শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পা হারা সেই লিমন নুতন জীবনে কেমন আছেন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

তখন তিনি স্কুলছাত্র। হেঁটে, নদীর খেয়া পার হয়ে স্কুলে যেতেন। গ্রামের আর ১০ তরুণের মতো জীবন ছিলো তার। কিন্তু এক ঘটনার পর পা হারাতে হয় তার। জীবন এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু এতকিছুর পর থেমে থাকেননি তিনি। উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং জয় করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের সেই লিমন হোসেন এখন আইনজীবী ও শিক্ষক। সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক তিনি। সাবলীল বাচনভঙ্গি ও সদা হাস্যোজ্জ্বল লিমন ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ। দেখে বোঝার উপায় নেই কতটা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এসেছেন তিনি।

১০ বছর আগে প্রত্যন্ত গ্রামে লিমনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে পায়ে গুলি করা হয়। এরপর সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। পরে ২০১৩ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে মামলা দুটি থেকে লিমনকে বাদ দেওয়া হয়। ২০১১ সালে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ঝালকাঠি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে র্যা বের বিরুদ্ধে লিমনকে হত্যাচেষ্টার মামলা করে। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি।

২০১১ সালের ২৩ মার্চ লিমন হোসেনকে গুলি করার ঘটনা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ২০১৩ সালে লিমনকে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি করান গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ২০১৭ সালে অনার্স শেষ করে কুষ্টিয়া ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন লিমন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রভাষক হিসেবে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি।

সম্প্রতি লিমন হোসেনের এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি বর্তমানে বরিশাল পিবিআই’র কাছে তদন্তাধীন। আমি চাই, সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হোক।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশে একটি মামলা তদন্ত করতে কতদিন লাগে, এটা আমার জানা নেই। আমি চাই তদন্ত যেন আলোর মুখ দেখে। সরকারের কাছে এটা আমার আবেদন।

লিমন হোসেন বলেন, ‘২০১১ সালে যখন আমার পায়ে গুলি করা হয়, তখন আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। একটা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য দেশের মানুষ ও সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা ছিল। সবচেয়ে বড় সাহস ছিল আমার মা। আমার সৎ সাহস ছিল, কেননা আমি সন্ত্রাসী ছিলাম না। কখনো আমাকে সন্ত্রাসী প্রমাণ করতে পারবে না।

ঝালকাঠি জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আক্কাস শিকদার বলেন, এই মামলার যে সমস্ত ডকুমেন্ট আছে, তাতে চার্জশিট হওয়ার কথা। তবে র্যা বেও আছে পুলিশ, আর পিবিআইও পুলিশ। এখন তারা কতটা তদন্ত করবে বা এই তদন্ত কর্মকর্তারা কোনো ঝুঁকি নেবেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। যার কারণে পিবিআইতে তদন্ত ঝুলে আছে।

লিমন হোসেন বলেন, ‘মানসিকভাবে আমি ভালো নেই। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে দেশের বাড়িতে থাকি না। আমার পরিবারের স্থায়ী একটা থাকার জায়গা নেই। আমার বাবা-মা এখন পাশের কাউখালী থানায় ভাড়া বাসায় থাকে।’

লিমন হোসেন একটা স্বপ্ন দেখেন। তিনি দেশে নির্যাতিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আইনি সহায়তা দিতে চান। তিনি বলেন, ‘আমার একটা সময় ইচ্ছা ছিল মানবাধিকার আইনজীবী হবো। এখন মানবাধিকার নিয়ে কাজ করাটাই আমার ইচ্ছা। আমি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার আমি নতুন করে একটা জীবন পেয়েছি। এখন দেশের মানুষ ও সুশীল সমাজের মাধ্যমে নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’ সুত্র:রাইজিংবিডি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION