বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
আগামী সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যপট নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। গত দুই সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপি আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। দলটি বলছে, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এসব প্রেক্ষাপটে গতরাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
প্রথম আলো’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলই অংশ নেবে বলে আশাবাদী তিনি।
শনিবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, র্যাব এবং এই বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের অধিকার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা নিয়েও হয়তো ভবিষ্যতে চাপ আসতে পারে।
তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করছে। বৈঠকে দলের নেতাদের তিনি বলেছেন, এসব বিষয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে সব সময় ষড়যন্ত্র হয়। ষড়যন্ত্র মোকাবিলার শক্তি ও সামর্থ্য সরকারের আছে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা সূত্র আরও বলে, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ জন্য নেতা-কর্মীদের আরও বেশি করে জনগণের কাছে যেতে হবে, ভোট চাইতে হবে। ভোটে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত জানিয়ে তিনি বলেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করছে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। ফলে জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে, এ বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই।
ওদিকে, সমকালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিএনপিসহ সব দলকে আগামী নির্বাচনে আনতে সব ধরনের চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। আর ওই নির্বাচনে তিনশ’ আসনেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বিএনপিসহ সব দলকেই আগামী নির্বাচনে আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে কৌশল গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যাবে? এসময় মাহবুবউল আলম হানিফকে তিরস্কার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলেই বুঝি তোমার সুবিধা হয়! তোমার এলাকায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছে। তুমি নির্বাচন করলে তো তারাই হারিয়ে দেবে।’
কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ইঙ্গিত দেন। সভায় উপস্থিত দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা শুরু হয়। মাঝখানে কয়েক দফা বিরতি দিয়ে সভার কাজ চলে। সভা শেষ হয় রাত ১১টায়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জোরালো প্রস্তুতি নিতে নেতাদের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সব আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হবে। ফলে যাদের জনপ্রিয়তা আছে তারাই কেবল জিততে পারবে। কোনো কারচুপির সুযোগ নেই। আমি সবার এলাকায় খোঁজ নিচ্ছি। কার কেমন জনপ্রিয়তা আছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। যাদের এলাকায় অবস্থান নেই তারা মনোনয়ন পাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নকাজের প্রচার চালাতে হবে। আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি। এগুলো সঠিকভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে আমরা আবারও ক্ষমতায় আসতে পারব। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আসার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় একজন নেতা এ বিষয়ে ভিন্নমত দিলে প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন। সূত্র:মানবজমিন।
ভয়েস/জেইউ।