শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

জাতিসংঘের চুক্তি: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

আবদুল আজিজ:
নোয়াখালীর ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর- সংযুক্ত হওয়ায় কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গারা আনন্দ মিছিল মিছিল বের করেছে। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উখিয়া কুতুপালং মেঘা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় তারা এই আনন্দ মিছিল বের করে। এসময় ক্যাম্পের মাঝিরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের মিষ্টি বিতরণ করে।

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। বর্তমানে নতুন ও পুরনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে। কিন্তু, গত বছর থেকে বাংলাদেশ সরকার নোয়াখালী জেলার ভাসান চরে একটি আধুনিক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করে। সেখানে এ পর্যন্ত ১৭/১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেছে। কিন্তু এতদিন ভাসান চরে জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সেখানে মানবিক সহায়তায় অংশ নেয়নি। এখন জাতিসংঘ ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা সহ সব ধরনের সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। তারা সরকারের সাথে ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিতে সরকারের সাথে চুক্তি করেছে। তাই রোহিঙ্গারা ভাসান চরে এখন অনেক শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে। ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্তিতে তাই সাধারণ রোহিঙ্গারা খুশি। রোহিঙ্গারা জানান এখন অনেকেই ভাসান চরে যেতে আগ্রহী হবে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২ ওয়েস্ট ব্লকের রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, ‘গত বছর ১৯ হাজারেও বেশী রোহিঙ্গা নোয়াখালীর ভাসানচরে গেছে। ওই সময়ে জাতিসংঘের কোন তদারকি না থাকায় সবাই চিহ্নিত ছিল। কিন্তু, তিনদিন আগে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়াতে সব চিন্তা দূও হয়ে গেছে। এখন সবাই ভাসান চর যাওয়ার জন্য লাইন ধরেছে।’

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-২-ই, ডাব্লিউ ব্লকের রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ আমিন বলেন,-ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা আনন্দিত। ক্যাম্প থেকে ইতিমধ্যে অনেকেই স্ব-ইচ্ছায় ভাসানচর যেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। এ কারণে আগামীতে ভাসানচর যাবে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের সাথে চুক্তি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

ওই ক্যাম্পের হেড মাঝি জাফর আলম বলেন,-‘রোহিঙ্গারা এখন নিজের ইচ্ছায় ভাসানচর যাবে। কারণ, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি সই হয়েছে। এখন বিভিন্ন এনজিও কাজ করবে ওই ভাসানচরে। এতে রোহিঙ্গারা খুব খুশি। যেসব রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে, আমরা তাদের নাম আগে তালিকায় লিপিবদ্ধ করছি।হয়তো বাংলাদেশ সরকার আগামী মাস থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়া শুরু করতে পারে’।

উখিয়া কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের ক্যাম্প ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের মাধ্যমে সেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রনয়ন করছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের সাথে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সাথে চুক্তি হওয়ার পর ভাসানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে কার্যক্রমে যুক্ত থাকবে। রোহিঙ্গারা এতে খুশি। তাই তারা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। তিনি জানান ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন অনেক শান্ত।

ঈররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন-ইতোমধ্যে ভাসান চরে ১৮ হাজার রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসান চরে রোহিঙ্গাদেও মানবিক সহায়তা নিয়ে সরকারের সাথে জাতিসংঘের চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। এতে করে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হবে। আগামী মাসের মধ্যেই ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সরকার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ওপর থেকে চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু আট হাজার ৭৯০ জন। নারীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩১৯ জন ও পুরুষের সংখ্যা চার হাজার ৪০৯ জন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION