বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
আজ কিংবা কাল এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে যেতে হবে। নশ্বর পৃথিবী থেকে অবিনশ্বর জীবনে পদার্পণের মাধ্যম মৃত্যু। কোনো প্রাণীই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। আজ যারা মারা গেলেন, পরপারে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই তাদের প্রতি জীবিতদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। যেগুলো পালন করার কথা ইসলামে বলা আছে। একই সঙ্গে একজন মানুষ ও মুমিন হিসেবে যে সব আচরণ মৃত ব্যক্তির সঙ্গে করা যাবে না তারও নির্দেশনা ইসলামে আছে।
একজন মুসলমান মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এই দোয়াটি পাঠ করে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়। যার অর্থ, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। বন্ধু হোক বা শত্রু হোক কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। কারণ, সব মুসলমান ভাই ভাই।
কারও মৃত্যুর কথা শুনে হাসি-তামাশা বা ঠাট্টা করা ভীষণ মূর্খতাপূর্ণ কাজ। যেটা শুধু মুসলমান নয়; কোনো মানুষেরই শোভা পায় না। এমন কাজের শাস্তিও বেশ ভয়ংকর। অন্যের মৃত্যুতে এমন আচরণ করলে নিজের মৃত্যুতেও মানুষ হাসবে। মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়া, কবর জিয়ারতের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। যাতে আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করে ভালো কর্ম সম্পাদন করতে পারি।
মৃত্যু সম্পর্কে যার এমন বিশ্বাস রয়েছে সে কখনোই আরেকজনের মৃত্যুতে তামাশা করতে পারে না। কারণ, আমরা কেউই অবগত নই যে, আমাদের কার মৃত্যু কখন হবে। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবার উচিত, মৃত ব্যক্তির ভালো কাজগুলো আলোচনা করা। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০০)
মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়; জীবিতাবস্থায় ভালো-মন্দ কাজ সবারই হয়ে থাকে। তার ভালো কাজগুলো উল্লেখ করে তার জন্য দোয়া করা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু মাঝে মাঝে কেউ কেউ ক্রোধের বশীভূত হয়ে মৃত ব্যক্তির সমালোচনা করে থাকেন। অথচ যিনি করেন, তিনিও কিন্তু ভুলের ঊর্ধ্বে নন।
অন্যের দোষ গোপন রাখা একজন মুমিনের কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা অন্য বান্দার দোষত্রুটি এ পার্থিব জীবনে গোপন রাখবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম শরিফ)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘আমার সব উম্মতের গুনাহ মাফ হবে। কিন্তু দোষত্রুটি প্রকাশকারীর গুনাহ মাফ হবে না।’ বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষের কুকীর্তিগুলো খুব সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়; কিন্তু এটি জঘন্য কাজ এবং এর শাস্তিও খুব কঠিন। তাই সমালোচনামূলক কাজ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, এটা ইসলাম সমর্থন করে না।
হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী একজন মুসলমানের প্রতি আরেক মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো কেউ মারা গেলে তার জানাজায় উপস্থিত হওয়া। সম্পর্ক যদি বৈরীও হয়ে থাকে, বিভেদ ভুলে সম্ভব হলে তার জানাজায় উপস্থিত হওয়া এবং দোয়া করা কর্তব্য। মৃত্যুর পরে মৃত ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। একটা কথা স্মরণ রেখে এই আচরণগুলো করতে হবে যে, আমরাও মৃত্যুপথযাত্রী। আজ আমি অন্যের প্রতি যে আচরণ করব, প্রাকৃতিকভাবে একই আচরণ কিন্তু আমার সঙ্গেও করা হবে।
মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে সান্ত¡না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম। শুধু মানুষের ইন্তেকালেই নয়, কোনো মুমিন ভাই যদি বিপদগ্রস্ত হয়; তখনো তাকে সান্ত¡না দেওয়া ইসলামের বিধান এবং ভ্রাতৃত্ববোধের নিদর্শন। এটি খুবই সওয়াবের কাজ। তাই কোনো মুসলমান মারা গেলে তার প্রতি উত্তম আচরণ করা এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।
লেখক: সাইফুল ইসলাম হাফিজ, সূত্র:দেশরূপান্তর।