সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

এসময়ে উদ্বেগ কীভাবে কাটাবেন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর ধীরে ধীরে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে। বিধিনিষেধের কারণে সব অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ, রেস্টুরেন্ট এবং থিয়েটারগুলো বন্ধ হয়ে যায়। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে সবাইকে ঘরেই থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। কোনো কোনো দেশে লকডাউন কার্যকর করতে শাস্তির বিধান করা হয়।

পরিস্থিতি মারাত্মক হওয়ার পর সম্ভাব্য হুমকিগুলোর ওপর দৃষ্টি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক আচরণের জায়গায়ও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সবাইকে উদ্বিগ্ন হয়ে মাস্ক কেনা, গ্লাভস এবং অন্যান্য সুরক্ষা পোশাক না কেনার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। বরং হাত ধোয়া ও হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারসহ সাধারণ সুরক্ষা নীতিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়।

অবশ্য তার পরও অনেকের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে থাকাটা বরং কঠিন। মনোবিদ মাইকেল সিনক্লেয়ার বলেন, এটা বোঝা যায় যে এখানে এক ধরনের উদ্বেগ থাকবে। আমাদের মন ঐতিহাসিকভাবেই বিকশিত হয়েছে হতাশায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার জন্য। আমাদের মস্তিষ্কে এটা গেঁথে গেছে এবং আমরা বেঁচে থাকার জন্য নতুন দক্ষতা শিখি। আমাদের মনকে যা বোঝানো হয়েছে সে তা-ই করে। মনোবিদ সিলভা নেভেস একমত পোষণ করার পাশাপাশি সতর্কবার্তাও দেন, উদ্বেগও সংক্রামক। তাহলে যদি স্বাস্থ্য বিষয়ে উদ্বেগ বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে কী করা যায়?

সবসময় নিজের মনের কথা শুনবেন না

আপনার মন কী বলছে তা শুনুন এবং তারপর তথ্যপ্রমাণের দিকে তাকান সেগুলো আসলে কেমন—বলছিলেন ড. সিনক্লেয়ার। তিনি আরো বলেন, আমাদের বুঝতে হবে এটা এমন গল্প যা কিনা আমাদের মন বলছে, কিন্তু তা বাস্তবতা নয়। উদহারণস্বরূপ আমি অসুস্থ হতে যাচ্ছি, না বলে বলুন, ভাবছিলাম আমি অসুস্থ হতে যাচ্ছি। এটা এজন্য যে আপনার মন আপনাকে বলছে, বাস্তবতা নয়।

নেভেস যোগ করে বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে কতটা চিন্তা করি, তার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে। আমাদের চিন্তার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যদিও কখনো কখনো একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। উদ্বিগ্ন হওয়া কখনো ভালো ফল দেয় না। তাই অন্যান্য কাজের জন্যও মস্তিষ্ককে জায়গা দেয়া উচিত।’

মানসিক চাপের শারীরিক লক্ষণগুলো এড়িয়ে যাবেন না

সিনক্লেয়ার বলেন, কখনো কখনো আমরা উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে নিজেদের অসুস্থ বানাতে পারি (এমন যে আমাদের করোনাভাইরাসের মতো কিছু থাকতে পারে)। সঙ্গে লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট ও হূত্কম্পন থাকতে পারে। কিন্তু যখনই এমন হবে এগুলো উপেক্ষা করার চেষ্টা করবেন না, এটি আপনাকে কোনো সাহায্য করবে না।

নেভেস বলেছেন, আতঙ্কিত হলে কয়েকবার শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করুন। বসুন এবং দশ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস গণনা করুন। এরপর আবার করুন।

সামারিটানরা (একটি দল যারা মানসিক দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের সময় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে) বলেন, কিছু বিষয় আছে যা আপনার উদ্বেগ কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। যেমন স্বস্তি আনে এ রকম ব্যায়াম, শ্বাসপ্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ, আনন্দদায়ক কিছু করা এবং নিজের সমস্যা নিয়ে বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে আলাপ করা।

দলটির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, জীবনের কোনো একটা পর্যায়ে সবাই হতাশ বোধ করে এবং যদি আপনি এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারেন, তখন বর্তমান পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়। আপনি কেমন অনুভব করছেন তা নিয়ে আলাপ করলে দৃষ্টিভঙ্গিগত সাহায্য পেতে পারেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আরো ইতিবাচক থাকা যায়।

উদ্বেগগুলোর রেকর্ড রাখুন

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাইকোথেরাপির এলিজাবেথ ট্রুপ বলেন, ব্যবহারিক কিছু আপনি করতে পারেন, কিছু বিষয় যা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যা উদ্বেগ প্রকাশে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তিনি একটি জার্নাল বা নোটবুক রাখার কথা বলেন। তার মতে, উদ্বিগ্ন হলে তা নোটবুকে লিখে রাখুন এবং তা সরিয়ে রাখুন। একবার লিখে ফেললে, তারপর এটা ভুলে যান।

আপনি দুটো বৃত্ত এঁকেও চেষ্টা করতে পারেন। একটি বৃত্ত নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং অন্য বৃত্তটি প্রভাবহীনতার। এরপর জীবনের যে বিষয়গুলো নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন তা দিয়ে বৃত্তগুলো পূরণ করুন। যে বিষয়গুলো আপনাকে প্রভাবিত এবং উদ্বিগ্ন করলেও আপনি কিছু করতে পারবেন না তা মনে রাখতে সাহায্য করবে।

সেসব ভোগ করুণ যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন

নেভেস বলেন, যদি আপনার মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় তবে খবর দেখা বন্ধ করে দিন। সোস্যাল মিডিয়াও বন্ধ করে রাখুন। আপনার মনোযোগকে সীমিত করুন। আপনি নিজের সঙ্গে কঠোর হতে পারেন। সিদ্ধান্ত নিন দিনে একবার ভাইরাস নিয়ে খবর এবং আপডেট দেখবেন। আপনাকে পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে বলছি না। কিন্তু সময় কমিয়ে আপনি উদ্বিগ্নতা হ্রাস করতে পারেন।

কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিন

মনকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিছু শারীরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন, যার ফলে আপনি স্বস্তি বোধ করতে পারেন। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শমতো, বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে পারেন। বিশেষ করে খাওয়ার আগে। এছাড়া অন্য পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন।

সহায়ক ডিজিটাল নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকুন

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেরার্ড বার্নেস বলেন, উদ্বেগের সময় নিজেকে আরো বেশি আলাদা করার ইচ্ছা কাজ করে। কিন্তু মানুষের সঙ্গে অনলাইনে এবং ফোনে যুক্ত থাকা উদ্বিগ্নতা কমাতে পারে। ভালোভাবে যোগাযোগ রক্ষার ফলে মনে হতে পারে পাশে কেউ আছে এবং ভালো শক্তিও পাওয়া যায়।

পাশাপাশি আপনি চাইলে আশপাশের মানুষের সঙ্গে ভাইরাস নিয়ে আলাপ করতে পারেন। সম্ভবত আপনি এটা নিয়ে কৌতুকও করতে পারেন। এর ফলে আপনি অনেক বেশি স্বস্তি বোধ করবেন এবং উদ্বিগ্নও কাটিয়ে উঠতে পারেন।

অনুমান এড়িয়ে বাস্তবতায় মনোযোগ দিন

সারাক্ষণ আপনার সামনে খবরের দুনিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আপডেট ঝুলছে, ফলে জল্পনা-কল্পনায় গা ভাসানো সহজ। কিন্তু বার্নেস বলেন, মিডিয়ার এসব ঝড় ও অনুমানভিত্তিক খবর পড়া এড়ানো উচিত। বরং স্বাস্থ্যবিষয়ক সাইটগুলোতে যুক্ত থাকা উচিত, যেখানে স্পষ্ট, সহজ নির্দেশনা থাকে এবং করোনাভাইরাস নিয়ে বাস্তবতাভিত্তিক বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেয়া উচিত। সূত্র:বণিকবার্তা।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION