বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১১ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সনদের নোট অব ডিসেন্ট প্রশ্নে এবং গণভোটের পদ্ধতি ও সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এখনও কাটেনি। কোন পন্থায় এ সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে এখনো নিরুপায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে আজ বুধবারের বৈঠক থেকেই সমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে তারা আশা করছে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারকরাও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করছেন না।
এদিকে মতপার্থক্য দূর করার উপায় খুঁজতে দফায় দফায় বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে আবারও বৈঠক করেছে তারা। যদিও সমাধানের কোনো পথ এখনও মেলেনি। আজ বুধবার সকালে তাদের মতামত নিতে আবারও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে কমিশনের। এর পরেই দুপুরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে কমিশনের সদস্যরা। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে বুধবারের বৈঠক থেকেই সমাধানের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
সাংবিধানিক আদেশে গণভোট আয়োজনে আপত্তি বিএনপির
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলো গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছলেও নতুন করে কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসে। কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদের ওপর গণভোট হবে বলা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলোর কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া কোন পদ্ধতিতে গণভোট আহ্বান করা হবে সেটা নিয়েও কোনো মতৈক্যে পৌঁছানো যায়নি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করলেও তা রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের সংশয় দূর করতে পারেনি।
সূত্র জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজনের কথা বললেও বিএনপি তাতে আপত্তি জানিয়েছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী এই সরকার সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আহ্বান করতে পারে; সেই এখতিয়ার এই সরকারের আছে। তবে বিএনপি যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানিয়েছে সেজন্য অন্য কোনো নাম দিয়ে এই আদেশ জারি করা যেতে পারে। তবে নোট অব ডিসেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দূর করতে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে কী ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কেউ কিছু জানাতে রাজি হননি।
বিশেষজ্ঞরাও একমত নন, তবে আশাবাদী কমিশন
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একজন সদস্য প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছেন। কিন্তু সবাই একমতে পৌঁছতে পারেননি। সাংবিধানিক আদেশ নাকি অধ্যাদেশ জারি করে গণভোট আহ্বান করা হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। এছাড়া নোট অব ডিসেন্ট রেখেই গণভোট হবে কি না, সে ব্যাপারেও এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।’
এ ব্যাপারে কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা সমাধানের উপায় খোঁজার চেষ্টা করছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক হলেও এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বুধবার সকালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে মতামত নিয়ে দুপুরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। আমরা আশা করছি, এই বৈঠক থেকেই একটা সমাধানে আসতে পারব।’ এই বৈঠক থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে কমিশন যেতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট
সংস্কারের জন্য ১১টি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ মোট ৮৪টি বিষয়ের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সংবলিত জুলাই সনদ প্রকাশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা, রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া, প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণমুক্ত কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়োগসহ ৯টি সিদ্ধান্ত। বিএনপি এসব নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। দলটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে একমত হলেও প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে র্যাঙ্ক চয়েজ ভোটে রাজি হয়নি। তবে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল ও জোটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এসব সংস্কারে একমত হওয়ায় কমিশন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে।
বিএনপি শুরু থেকেই নোট অব ডিসেন্টসহ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। তাদের অবস্থান হলোÑ যে দল যে সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তারা তা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে রাখবে। নির্বাচনে জয়ী হলে সেগুলো বাস্তবায়ন না করার এখতিয়ার তাদের থাকবে। তবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল জুলাই সনদের পুরোপুরি বাস্তবায়ন চাইছে।
গণভোটের পন্থা নিয়ে মতপার্থক্য
গণভোটের বিষয়টি সামনে আসার পর কোন পদ্ধতিতে তা আহ্বান করা হবে তা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে এই সরকারের এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে সাংবিধানিক আদেশের পরিবর্তে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আহ্বানের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আহ্বান করতে হবে। এই দুটি পদ্ধতি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করে কমিশন।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য বলেন, ‘অধ্যাদেশ জারির এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আগামী সংসদ গঠনের ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা অধ্যাদেশগুলো অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করতে হবে। ফলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণভোট হলে আগামী সংসদে ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যাবে।’ এই অবস্থায় সাংবিধানিক আদেশ ভালো পন্থা হিসেবেও মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে।
এদিকে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সরকার গণভোট আহ্বান করতে পারে বলে মনে করছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আশা করছি আমরা বুধবারের বৈঠকে একটা জায়গায় আসতে পারব। নোট অব ডিসেন্ট নিয়েও সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন, নোট অব ডিসেন্ট রেখেই সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং দলগুলোর পক্ষ থেকে সেই সময় কোনো আপত্তি করা হয়নি। তাহলে এখন গণভোটের কথা যখন এসেছে, তখন কেন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে? এক্ষেত্রে দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টির উল্লেখ করবে এবং জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এর মধ্যে দিয়েও এসব বিষয়ে জনমত জানা সম্ভব হবে।
ভয়েস/জেইউ