সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

দুঃখ-কষ্টে মাতম নয়

ধর্ম ডেস্ক:
মহররম মাসের নামোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি মুসলিমের মনে পড়ে যায় বিদ্রোহী কবির অমর পঙ্ক্তি-‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না।’ তার এ পঙ্ক্তিতে বাঙময় হয়েছে ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। আর তা হচ্ছে, দুঃখ-কষ্ট-প্রতিকূলতায় মাতম-বিলাপ নয়, ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করা কাম্য। শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে মহররম মাসকেন্দ্রিক যেসব অনৈসলামিক আনুষ্ঠানিকতা আছে সেসবের কথা বাদ দিয়ে সাধারণভাবেও এ কথা সত্য। আমাদের ব্যক্তি গত জীবন, পেশাগত জীবন ও দাওয়াতি জীবনের নানা প্রতিকূলতা, উম্মাহর বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মীয় ও নৈতিক স্খলন, আর্থসামাজিক সংকট, বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর নানামুখী বিপর্যস্ত ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই ওপরের এই কথা সত্য। মর্সিয়া-ক্রন্দনে সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়; বরং তা ক্ষেত্রবিশেষে সংকট মোচনের পথে বাধা ও প্রতিবন্ধকও বটে।

আমরা যদি ইসলামি আদর্শ ও চারপাশের চাহিদা ও প্রয়োজনকে সামনে নিয়ে নিজেকে বিচার করি তাহলে নিজের অনেক অযোগ্যতা, অক্ষমতা ও অপূর্ণতা চোখে পড়বে। এসব ত্রুটি দূর করার কিংবা অন্তত হ্রাস করার উপায় কী? এর উপায় মাতম-মর্সিয়া নয়, ত্যাগ ও কোরবানি। নিজেকে গড়ার পথে, ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতাগুলো দূর করার পথে আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার পথ অবলম্বন করতে হবে। আলস্য-উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা-আরামপ্রিয়তা ছাড়তে হবে। নিজের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সঠিক পথে অক্লান্ত পরিশ্রমে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

একই কথা ব্যক্তি জীবনের নানা অশান্তি, অস্থিরতা, দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও। এসব অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বিলাপ ও মাতম নয়, ধৈর্যের সঙ্গে অবস্থা পরিবর্তনের যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাওয়া এবং চেতনা-বিশ্বাসে ও কর্ম-প্রচেষ্টায় ইসলামি শিক্ষার অনুসারী থাকা।

আমাদের সামাজিক জীবনের নানা অবক্ষয়-অসংগতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনৈক্য, বিভক্তি, হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, জুলুম-অবিচার, পরশ্রীকাতরতা, অন্যায়, অনাচার, অনৈতিকতা ইত্যাদি থেকে উত্তরণের উপায়ও মাতম-ক্রন্দন নয়; এর উপায় ব্যক্তিগত পরিশুদ্ধি, নিজ নিজ পরিবার ও পরিমণ্ডলে দাওয়াতি ও ইসলাহি কর্মতৎপরতা, মানবসেবা, গণ-সংযোগ, গণমুখী দাওয়াতি কর্মতৎপরতা, দাওয়াতের সম্ভাব্য সব প্রকারের উপায়-উপকরণের যথার্থ ব্যবহার-এককথায় ব্যক্তি থেকে পরিবার এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সমাজ সর্বত্র সঠিক উপায়ে দাওয়াতি ও ইসলাহি কার্যক্রমের এক ইস্পাত-কঠিন সংকল্প গ্রহণ। অভিযোগ-অনুযোগ এবং মাতম-বিলাপের সে ঙ্গ এর কোনো সম্পর্ক নেই।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশে দেশে মুসলিম উম্মাহর নানা বিপদ ও বিপর্যয়, মুসলিম নেতৃবর্গের অবক্ষয়-অধঃপতন, যুব-সমাজের চেতনা-বিশ্বাস ও স্বভাব-চরিত্রগত বিপথগামিতা, মুসলিম জনতার সিংহভাগের ধর্ম-বিমুখিতা বা ধর্মীয় বিষয়ে নির্লিপ্ততা ইত্যাদি থেকে উত্তরণের উপায়ও মর্সিয়া-ক্রন্দনের আনুষ্ঠানিকতা নয়।

