বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণসহ নানা সংস্কারের প্রস্তাব করে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইনের খসড়া করা হয়েছিল ১১ বছর আগে। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের বিরোধিতায় তা আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৮ সালে আবার খসড়াটি মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন হয়। তখনো হয়নি। চলতি বছরও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও আইনটি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হয়নি।
তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অংশীজনদের সঙ্গে ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আইনটির প্রস্তাবনায় কিছু সংযোজন বিয়োজন করে নতুন করে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে, যা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব বিষয়ে মতামত দেওয়া যাবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনটি নানা কারণেই প্রয়োজন। চিকিৎসকরা ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করেন। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই আইনটি হলে ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করা যাবে না। শুধু চিকিৎসকদের ফি-ই নয়, অন্যান্য নমুনা (রোগ নির্ণয়ে) পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এ ছাড়া প্রতিবছরই প্রচুর রোগী বিদেশে যায়। বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে এখানেই বিদেশি হাসপাতাল হবে। চিকিৎসাসেবায় অবহেলাজনিত ক্ষতি যেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারানো, দৃষ্টিশক্তি হারানো, চিকিৎসা খরচ বেশি রাখা, প্রজনন ক্ষমতা হারানো এসব সংগঠিত হলে এ আইনে মামলা করা যাবে।
খসড়ায় বেসরকারি হাসপাতালকেও মুমূর্ষু ও সংকটাপন্ন রোগীর জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে আশঙ্কাজনক রোগীকেও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব না হলে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর আহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দিয়ে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। নতুন খসড়ায় চিকিৎসক, হাসপাতাল ও রোগী তিন ক্ষেত্রেই সুরক্ষা দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
৪৫টি ধারার এই খসড়ায় বলা আছে, জনস্বার্থে বিনামূল্যে, স্বল্পমূল্যে, ভর্তুকিতে বা অন্য কোনো উপায়ে পাবলিক হাসপাতলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। বিদ্যমান কোনো সেবা থেকে চিকিৎসা গ্রহীতাকে বঞ্চিত করা যাবে না। রোগীর ল্যাবরেটরি রিপোর্ট ও প্যাথলজি রিপোর্টে ডিজিটাল সাইন ব্যবহার করা যাবে না, এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতের লেখা স্বাক্ষর থাকতে হবে।
সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সেবা, স্বাস্থ্যসেবার ফি ও রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করে দেবে। এই মূল্য বা ফি-এর তালিকা দৃশ্যমান জায়গায় প্রদর্শন করতে হবে। এসব ধারা না মানলে ২০ লাখ টাকা অথবা ২ বছর কারাদ- দেওয়া হবে। অথবা ২০ লাখ টাকা ও কারাদন্ড উভয় দন্ডই কার্যকর হবে। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে এটি দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
এই অধ্যাদেশের আওতায় সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে দেশে প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান মেনে সম্পূর্ণ বিদেশি অর্থায়নে অথবা অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হাসপাতাল স্থাপনের সুযোগ থাকবে। দেশে অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের মতো তাদেরও সব বিধিনিষেধ মানতে হবে। একই সঙ্গে পাবলিক, প্রাইভেট হাসপাতালে শর্তসাপেক্ষে বিদেশি চিকিৎসকদের চাকরির সুযোগ থাকবে।
মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুযায়ী সংগঠিত অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনার সুযোগ পাবেন এই অধ্যাদেশে। একই সঙ্গে সরকার মনোনীত কমিটি বা কর্মকর্তা হাসপাতাল বা চিকিৎসাসেবা সহায়তা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো সময় পরিদর্শনে যেতে পারবেন।
চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলে বা সেবাগ্রহণকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আদালতে প্রচলিত আইনে শাস্তি হবে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রদান-সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে আদালত দুজন বিশেষজ্ঞসহ ন্যূনতম তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে অভিযোগ গ্রহণ করবে। আদালতের পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। মোবাইল কোর্টের প্রচলিত আইনে মোবাইল কোর্ট দন্ড আরোপ করতে হবে।
ভয়েস/আআ