে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বর্তমানে দেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। প্রতিবছর শিবিরগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে, যা কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কক্সবাজারের এ সংলাপ আসন্ন নিউইয়র্ক সম্মেলনে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ভয়েস/আআ