শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার ঘিরে চলছে উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রশস্ত সড়ক নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। তবে চলমান কাজের মধ্যে শহরের হলিডে মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রধান সড়কের ফুটপাত নির্মাণে ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, যে ফুটপাত ও নালা তৈরি করা হচ্ছে সেটা রাস্তা থেকে ‘অস্বাভাবিক উঁচু’তে করা হচ্ছে।চিঠি পাওয়ার পর পূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করেছে।
প্রধান সড়কটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। এতে ব্যয় হচ্ছে ২৫৮ কোটি টাকা। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, অনেক আগে নির্মাণ করা বাসা-বাড়ির ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হচ্ছে। অন্যসব স্থানে ঠিক আছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের অভিযোগ এবং আমাদের দেখে মনে হয়েছে ফুটপাত ও নালার উচ্চতা অনেক বেশি। এ ছাড়া যে নালা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করছে তা অন্য সংস্থার নালার সঙ্গে সংযোগ আছে কি না? যদি না থাকে, তাহলে পানি তো এক জায়গায় থেমে যাবে। সাধারণ মানুষের বসবাসের জায়গা ও দোকানপাট সব অসুবিধায় পড়বে। সব মিলিয়ে পুরো কাজ বাস্তবসম্মত হবে কিনা? এসব বিষয়েই আমরা গণপূর্তকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলেছি।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খিজির খান বলেন, ‘আমরা যখন রাস্তা তৈরি করি তখন একটা লেভেল তৈরি করা হয়, এটা অনেকটা গাণিতিকভাবে করা হয়। গত কয়েক বছরের বন্যার পানির একটি স্তর এখানে হিসাবে আনা হয়। কক্সবাজার একটু পাহাড়ী এলাকা। এখানে রাস্তার উচ্চতা একেক জায়গায় একেক রকম। কিন্তু রাস্তা তো সবখানে সমানই হচ্ছে। ফলে যারা অনেক আগে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি করেছে তাদের সমস্যা হচ্ছে। আর যারা নকশা অনুমোদন করে স্থাপনা করেছে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হলিডে মোড়-বাজারঘাটা-লারপাড়া (বাস টার্মিনাল) পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের সঙ্গে নালা তৈরির কাজও রয়েছে। পর্যটন শহরের যানজট নিরসনে শুরু হওয়া এ কাজের সম্পূর্ণ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে। ২০১৯ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে নির্ধারিত সময়ে এ কাজ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে এই মুহূর্তে বাঁকখালী নদীসংলগ্ন ১৫০ ফুট প্রশস্ত সবুজ বেষ্টনী সহকারে বিকল্প সড়ক উন্নয়ন, সৈকত স্কুল গোল চত্বর-বিমানবন্দর সড়ক প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন, কেন্দ্রীয় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (্এসটিপি) স্থাপন, সুগন্ধা মোড়-সুগন্ধা পয়েন্ট-লাবণী পয়েন্টসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক প্রশস্তকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন চলমান রয়েছে। এ ছাড়া রেজুখাল এলাকায় সি অ্যাকুরিয়াম নির্মাণসহ শহরের লালদীঘি, গোলদীঘি, বাজারঘাটা পুকুরের সংস্কারসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা প্রকল্পের চাপ অনেক বেশি। তাদের এ প্রতিষ্ঠানে জনবলও একেবারে কম। এ স্বল্প জনবল দিয়ে হয়তো কাজের মান ও অন্যান্য দিকে তাদের তদারকি করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে।
সম্প্রতি শহরের প্রধান সড়কের ফুটপাত নির্মাণ নিয়ে নতুন করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজের মান ও অন্যান্য সমস্যা আলোচনায় আসে। ফুটপাতের উচ্চতা নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও জেলা প্রশাসনের আপত্তির মুখে গত ১৯ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন-২) আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে কক্সবাজারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পৌরসভা, জেলা প্রশাসনের সদস্যও রয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খিজির খান বলেন, ‘আমাদের প্রকৌশল জ্ঞানের মধ্যে যতটুকু বাস্তবসম্মত হয়েছে আমরা এভাবেই রাস্তাটি করেছি। কিন্তু কিছু কিছু স্থানে রাস্তা করার পর দেখা গেল যে রাস্তার তুলনায় ফুটপাত অনেক উঁচু। আবার অন্যদিকে রাস্তার পাশে যে স্থাপনা রয়েছে তাও অনেক নিচু। মানুষের মধ্যে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, উচ্চতা অনেক বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কক্সবাজারের যেসব সংস্থা রয়েছে যেমন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও পৌরসভার প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। এরপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সমন্বয় করেছি।’ তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক পূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে এবং সেখান থেকে কমিটি করা হয়েছে। এখন হয়তো কমিটির লোকজন এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আরও কিছু বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘আমাদের রাস্তার কাজ সব কিছু মাথায় রেখেই করা হচ্ছে। এখানে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির বিষয় ছিল, তা সমাধান হচ্ছে। ফুটপাত নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকার কথা না।’সূত্র: দেশ রূপান্তর
ভয়েস/আআ