শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কক্সবাজারে হোটেলে সিট নেই, বিমান-বাসে টিকেট নেই

আবদুল আজিজ:
আগামী ২১ শে ফেব্রয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সাপ্তাহিক টানা তিনদিনের সরকারি ছুটি থাকায় কক্সবাজার ভ্রমনে সব টিকেট অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ছাড়াও বিমান ও বাসের কোন ধরণের টিকেট নেই। টিকেট নেই সেন্টমার্টিন ভ্রমনে নিয়োজিত জাহাজের টিকেটও। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ভীতি হ্রাস পাওয়ায় মৌসুমের শেষ দিকে কক্সবাজারে ১০ লাখ পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সব ধরণের প্রস্তুতি।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একারণে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি রোববার পর্যন্ত সরকারি ছুটির দিন। এই তিনদিন এদেশের প্রায় সব দাপ্তরিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকবে। এই সুযোগে পরিবার-পরিজন নিয়ে পর্যটন নগরীর দিকে ধেয়ে আসছে পর্যটকের দল। এই তিনদিন কক্সবাজারে হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। একইভাবে কক্সবাজার ভ্রমনের বিমান টিকেট, বাসের টিকেট এবং সেন্টমার্টিন ভ্রমনেও নেই জাহাজের টিকেট। এসব পরিবহণখাতে পর্যটকদের চাহিদার সুযোগে বৃদ্ধি পেয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বিশেষ করে কক্সবাজার কলাতলী পর্যটন জোনে অবস্থানরত হোটেলের ভাড়া (নরমাল) সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। কিছু হোটেলে ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার পর্যন্তও চাওয়া হচ্ছে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি ছুটিতে পর্যটকদের থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় ও পর্যটক হয়রানি হওয়ার সম্ভাবনা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের ৪ শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট, কটেজ এবং ফ্লাটের এখন ‘ঠাঁই নেই’ অবস্থা। পর্যটকরা সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, ইনানী, হিমছড়িসহ ৬টি পয়েন্ট ছাড়াও দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্না, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওর্য়াল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, দুলাজাহারা সাফারিপার্ক, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলোতেও পর্যটকদের ঢল নামতে পারে। একারণে বেশ কয়েক বছরের মতো কক্সবাজার ভ্রমনে আসা পর্যটকদের সী-বিচ ও রাস্তায়-রাস্তায় রাতযাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একইভাবে পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলির রাস্তাগুলোতে চলমান সংস্কার কাজ থাকায় যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারেও।

গ্রীণ লাইন পরিবহণের কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ সোলতান আহমদ কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘আগামী ১৯ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাসের কোন ধরণের টিকেট নেই। সব টিকেট অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। টানা তিনদিন সরকারি ছুটি থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’

কক্সবাজার সী ওয়ার্ল্ড হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার প্রদীপ চৌধুরী কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘আমার হোটেলে ২৪৫টি রুম রয়েছে। কিন্তু, একটি রুমও খালি নেই। সব অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এই সরকারি ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে।’

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন কলাতলীতে ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহেল কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকে এত বিপুল পর্যটক আগমন কল্পনা করেনি। আমার ৮টি ফ্ল্যাটে কোন ফ্ল্যাট খালি নেই। অতিরিক্ত টাকা দিলেও কোন কক্ষ ভাড়া দেয়ার মতো নেই।’
বিলাস বহুল জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের কক্সবাজারের সমন্বয়কারি হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর জানান, ‘ভাষা দিবসে তিনদিনের ছুটি থাকায় পর্যটন স্পটগুলো দাঁপিয়ে বেড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সাগরপথে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে ৫ হাজার টিকেট অগ্রিম বুকিং হয়েগেছে। একইভাবে অন্যান্য জাহাজ গুলোরও একই অবস্থা। ফলে অনেকেই সেন্টমার্টিন যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও যেতে পারবে না।’

কক্সবাজারের এ্যাডভেঞ্জার ট্যুর এন্ড ট্রাভেলের মালিক রাশেদুল আমিন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘বিমানে টিকেট পাওয়া এখন দুস্কর। ভয়াবহ অবস্থা চলছে। সর্বনি¤œ ঢাকা টু কক্সবাজার বিমান টিকেটের মুল্য ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। কক্সবাজার থেকে ফিরতি টিকেটও একই অবস্থা। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার একটি ভিআইপি পর্যটকদল কক্সবাজার ভ্রমনে আসার টিকেট বুকিং দিলেও ফিরতি কোন টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারিও কোন পরিবর্তন হয়নি।’

কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিম খান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘চলতি পর্যটন মৌসুমে করোনার কারনে পর্যটক তেমন আসেনি। এখন করোনা ভীতি অনেকটা শিথীল। তাই, সরকারী ছুটির ফাঁকে অসংখ্য পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারে। ইতিমধ্যে শহরের আবাসিক হোটেল, কলাতলীর গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউস সহ সবখানে রুম নেই। এসব হোটেল মোটেলে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষের রাত্রী যাপনের সুযোগ রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পর্যটক আগমন ঘটলে অবস্থা সুচনীয় হবে’।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো: জিল্লুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘পর্যটকদের ভ্রমন নির্বিঘেœ ও সার্বিক নিরাপত্তায় লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মেইন বিচসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়াও শহরের বাইরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে। ইজিবাইক ও গাড়ী নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল ডিউটিতে রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের বাইরে থেকেও অতিরিক্ত একটি টিম আনা হয়েছে। এছাড়াও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে।

মো: জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা আমাদের দিক থেকে কোন ত্রুটি থাকবে না। তবে কক্সবাজার শহরের সড়ক গুলোতে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় সড়কের যানজট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা করারও সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে পর্যটক সেবায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION