বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ডালিম ভাই, আপনি-আমি রাষ্ট্রের আপদ ছাড়া কিছুই না

রহমান মুফিজ:
গোটা বাংলাদেশ হয়তো এম. সায়েম ডালিম নামের কাউরে চিনবে না। কিন্তু ছোট্ট শহর কক্সবাজার ডালিম ভাইরে ঠিকই চেনে। কারণ, এই জনপদের প্রতিটি সাংস্কৃতিক সংগ্রামে ছিলেন ডালিম নামের এই অকৃত্রিম কর্মী। সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না বটে, কিন্তু রাজনীতি সচেতন একজন অসামান্য মানুষ হিসাবে ডালিম ভাই সংস্কৃতির জমিনে রাইখা গেছেন অনন্য ভূমিকা। ডালিম ভাই আমার থেকে বয়সে বেশি হয়তো বড় হবেন না। বড়জোর বছর দুই/তিনের বড়। কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদার্পনের শুরু থেকে এই মানুষটারে দেখসি, একটা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়া নিজের মতো কইরা গইড়া তুলেসিলেন ‘কোয়েল নাট্য সম্প্রদায়’ নামের একটা সংগঠন। আহা! কী পরিশ্রম আর কী নিবেদন ছিল নাটকের জন্য; গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলেনের জন্য। সেই নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে এক কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ ডালিম তার সংগঠনের একের পর এক নাটক নিয়া কাঁপাইতেসিলেন মঞ্চ। আমরা মুগ্ধ হয়া দেখতাম। প্রয়োজনে সমালোচনাও করতাম। সব সমালোচনা কী দারুণ উদারমনে নিতেন আর বলতেন– ‘দেইখো, পরেরবার আর ভুল হবে না।’

ডালিম ভাই ভুল কমই করতেন। এমনকি এই যে করোনায় আক্রান্ত হয়া ডালিম ভাই আজ না ফেরার দেশে চইলা গেলেন, এইটাও তার ভুলে নয়। এই লুটপাটকারী, মুনাফাখোরী রাষ্ট্র, তার প্রশাসন, তার রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম উদাসীনতা, ব্যর্থতা এবং বাকোয়াজসর্বস্ব উন্নয়নের জিগিরকে বৈধতাদানকারী সুশীল সমাজের ভুলেই চরম অসময়ে জীবনের পাঠ শেষ করতে হইসে ডালিম ভাইকে। মৃত্যুর আগে তার জন্য একটা অক্সিজেন দরকার ছিল, পাননি। খুব সংস্কটাপন্ন অবস্থায় তারে নেওয়া উচিৎ ছিল আইসিউইতে। ভেন্টিলেশন দরকার ছিল তার। দরকার ছিল উন্নত ট্রিটমেন্টের। পাননি। অথচ ডালিম ভাইয়ের জীবন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় এর সবই পাওয়ার কথা ছিল। এইগুলা ছিল তার অধিকার। সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার। তিনি তা পাননি কেন? একজন নাগরিকের প্রয়োজনের সময় তার জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর যায় কোথায়? প্রশ্ন করসেন কখনো?

প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট তা নিতান্তই অপ্রতুল। কিন্তু গত ৪৯ বছরের বরাদ্দের হিসাব নিয়া দেখেন, ওই অপ্রতুল বরাদ্দ দিয়াও আজকের নিদানের দিনে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকতো। প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু হয়নি কেন? হয়নি কারণ– লুটপাটকারীদের ভোগের মাল হইসে সেই সব বরাদ্দ। গত পরশুর খবর শুনেননাই? আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের টাকায় কোভিট-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্যসরঞ্জাম কিনতে ৫শ’ টাকার গগলসের ক্রয়মূল্য ধরসে ৫ হাজার টাকা। ২ হাজার টাকার পিপিই ধরেছে প্রায় ৫ হাজার টাকা! বাজেট বরাদ্দ তো আছেই, এইভাবে হাজার কোটি ঋণের টাকাও লুটপাট করে খাইতেসে গোটা চক্র। আর সেই ঋণের কিস্তি শোধ হইতেসে আপনার পকেট থেকে। কারা নাই এই চক্রে? রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী- সবাই আছে। গোটা রাষ্ট্রটাই লুটপাটকারীদের বালাখানায় পরিণত হইসে। ফলে এই রকম একটা কেন, লাখো ডালিম মারা গেলেও রাষ্ট্রের কিছু যায় আসে না। কিন্তু আমাদের অনেক কিছু যায় আসে। একজন ডালিম, একজন নাগরিক, আমাদের অভাবনীয় সম্পদ। কক্সবাজারের উদীয়মান পর্যটন ব্যবসায়ীও ছিলেন তিনি। সর্বজনে পরিচিত, গ্রহণযোগ্য অসাধারণ ভাল মানুষ, নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিকর্মী, সমাজসেবক। তার জন্য আজ পুরা কক্সবাজার কাঁদতেসে। তার জন্য কিম্বা করোনায় আরো যারা মরতেসে তাদের জন্য রাষ্ট্রের কান্নার দায় নাই। মুনাফাখোরদের মুনাফার সব দরজা খুলে দেওয়া আর আমলাদের লুটপাটের সিস্টেমকে অবারিত করে দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো দায় আসলেই নাই।

আর আমাদের আছে খালি নীরব থাকার দায়। আমাদের আছে খালি কান্নায় বুক ভাসানোর দায়। আমার অক্সিজেন যে খাইয়া দিসে, আমি যে নিঃশ্বাস নিতে পারতেসি না, তার পরও আমি কথা বলবো না? এই অক্সিজেন খাইয়া দেওয়া রাষ্ট্র, রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমরে লাথি মারার হেডম যতক্ষণ আপনার আসবে না ততক্ষণ আপনারে এই নির্মম হত্যার যজ্ঞ দেইখা যাইতে হবে। নিজের ঘরে আঘাত না আসা পর্যন্ত মনে হইতেসে, সবাই মরবে-শুধু আপনিই বাঁইচা থাকবেন। এমন মনে হয় সবার। যখন ঝইরা যাইবেন গা, তখন বুজরুকির রাষ্ট্র তার খাতায় লিইখা রাখবে– শালার একটা আপদ গেসে!

কক্সবাজারেরই ছেলে, ডালিম ভাইয়ের প্রতিবেশী এনাম, যে ফেসবুকে সমুদ্র সন্তান নামে লেখে সে আজ সকালে একটা স্ট্যাটাসে লিখসে– ‘২০০০ পিপিই যদি ৬০০০ এ কেনে, তাইলে ৩ টার জায়গায় ১ টা কিনতেছে। যেখানে ৩ জন ডাক্তারের/স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা হইতো সেইখানে হইতেসে ১ জনের। বাকী ২ জনের লাশ গুনে টাকা কামাইতেসে আমলা এবং মন্ত্রী মহোদয়গণ। ভেন্টিলেটরেও তাই হইসে।, হইসে ICU তেও। আপনার যে স্বজন অক্সিজেনের অভাবে মরলো তার জন্য অক্সিজেন বরাদ্ধ ছিল, আমলা মন্ত্রিরা অর্ধেক কিনে অর্ধেক গায়েব করে দিসে। যাক সে মরে গিয়ে বাঁচলো, আপনি আরো লাশ গুনার জন্য, মন্ত্রী আমলাদের পকেট ভারি করা ট্যাক্স দেয়ার জন্য ভেজিটেবল হয়া বাঁইচা থাকেন।’

(লেখাটি ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION