রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রোজায় মূল্যস্ফীতি, বৈষম্য ও স্বাধীনতা

আহমেদ জাভেদ:
অ্যাডাম স্মিথের বহুল অলোচিত গ্রন্থ ‘দ্য ওয়েল্থ অব নেশনস’ গ্রন্থটির একশত একাশি নম্বর পৃষ্ঠায় স্মিথ সমাজের প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্য নীতিনির্ধারকদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ গুরুত্বের কথা অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। স্মিথের ভাষায়: “কোনো সমাজই সুখী ও সমৃদ্ধ হতে পারে না, যদি সে জনগোষ্ঠীর বড় অংশ দারিদ্র্য ও দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করে।” অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, “স্মিথের নৈতিক বিশ^াস ছিল, সুযোগের সমতার চেয়েও বড় বিষয় হলো লোকনীতি প্রণয়নে দরিদ্রদের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া।” নব্য-উদারবাদের এই সময়ে বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জীবনে কী দুর্বিষহ পরিস্থিতি নেমে এসেছে, প্রতিদিনের খবরের কাগজেই তার ভূরিভূরি প্রমাণ রয়েছে।

এপ্রিল মাসের পহেলা তারিখে প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনাম: “লাঠিতে ভর দিয়ে এলেন টিসিবির পণ্য কিনতে: বয়স তার আশির উপরে।” একই পৃষ্ঠায় অন্য শিরোনামটি হলো “রোজা শুরুর আগে আবার দাম বাড়ল।” দেশ রূপান্তরের শিরোনাম: “চড়া দামে তপ্ত রোজা।” মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন, লেবু, শসা, পেঁয়াজ, ধনেপাতা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের বাজার পর্যবেক্ষণ ও তদারকির দুর্বলতার কারণে এমনটি ঘটতে পারল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ বাজার তদারকিতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, সেসব অভিজ্ঞতার বিনিময় এক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাচ্ছি না। আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কা (৭.৭ শতাংশ) ছাড়া বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি। এটি শুধু করোনাকালে নয়, এর আগেও এমনটি ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২.৯ শতাংশ, চীনে ১.৬ শতাংশ, ভারতে ৩.৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ও মালয়েশিয়ায় ৩.৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ০.৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৩.৫ শতাংশ। শুধু গড়ের হিসাবই নয়, যাপিত জীবনের নির্দিষ্ট কেইস স্টাডিগুলোও দুর্বিষহ জীবনের বার্তা দেয়।

দৈনিক প্রথম আলোর (১০ মার্চ ২০২২ তারিখের) প্রথম পৃষ্ঠার তিনটি সংবাদের যথাক্রমে প্রথমটি হলো: “ফোঁটা ফোঁটা তেলে পরোটা ভাজা চলে: মাথার ওপর ঝুলছে সয়াবিন তেলের বোতল। স্বচ্ছ চিকন নল বেয়ে তাওয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় তেল পড়ছে। সেই তেলে পরোটা ভাজা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সয়াবিন তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছেন। যেমনটা সাশ্রয়ী হয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ। তেল বাঁচাতে সম্প্রতি এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।” দ্বিতীয়টি হলো: “সঞ্চয় ভুলে ধারে চলছে সংসার: মিরপুর রূপনগরের বস্তিতে ছোট্ট একটি টিনের ঘুপচিঘরে স্বামী ও তিন মেয়ে নিয়ে থাকেন গৃহকর্মী সোনিয়া আক্তার।… বললেন, হঠাৎ করে সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। প্রায়ই তাকে মানুষজনের কাছ থেকে ধারদেনা করতে হয়। … টিসিবির পণ্য কিনতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। কিন্তু সে জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। মানুষের বাসায় কাজ করেন, তাই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সময় তার নেই।” এবং তৃতীয়টি হলো: “সকালে লাইনে, বিকেলে খালি হাতে ফেরা টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড়: সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা টিসিবির ট্রাকের পেছনে এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন খ-কালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে সংসার চালানো ইরুন্নেসা। আশা, যদি কম দামে তেল-ডাল কেনা যায়। তবে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকাটাই বৃথা গেছে। ইরুন্নেসার পালা আসার আগেই টিসিবির ট্রাকের পণ্য ফুরিয়ে গেছে।” এই হলো বর্তমান বাস্তব অবস্থা। যাতনার তিক্ত অভিজ্ঞতা যার হয়েছে কেবল সেই ভুক্তভোগীই বোঝেন বর্তমান সময়ে বেঁচে থাকা কতটা কঠিন সংগ্রামের। কিন্তু এই দগদগে বাস্তবতা অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যায় খুব একটা ফুটে ওঠে না যা একধরনের অ-স্মিথীয় চর্চা। কিন্তু লোকে বিরক্তিকরভাবে তাকে অনবরত স্বার্থপরতার তাত্ত্বিক হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত যদিও তিনি তা ছিলেন না।

খাদ্যপণ্য প্রাপ্তির সঙ্গে মানুষের স্বাধীনতার সম্পর্ক রয়েছে। এই বিষয়ে জগৎখ্যাত বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রথম আমাদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন। বিখ্যাত নাট্যকার ব্রের্টোল্ট ব্রেখ্টের একটি কথা তিনি উদ্ধৃত করেছেন: ‘‘সবার আগে খাবার, পরে নৈতিকতা।’’ ব্রেখ্টের কথায় মনে হবে, জীবনের প্রয়োজনে খাবার যতটা তাৎক্ষণিক ও জরুরি বিষয়, তার তুলনায় নৈতিকতা যেন কিছুটা দূরের ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়! একইভাবে, জীবনধারণে খাদ্যের গুরুত্বের মতোই নীতিশাস্ত্রে স্বাধীনতা (অমর্ত্য সেন স্বাধীনতাকে সক্ষমতা অর্থে বুঝে থাকেন) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কিন্তু সাদা চোখে দেখলে মনে হবে সক্ষমতার দাবির চেয়ে খাদ্যের চাহিদা অত্যন্ত তীব্র। কিন্তু এই বৈপরীত্যের ভেতর কিছু মেকি বিষয় রয়েছে। সাধারণ অর্থে, সমাজের নীতি-নৈতিকতার চোখে খাদ্য নিশ্চয়ই একটি কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ, মানুষের জীবনের অনেক কিছু নির্ভর করে ক্ষুধা নিবারণের জন্য সে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহের সামর্থ্য রয়েছে কিনা তার ওপর। বিশেষ করে, মানুষের সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য যে স্বাধীনতা উপভোগ করার প্রয়োজন পড়ে সেখানে ক্ষুধা থেকে মুক্তির, অল্পদিনে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার স্বাধীনতা, ন্যূনতম গড় আয়ুর সমান বাঁচার নিশ্চয়তা ইত্যাদির গুরুত্ব জীবনধারণের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়ার মতোই মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতা। বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর ২০ বছর পেরুনো উপলক্ষে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন: “ঘরে পরপর তিন দিনের খাবার আছে, দেশে এমন পরিবার এখনো ৬০ শতাংশ হবে না।” (পৃ. ৩, ২ এপ্রিল, প্রথম আলো)। পরিকল্পনামন্ত্রীর এই কথার অর্থ দাঁড়ায় দেশে ৪০ ভাগের বেশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। যদি প্রায় পঞ্চাশভাগ জনগোষ্ঠী খাদ্যপ্রাপ্তিতে অ-স্বাধীনতায় ভোগেন, তবে তা উন্নয়নের অসম বণ্টনের দিকেই ইঙ্গিত দেয়।

অন্যদিকে আবার এটিও সত্য যে, দরিদ্র ও নাজুক জনগোষ্ঠী অনিচ্ছা সত্ত্বেও এমন কাজ করতে বাধ্য হয়, যা না করলে সে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এর ফলে সে জীবনধারণের বিনিময়ে নিজের স্বাধীনতাকে সীমিত করতে বাধ্য হয় অসন্তুষ্ট মন নিয়ে। সুতরাং, নিজের জীবনের স্বাধীনতা রক্ষায় খাদ্যপ্রাপ্তির ভূমিকা একেবারে কেন্দ্রীয়। অমর্ত্য সেনের এই বিশ্লেষণের আরও একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার আমাদের ঋদ্ধ করেছে। দুর্ভিক্ষ নিয়ে আমাদের দেশের লঙ্গরখানা জরিপের ওপর ভিত্তি করে তার গবেষণা আমাদের বলছে যে, সবসময় খাদ্যের অভাবের কারণে দুর্ভিক্ষ ঘটে না। বাজারে যথেষ্ট খাদ্য সরবরাহ থাকলেও বিভিন্নভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার কারণে বেশিরভাগ দুর্ভিক্ষ ঘটে থাকে। সুতরাং দরিদ্রদের ক্রয়ক্ষমতা সৃষ্টি না করলে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য তাদের হাতের নাগালে পাবে না। এ কারণেই খাদ্য সরবরাহের চেয়ে বেশি জোর দিতে হবে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর। আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অবাধ পরিবেশ থাকলে দুর্ভিক্ষ কিংবা মঙ্গার মতো ভয়ংকর কিছু ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থায় নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের বাজার দরেও বিপুল প্রভাব পড়েছে। মহামারী স্তিমিত হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে রিকোভারির পর্বকেও স্তিমিত করে ফেলেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। সুতরাং, গরিব মানুষ যাতে না খেয়ে থাকতে বাধ্য না হয়, তার জন্য গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে সেখানে তাদের নিয়োগ দিয়ে আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন বা জেট্রোর সমীক্ষা বলছে “বিনিয়োগ বাড়াতে চায় ৬৮ শতাংশ জাপানি কোম্পানি: বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চাওয়া কোম্পানির পরিমাণ ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।” (পৃ. ৮, ১ এপ্রিল, প্রথম আলো)।

আয় বৈষম্যেকে অর্থনীতির ভাষায় গিনি সহগ বলে অভিহিত করা হয়। গিনি সহগের ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে পরিস্থিতির কেমন অবনমন ঘটেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, সংক্ষেপে বিবিএসের ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১০’ (হায়েস-২০১০) তথ্য মতে দেশে জাতীয় গিনি সহগ ছিল ০.৪৫৮, যেখানে গ্রামে ০.৪৩১ ও শহরে ০.৪৫২ ছিল। ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬’ (হায়েস-২০১৬) তথ্য মতে জাতীয় গিনি সহগ হয়ে দাঁড়াল ০.৪৮২, যেখানে গ্রামে ০.৪৫৪ ও শহরে ০.৪৯৮। অর্থাৎ গিনি সহগ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এই জরিপ যদিও ৫ বছর আগের তথ্য, কিন্তু তখন থেকেই বাংলাদেশ উচ্চ বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই জানি বৈষম্য বেড়ে যাওয়া মানে হলো সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থার অবনতি হওয়া, জীবনযাপনের গুণগত মান কমে যাওয়া যদি না খুব শক্তিশালী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকে। আমাদের সুরক্ষা কর্মসূচির প্রধান দুর্বলতা হলো ভালো ডেটাবেইজের অভাব ও শহরে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম ছাড়া অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অনুপস্থিত থাকা।

স্মিথ তার ‘মরাল সেন্টিমেন্ট’ গ্রন্থে যথেষ্ট বোধগম্যতার সঙ্গে বলেছেন, কোনো কিছু সম্পর্কে আমাদের ‘প্রথম উপলব্ধি’ ন্যায় কিংবা অন্যায় যাই হোক “সেটি যৌক্তিকতার ভিত্তি হওয়ার চেয়ে বরং তাৎক্ষণিক অনুভূতি বা বোধের বেশি কিছু নয়।” অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন: “যদিও আমাদের প্রথম উপলব্ধিগুলো বিচারশীল নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যে কথা স্মিথও আমাদের জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের উপলব্ধিগুলো আমাদের প্রবণতা ও ভাবাবেগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দেয়।” আমরা এই মহান চিন্তকের কাছ থেকে শিখেছি যে, উন্নয়ন অর্থ মানুষের স্বাধীনতা ও সক্ষমতার সম্প্রসারণ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী টিসিবির ট্রাকসেলের মাধ্যমে বিতরণ গরিব মানুষের জন্য স্বাধীনতার কিছুটা সম্প্রসারণ হলেও তার আওতা এখনো সীমিত রয়ে গেছে যা আরও বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করতে হবে। দরিদ্র মানুষের অ-স্বাধীনতাগুলোকে কমানো না গেলে তাদের স্বাধীনতাও সম্প্রসারিত হবে না, ফলে উন্নয়নের সমবণ্টনও নিশ্চিত করা যাবে না।

লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সভাপতি বাংলার পাঠশালা ফাউন্ডেশন

ronieleo@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION