মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানিবনন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ২লাখ লাখ মানুষ। বুধবারও ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে টেকনাফে একই পরিবারের ৫জন, উখিয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে ৩ জন, মহেশখালীতে পাহাড় ধসে ১জন ও ঈদগাঁওতে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার পাশ্বর্তী পার্বত্য উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমে মারা গেছে ২জন। এ নিয়ে গত দুইদিনে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার প্রধান নদী বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কক্সবাজার ও পাশ্ববর্তী এলাকায় গত দুইদিন ধরে টানা ভারী বর্ষন হচ্ছে। এতে পাহাড় ধসের পাশাপাশি জেলার নিম্নাঞ্চল গুলো ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার ২লাখ মানুষ। বন্যার পানিতে ভেঙ্গে গেছে গ্রামীন সড়ক ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি।
কক্সবাজার জেলার সদর, রামু, ঈদগাও, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে ২০টি ইউনিয়নের ৭০ টি গ্রাম। এসব গ্রামের ২ লাখেরও বেশি মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ে বসবাসরত লক্ষাধিক পরিবার। এসব পরিবার গুলোতে দ্রুত সরিয়ে না নিলে পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘কক্সবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা ভারি বর্ষণে জেলার গ্রামীন সড়ক গুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫১ হাজার ১৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘কক্সবাজারে টানা ভারী বর্ষণের কারনে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া অব্যাহত রয়েছে। আজ সকাল থেকে কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, রাডার স্টেশন ও সার্কিট হাউজের পাহাড়ের নিচের এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সচেতনতা অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা পর্যায়েও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপুর্ন ভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে যেতে সচেতনতা মূলক মাইকিং করা হচ্ছে।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, বুধলবারও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় কক্সবাজার সদরে ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার সর্বচ্চো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে। গত ২৪ ঘন্টায় টেকনাফে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত কয়েক বছরেও হয়নি।’
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘টানাবৃষ্টিতে ও মাতামুহুরীর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পাহাড়ে বসবাসরতদের সরিয়ে আনার জন্যও কাজ করছি।’
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন-‘গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দী লোকজনকে উদ্ধারের পাশাপাশি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি জানান-রাতে রামুর অফিসেরচর গ্রামে রামু-মরিচ্যা সড়কের পাশে বেড়িবাধ বিচ্ছিন্ন থাকায় নদীর পানিতে এলাকাটি প্লাবিত হতে থাকে। এসময় তিনি সড়ক প্রশস্থকরণ কাজের ঠিকাদারকে জরুরী ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন করা বেড়িবাধ সংস্কারের জন্য নির্দেশ দেন।’
এদিকে, কক্সবাজারে টানা ভারি বর্ষণে পৃথক পাহাড় ধস ও পানিতে ডুবে মারা গেছে ১২জন। এরমধ্যে টেকনাফে একই পরিবারের ৫জন। নিহতরা হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ভিলেজারপাড়া এলাকায় সৈয়দ আলমের ছেলে আব্দু শুক্কুর (১৬), মোহাম্মদ জুবাইর (১২), আবদুর রহিম (৫), মেয়ে কহিনুর আক্তার (৯) ও জয়নবা আক্তার (৭)। একই রাতে পাহাড় পড়ে মারা যান জেলার মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের রাজুয়ারঘোনা বৃদ্ধ আলী হোসেন। সে ওই এলাকার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে। একইদিন পানিতে ডুবে উখিয়া উপজেলায় পৃথক ৩জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃতরা হলো- উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আবদুর রহমান (৪৫), একই উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ধইল্যাঘোনা এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আলী আকবর (৪০) ও একই ইউনিয়নের মালিয়ারকুল এলাকার মোঃ ইসলামের ছেলে মোঃ রুবেল (২২)।
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ ৩ যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল। রামু ফায়ার সার্ভিসের রামু স্টেশনের প্রধান সৌমেন বিশ্বাস জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৬ ঘন্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরির দল আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঈদগাও খাল থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ গুলো হলো ঈদগাঁও উপজেলার দরগাহপাড়ার মোহাম্মদ শাহজাহান শাহ’র পুত্র ফারুখ (২৮), দেলোয়ার (১৫) ও অপরজন মোর্শেদ (৭)। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার পাশ্ববর্তী পার্বত্য উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার ঢলের সময় নদী পারাপার করতে গিয়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের শীলপাড়া গ্রামের সুবাস বড়–য়ার ছেলে আশীষ বড়–য়া (১৬) পানিতে ভেসে মারা যায়। একইদিন আবদুর রহিম (২৮) নামের এক রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করেন।
অপরদিকে ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের নতুন উপজেলা ঈদগাঁও’র সাথে রামু উপজেলার ঈদগড়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েগেছে। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে উক্ত সড়ক ধসে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এই দুই এলাকার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুধবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কের ঈদগড় ইউনিয়নের পানের ছড়া পয়েন্টে প্রায় দেড় শত ফুট সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিকল্প পথে বাইশারী-গর্জনিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু হয়ে কলা পরিবহন করতে হবে। এর ফলে কয়েকগুন বেশী পরিবহন খরচ পড়বে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে খরস্রোতা ঈদগাঁও নদীর মূল স্রোতধারা সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধ অথবা নদী শাসনের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেল বলে এমনটি মনে করেন স্থানীয় সচেতনমহল।
ভয়েস/আআ