এ থেকে উত্তরণের পথ অনেক দীর্ঘ, অনেক পিচ্ছিল, অনেক বিপদ-সংকুল, তবে গন্তব্যে পৌঁছা অসম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি যদিও একদিনে তৈরি হয়নি এবং আপাতত অবস্থার পরিবর্তনের বড় কোনো লক্ষণও দৃশ্যমান নয়, কিন্তু এও তো সত্য যে, একসময় এই উম্মাহর সুদিন ছিল, সেদিন মুসলিম উম্মাহ্ই ছিল বিজয়ী জাতি, গোটা বিশ্বের অন্য সব জাতিসত্তার পথনির্দেশক। কাজেই বিদ্যমান পরিস্থিতি তো শাশ্বত কোনো পরিস্থিতি নয়, একদিন তা ছিল না এবং ইনশাআল্লাহ একদিন তা থাকবেও না। সেই দিনটি কবে আসবে, কীভাবে আসবে তা যদি আমাদের ভাবতে হয় তাহলে প্রথমেই ভাবতে হবে কেন উম্মাহ, উম্মাহর নেতৃবৃন্দের ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয়?

এই মর্মান্তিক অবক্ষয়ের পেছনে কী মুসলিম উম্মাহর ইহবাদী শিক্ষা-ব্যবস্থা, সমাজ-ব্যবস্থা ও জীবন-ব্যবস্থাই দায়ী নয়? কোনো সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবস্থাগুলো তো আলাদা কিছু নয়, সেই সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাসরত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বাস্তব চর্চা ও অনুশীলনেরই নাম। তো মুসলিম দেশে দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমগণই যখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ইহবাদী ও ভোগবাদী ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করেছেন, চর্চা করেছেন ও প্রতিষ্ঠা করেছেন তখন এইসব ব্যবস্থা থেকে কীভাবে আল্লাহমুখী ও আখিরাতমুখী নেতৃত্ব বের হয়ে আসার প্রত্যাশা করা যায়? ধর্ম ও জীবনকে আলাদা করার পশ্চিমা দর্শন যখন মুসলিমেরাও গ্রহণ করেছেন তখন মুসলিম-সমাজের জীবনের অঙ্গনসমূহ যে ধর্মহীন হয়ে পড়বে আর ধর্মের কেন্দ্রসমূহে জীবন বিমুখতা বিস্তার লাভ করবে তা যতই তিক্ত হোক, অস্বাভাবিক তো নয়?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কী উপায়? যেকোনো সচেতন মুসলিমই বুঝবেন এ প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়, তবে হ্যাঁ, ইসলাম যেহেতু প্রত্যাশার দ্বীন, ইসলাম যেহেতু মানবীয় সাধ্যের ওপর নয়, এই বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তার কুদরতের ওপর আস্থা রাখতে শেখায়, তাই এ প্রশ্নের উত্তর এই যে, উত্তরণের উপায় আছে। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে নিজ নিজ পরিমণ্ডলে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক কাজ করে যাওয়া। যে প্রজন্ম গেছে তা তো গেছেই, আগামী প্রজন্মের দ্বীন-ইমান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আল্লাহমুখিতা ও আখিরাতমুখিতা তৈরির সাধনায় আত্মনিয়োগ করা, গণমানুষের চেতনা-বিশ্বাসে, হৃদয় ও মস্তিষ্কে, কর্ম ও জীবনাচারে ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠার সর্বব্যাপী মেহনতে জীবনকে ওয়াকফ করা। মুসলিম-অমুসলিম উভয় শ্রেণির কাছে ইসলামের সুমহান আদর্শের বাস্তব নমুনা প্রোজ্জ্বলভাবে তুলে ধরা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এ কথাগুলো বলা যত সহজ কাজে পরিণত করা তত সহজ নয়। তবে যদি আল্লাহর মদদ ও সাহায্য হয় তাহলে কোনো কঠিনই কঠিন নয়। সেই মদদ ও সাহায্যের উপায় মর্সিয়া-মাতম নয়, ত্যাগ, কোরবানি ও সাধনা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION