শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন কার্বন জমাট

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

জলবায়ুজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। ঝুঁকি কমাতে নানা পদক্ষেপের কথা বলা হলেও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনোটির। জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পগুলোতেও চলছে অর্থের তছরুপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ফলে কক্সবাজারে যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো প্রতি হেক্টর এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ পাউন্ড কার্বন শোষণ করতে পারতো। ফলে বর্তমানে ওই এলাকার প্রতি হেক্টর আকাশে সমপরিমাণ কার্বন জমাট হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বনবিভাগ বলছে, বর্তমানে কক্সবাজারে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন কার্বন জমাট হয়েছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে জেলার পরিবেশ ও দেশের সামগ্রিক জলবায়ু।

জানা গেছে, গত বছরের ১৮ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ন্যাচারাল ফরেস্ট ইনভেনটরি ২০১৫-১৮-এর রিপোর্টে প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ পাউন্ড কার্বন সংরক্ষণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিন দিন এর মাত্রা আরও বাড়ছে। বর্তমানে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টনে।

তখন কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, এই ক্ষতি ইতোমধ্যেই হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। প্রাথমিক হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশের জন্য এ ক্ষতি অনেক বেশি। এ অবস্থায় মানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশদ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য এরইমধ্যে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটিকে রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পানির স্তর নেমে যাওয়া, সুপেয় পানি ব্যবহার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, পরবর্তী ক্ষতি রোধের উপায় খোঁজা, কতটুকু ক্ষতি পুষিয়ে আনা যাবে এবং এ উদ্দেশ্যে কী কী করণীয় তা ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের চাহিদা, কার্বন লস, বন্যপ্রাণী ও হাতির করিডোর সৃষ্টির বিষয় উল্লেখ করে কমিটির পরবর্তী বৈঠকে প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

কমিটিকে আরও যেসব কাজ করতে বলা হয়েছে তা হচ্ছে−রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে বিলীন হওয়া বনের গাছপালার কার্বন মজুত করতে না পারায় ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ কমিটির পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে। স্থলভাগের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি জলভাগের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তবে কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পার হলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব ও কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু কমিটির কার্যপরিধি কী হবে এবং সদস্যদের সরেজমিন পরিদর্শন ব্যয়সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কারা বহন করবে, সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। আমরা বিষয়টি জানিয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিলে কাজ শুরু হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বন উজাড়ের কারণে গাছপালা যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতো, সেটা হচ্ছে না। সেই গ্রিনহাউস গ্যাস এখন পরিবেশে থেকে যাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি এই ক্ষতির সব দিক প্রতিবেদনে নিয়ে আসতে। যাতে এটা নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এ ক্ষতিটা স্থায়ী। জীববৈচিত্র্যও একবার ধ্বংস হলে ফেরানো যাবে না। কক্সবাজার-উখিয়াতে শুধু গাছ কাটা নয়, শিকড়ও উপড়ে ফেলা হচ্ছে। তাই নতুন করে ডালপালা গজানোর সম্ভাবনাও নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর কক্সবাজার বনবিভাগের বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলেও এখনও বৃক্ষ নিধন থামেনি। জ্বালানির চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত কেটে ফেলা হচ্ছে অগণিত গাছ। কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গার কাছে এনজিওর মাধ্যমে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হলেও এখনও প্রায় ২৫ শতাংশের বেশি রোহিঙ্গাই জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীল।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কক্সবাজারে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে। প্রতি পরিবারে যদি গড়ে ৫ জন করে ধরা হয় তবে মোট ২ লাখ পরিবার। প্রতি পরিবারের জন্য যদি প্রতিদিন ৫ কেজি করে জ্বালানির প্রয়োজন হয় তবে প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি কাঠের প্রয়োজন। এ হিসাবে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার গাছ কাটা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা একটা গবেষণায় দেখেছি, যখন ব্যাপক হারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করে তখন প্রথম তিন মাসেই কক্সবাজারের বনাঞ্চলের ১১ ভাগ বিলীন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের এই ক্ষতি পূরণের জন্য সরকার কোনও প্রকল্প নিচ্ছে না। কিন্তু ঠিকই জলবায়ুর টাকা অন্য খাতে চলে যাচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্নগুলো লিখিত আকারে পাঠাতে বলেন। গত ১০ নভেম্বর তার কাছে প্রশ্নগুলো পাঠানো হয়। প্রশ্নগুলোর মধ্যে ছিল−কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কর্তৃক নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে এক বছরে সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি কার্বন জমা হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষতি নিরসনে মন্ত্রণালয় কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা? কিন্তু প্রশ্নটির উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION