শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৫ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
বরগুনায় প্রকাশ্যে দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করার চাঞ্চল্যকর মামলার রায় আজ (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ঘোষণা করা হবে। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করবেন।
এদিকে রিফাত হত্যার ঘটনায় স্ত্রী মিন্নির ভূমিকা কী ছিল? আর এ প্রশ্নের উত্তর জানতে সবার দৃষ্টি থাকবে বরগুনার আদালতে। রিফাতের পরিবারের দাবি, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। আর রিফাতের স্ত্রী মিন্নির পরিবারের দাবি সে নির্দোষ।
তবে মামলার ১০ আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি হবে- এমন প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আশা করছেন, সব আসামির বেকসুর খালাস। তবে এ মামলায় সর্বাধিক আলোচিত নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। রিফাত হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী থেকে পরবর্তী সময়ে আসামি হওয়া মিন্নির বিষয়ে আজকের রায়ে কী সিদ্ধান্ত আসছে, মূলত সেদিকেই থাকবে সবার দৃষ্টি।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল কিশোরের প্রত্যাশা, রায়ে তার মেয়ে বেকসুর খালাস পাবেন। একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামও। মিন্নির বাবা বলেন, আমরা আসলেই হয়রানির শিকার। জীবনবাজি রেখে মিন্নি তার স্বামীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। অথচ সে প্রধান সাক্ষী থেকে এখন আসামির কাঠগড়ায়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মিন্নি এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস পাবে।
আদালতের পথে মিন্নি
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে মিন্নির উপস্থিতিতে কলেজের শহীদ মিনারে হত্যার পরিকল্পনার যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে মিন্নি ছিল না। আহত রিফাত শরীফকে মিন্নি হাসপাতালে নিয়ে গেছে। কিন্তু সে বিষয়টি চার্জশিটের কোথাও নেই।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার বলেন, তারা রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষী ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন। কাজেই তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছেন।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯), মো. মুসা (২২), আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) ও কামরুল হাসান সায়মুন (২১)। গত বছরের ২ জুলাই রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুভাগে বিভক্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণ হয়।
প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে জামিনে আছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও মামলার সাত নম্বর আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। আর ৬ নম্বর আসামি মো. মুসা পলাতক। অবশিষ্ট ৮ আসামি বর্তমানে বরগুনা জেলা কারাগারে। তারা রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত করে। এরপর বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। গুরুতর আহত রিফাত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিনই মারা যান। সূত্র:বার্তা২৪।
ভয়েস/জেইউ।