শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

উন্মুক্ত লোনা পানিতে সমন্বিত মেরিকালচার প্রযুক্তির উদ্ভাবন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্টিত

আবুল বশর পারভেজ, মহেশখালী:

উন্মুক্ত লোনা পানিতে সমন্বিত মেরিকালচারের মাধ্যমে উপকূলীয় মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সুনীল অর্থনীতি প্রসারে এর গুরুত্ত্ব সংক্রান্ত এক সেমিনার ও প্রর্দশনীমূলক অনুষ্ঠান ২৩ জানুয়ারী ২০২১ শনিবার মহেশখালীর আদিনাথ জেটিঘাটের গোল চত্তরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, মৎস্য সম্প্রসারণে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানিক কর্মকর্তা, প্রান্তিক চাষি,স্থানীয় মৎস্যজীবি ও মহেশখালীর বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আশেক উল্লাহ রফিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইনামুল হক, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. শফিকুল ইসলাম।

সুনীল অর্থনীতি প্রসারে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের গুরুত্ত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনের সিংহভাগই আসে প্রকৃতির ভাবে আহরিত মৎস্য সম্পদ থেকে। অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত মৎস্য সম্পদ আহরণের ফলে বেশিরভাগ প্রজাতিই হারিয়েছে তার প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতা। মাছের সাথে সাথে মলাস্ক (ঝিনুক, ওয়েস্টার ইত্যাদি)কাকঁড়া-চিংড়িসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রানীর প্রাকৃতিক আবাসস্থল প্রতি বছর আশঙ্কা জনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। উপকূলীয় মৎস্য সম্পদের এই প্রাচুর্র্যতা হ্রাস এবং গনবিলুপ্তি রোধের পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতিতে এই সম্পদ কে কাজে লাগানোর সর্বাধিক কার্যকর উপায় হল সামুদ্রিক চাষাবাদ যা মেরিকালচার নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশের বিস্তৃত সামুদ্রিক অঞ্চলে মেরিকালচার প্রযুক্তি প্রয়োগ করে একদিকে যেমন সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করা হবে, তেমনি দেশের সার্বিক সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন কয়েকগুন বাড়ানো সম্ভব হবে। বাংলাদেশের উপকূলে উন্মুক্ত সামুদ্রিক এলাকায় এই প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে একদিকে প্রাকৃতিক মৎস্য আহরণের উপর চাপ কমবে এবং সেই সাথে মৎস্য উৎপাদনে মাধ্যমে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম হবে।

উন্মুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশে এই চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এর জন্য চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে একটি গবেষক দল ড. মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর অর্থায়নে কক্সবাজারের মহেশখালী চ্যানেলে ২০১৮ সাল থেকে উন্মুক্ত লোনা পানিতে সামুদ্রিক মাছ,ঝিনুক, কাকঁড়া, সিউইড চাষ প্রযু্িক্ত উদ্ভাবন ও উন্নয়নের মাধ্যমে উপকূলীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি সুনীল অর্থনীতির প্রসারের লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম বছর মহেশখালী চ্যানেলে উন্মুক্ত লোনা পানিতে মেরিকালচারের সম্ভব্যতা যাচাই করা হয় এবং দ্বিতীয় বছর চ্যানেলটির একাধিক স্থানে মাঠ পর্যায়ে ভাসমান স্থাপনা স্থাপন করে কম খরচের সর্বাধিক কার্যকরী ও সফল ঝিনুক চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। প্রকল্পের তৃতীয় বছর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম লোনা পানিতে সমন্বিত চাষ প্রযুক্তি (ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি ট্রফিক একুয়াকালচার- আইএমটিএ) ব্যবহার করে মহেশখালী চ্যানেলে বিশেষ গবেষণা সুবিধা সম্বলিত একটি প্রদর্শনী মূলক ভাসমান আদর্শ খামার স্থাপন করে যাতে একই সাথে সামুদ্রিক মাছ, ঝিনুক, কাকঁড়া ও সিউইড চাষ করা হচ্ছে।

ইন্টিগ্রেটেড মাল্টি ট্রফিক একুয়াকালচার (আইএমটিএ) একটি সমন্বিত মৎস্য চাষের লাভজনক পদ্ধতি।  এই পদ্ধতিতে একই সাথে খাদ্য শৃঙ্খলের বিভিন্ন স্তরের উৎপাদক ও খাদকের নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চাষ করা হয়, যা অর্থনৈতিক ভাবে যেমন লাভজনক সেই সাথে এই সমন্বিত পদ্ধতির রয়েছে অন্যান্য পরিবেশ ও প্রবিবেশগত উপকারিতা  যা আমাদের দেশের সীমিত জলজ সম্পদ এর সঠিক ব্যবহারে গুরুপ্তপূর্ন ভূমিকা রাখবে। এই পদ্ধতিতে একই স্থাপনা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচে একাধিক জাত চাষ করা যায়, যার ফলে প্রান্তিক চাষি যেমন একদিকে লাভবান হয়, অন্যাদিকে বিভিন্ন স্তরের খাদক, উৎপাদক ও বিয়োজকের সমন্বয়ে গড়ে উঠে অনন্য জলজ পরিবেশ। সেই সাথে এই পদ্ধতি অল্প জায়গায় বেশি উৎপাদন মুখী হওয়ায় সামুদ্রিক চাষাবাদের  স্থান সংকট সংক্রান্ত সমস্যারও একটি কার্যকর সমাধান রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে যা উপকূলীয় মানুষের উন্মুক্ত লোনা পানিতে চাষাবাদকে আরো সহজ ও গ্রহনযোগ্য করে তুলব।

চলমান প্রকল্পটিতে উন্ম্ক্তু লোনা পানিতে ভাসমান খাচাঁয় তিন প্রজাতির মাছ  (কোরাল, খরুল বাটা, দাতিনা) দুই প্রজাতির কাকঁড়া, ৫ প্রজাতির সিউইড ও ৩ প্রজাতির ঝিনুক সম্বলিত একটি প্রদর্শনী মূলক খামার তৈরী করা  হয়েছে। এই পদ্ধতিতে সম্পূন প্রাকৃতিক পরিবেশের মাছ, কাকঁড়া, ঝিনুক ও সিউইড বেড়ে উঠার সুযোগ পায় বলে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশও অন্যান্য চাষ পদ্ধতি থেকে বেশি। প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতার কারণে প্রকল্পের চাষকৃত মাছের আশানুরুপ বৃদ্ধিও নিশ্চিত হয়েছে।

প্রধান অতিথি বলেন, এই ধরনের গবেষণা প্রকল্প গণমুখী করে প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যে সয়ং সর্ম্পূনতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ আরো সুগম হবে। সভাপতি মাননীয় উপাচার্য এই রকম প্রযুক্তি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে সফল প্রয়োগ হওয়ায় সাধুবাদ জানান। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এই রকম আরো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাথে আরো কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গবেষক দলের প্রধান ড. মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধূরী বলেন, এই প্রযুক্তি মহেশখালী দ্বীপের আশেপাশে প্রায়ই ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সম্প্রসারণ করা সম্ভব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্গের এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION