মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম বড় মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার শুরু হওয়া এ আন্দোলনের মুখে হেফাজতের আমির ও মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে কেন্দ্রীয় হেফাজতের প্রচার সম্পাদক এবং মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালক মাওলানা আনাস মাদানীকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাদ্রাসার মাঠে আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানান। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। মাদ্রাসার সব ফটক বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।
মাদ্রাসাছাত্ররা মসজিদের মাইকে বারবার প্রশাসন যেন ভেতরে প্রবেশ করে কোনো হস্তক্ষেপ না করে এ আহ্বান জানান। কী কারণে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। এদিকে বড় হুজুরের দপ্তর ভাঙচুরের কথা প্রচারিত হলেও মাদ্রাসার ভেতর থেকে মাইকিং করে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলা হয়।
সার্বিক বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি মাসুদ আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুর থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার মজলিশে শূরার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ রাতে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। রাত পৌনে ১১টার সময় দুই দফা দাবি মেনে নেয়া হয় সেগুলো হলো শিক্ষক আনাস মাদানীর বহিষ্কার ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কোনো হয়রানি না করা।
শনিবার শূরা কমিটির বৈঠকে অন্যান্য দাবির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়।
শূরার কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার মহাপরিচালক সায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী, আল্লামা শায়েক আহমদ, আল্লামা সালাউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আহমদ দিদার, মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা ওমর, মাওলানা ফোরহান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, পাঁচ দাবির মধ্যে দুটি দাবি পূরণ করেছে শূরা কমিটি। বিষয়টি শূরা কমিটির স্বাক্ষরিত চিঠিতে সবাইকে আবারো নিশ্চিত করে জানানো হবে এবং শনিবার শূরার পরবর্তী বৈঠক বসবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।
বুধবার দুপুরে জোহরের নামাজের পর থেকে আনাস মাদানীর অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাদ্রাসার সব ফটক বন্ধ করে ভেতরে আন্দোলন শুরু করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও মাদ্রাসার সব ফটক বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কাবস্থায় বাইরে অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব সৈয়দ আসগর আলী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ২৪ আগস্ট কওমি মাদ্রাসাসমূহের কিতাব বিভাগের কার্যক্রম শুরু ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কতিপয় শর্তসাপেক্ষে অনুমতি প্রদান করা হয়।
কিন্তু আরোপিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্দেশক্রমে বন্ধ করা হলো।
আল্লামা আহমদ শফি শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় পরিচালক পদ থেকে তাকে সম্মানজনক অব্যাহতি দিয়ে উপদেষ্টা করার দাবিও জানিয়ে আসছেন বিক্ষোভকারীরা।