বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রামে এক সাপ্তাহ আগে নিখোঁজ হওয়ার পর পরকিয়া প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছেন রেহানা পারভীন (৩৭) নামে এক প্রবাসীর স্ত্রী। ৭ জানয়ারী (বৃহস্পতিবার) বিকালে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয় রাঙামাটির ঘাগড়া এলাকা থেকে। নিহত রেহানা হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর এলাকার প্রবাসী জনৈক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার সকালে ঘাতক প্রেমিক ট্রাক চালক আবুল খায়ের (৪৮)কে গ্রেফতার করে কাউখালী থানা পুলিশ। তিনি রাঙ্গুনীয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও রাস্তার মাথা এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে। পরে শুক্রবার (৮ জানুয়ারী) দিবাগত রাতে সিএমপি’র বায়োজিদ বোস্তামী থানায় খুনী চালক আবুল খায়েরকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
সত্যতা নিশ্চিত করে রাঙামাটির কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শহিদ উল্লাহ জানান ট্রাক চালককে গ্রেফতারের পর এদিন রাতেই তাকে চট্টগ্রামের বায়েজীদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙ্গামাটির কাউখালী থানা পুলিশের একটি টিম ঘাগড়া এলাকা থেকে অর্ধগলিত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, বিকাশের টাকা উত্তোলন ও মেয়ের ঔষধ আনতে গিয়ে এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন ওই নারী। তার নাম রেহেনা পারভীন। দু’মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হাশেম বাজার মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে তার মায়ের লাশ সনাক্ত করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত জানান।
সিএমপির বায়োজিদ থানার এসআই ইকবাল জানান, এক সপ্তাহ আগে বায়োজিদ থানা এলাকা থেকে এক গৃহবধূ নিখোঁজ হলে তার লাশ পাওয়া যায় রাঙামাটিতে। এ ঘটনায় রাঙামাটি পুলিশ এক ট্রাক চালককে গ্রেফতার করে আমাদের থানায় হস্তান্তর করেছে।
পুলিশ জানায়, এ নারীর হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে কাউখালী থানার ওসি মোঃ শহীদ উল্ল্যাহ ও এসআই মোঃ আব্দুস সালামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টীম শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় রাঙ্গুনীয়ার ইসলামপুর এলাকা থেকে ঘাতক আবুল খায়েরকে গ্রেফতার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ট্রাক ড্রাইভার আবুল খায়ের জানায় নিহত রেহেনা পারভীনের সাথে প্রায় ৪/৫ বছর যাবত তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। রেহেনা পারভীনের স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাধে তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো এবং পরিবারের ঘরভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ সে নিজেই বহন করতো। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার রেহেনা পারভীনের বাসায় গিয়ে অন্য পুরুষের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল খায়ের। পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করার। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারী ঢাকা থেকে ট্রাক যোগে কয়লা নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার মগাছড়িস্থ ইটভাটাতে আসার সময় রেহেনা পারভীনকে ফোন করে টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। রেহেনা পারভীন তার ফোন পেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলে তাকে ট্রাকের কেবিনে রাঙামাটির পর্যটন রিসোটে নিয়ে আসবে বলে। পথিমধ্যে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে রাত সাড়ে নয়টায় ট্রাক থামিয়ে রেহেনা পারভীনকে গলায় মাফলার দিয়ে পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ট্রাকে থাকা কাপড় দিয়ে ডেকে কেবিনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।
ওইদিন রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা থেকে নিয়ে আসা কয়লা ইটের ভাটায় আনলোড করে গভীর রাতে ঘাগড়াস্থ সিটিহাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় ২শত গজ পশ্চিমে বনের ভেতরে রেহেনা পারভীনের লাশ ফেলে যায়।
কাউখালী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, এব্যাপারে নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে এবং গ্রেফতারকৃত ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার আবুল খায়েরকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভয়েস/আআ