সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
আবদুল আউওয়াল:
জীবনের পূর্ণতার অপর নাম নারী। জান্নাতে হজরত আদম আলাইহিস সালামের কোনো কিছুর অভাব ছিল না। তবু তার মনে শান্তি ছিল না। একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা তাকে ব্যথিত করছিল সারাক্ষণ। অন্তর্যামী রব আদমের অস্থিরতার কারণ জানতেন। যদিও আদম এ ব্যাপারে তখনো কিছুই জানতেন না। নারী সম্পর্কে পূর্ব কোনো জ্ঞান তার ছিল না। যে কারণে আল্লাহর কাছে আবদার জানানোরও প্রশ্ন ওঠে না। পরে তার পাঁজর দ্বারা আল্লাহতায়ালা হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। কাছে পাঠালেন। আদম শান্তি পেলেন। স্বস্তিবোধ করলেন। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার কাছে প্রশান্তি লাভ করে।’ সুরা আরাফ : ১৮৯
লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ আদমের জন্য অপর কোনো পুরুষ সঙ্গী না বানিয়ে নারী সঙ্গী বানালেন এবং তাদের বিয়ে দিলেন, যাতে তার জীবন সুখে ভরপুর হয়ে ওঠে। সুতরাং বলা যায় নারী সুখের মূল। মানুষ তথা আদম সন্তানদের জন্যও আল্লাহতায়ালা একই ভাষা ব্যবহার করলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জোড়া (স্ত্রী) যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং সৃজন করেছেন তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা।’ সুরা আর-রুম : ২১
সুরা আলে ইমরানের ১৪ নম্বর আয়াতে দুনিয়ার ভোগসামগ্রীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা মোহনীয় যে কটি বস্তুর বর্ণনা এসেছে এর মধ্যে নারীর স্থান সর্বাগ্রে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীকে পুরুষের প্রবৃত্তির প্রেমে শোভিত করা হয়েছে।’
কোনো শ্রেষ্ঠ বস্তু ততক্ষণ শ্রেষ্ঠ থাকে যতক্ষণ তার গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য ঠিক থাকে। কিন্তু যখন সে তার আপন গুণ হারায়, বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে দেয় তখন তা বিষাক্ত হয়ে ওঠে। উপকারের স্থলে ক্ষতি করে। উদাহরণস্বরূপ দুধ-মাখনের কথা বলা যায়। ভালো থাকলে তাদের যে ফায়দা পচে গেলে কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর। ঠিক তেমন নারীর বিষয়টিও। সে যতক্ষণ তার ভালো গুণাগুণ ধরে রাখতে পারে ততক্ষণ তাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলা চলে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সতী নারী দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।’ সহিহ মুসলিম : ১৪৬৭
অন্যদিকে ভালো গুণাগুণ হারালে তাকে আর সম্পদ বলা চলে না। হাদিসের ভাষায় সে হয় তখন ‘শয়তানের রশি’। মিশকাত : ৫২১২
অপর এক হাদিসে এসেছে ‘তোমরা নারী থেকে সাবধান থেকো।’ সহিহ মুসলিম : ২৭৪২
নারীর ব্যাপারে এমন নেতিবাচক হাদিসগুলো মূলত দুশ্চরিত্র, গুণহীন খারাপ নারীর বিষয়ে প্রযোজ্য।
সতী নারীর গুণ : আল্লাহ বলেন, ‘অতএব যারা সতী-সাধ্বী স্ত্রীলোক তারা তাদের স্বামীদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালনকারী এবং স্বামীদের অনুপস্থিতিতে গোপন বিষয়গুলোর হেফাজতকারী হয়ে থাকে।’ সুরা নিসা : ৩৪
অন্য আয়াতে বলেন, ‘নবী যদি তোমাদের (স্ত্রীদের) সবাইকে তালাক দেন তাহলে অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে তোমাদের পরিবর্তে এমন সব স্ত্রী দেবেন যারা তোমাদের চেয়ে উত্তম হবে। যারা হবে সত্যিকার মুসলিম, মুমিন, অনুগত, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, সিয়াম পালনকারী, কুমারী কিংবা অকুমারী।’ সুরা তাহরিম : ৫
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে এমন নারী যে, বন্ধুভাবাপন্ন, ঘন ঘন সন্তান প্রসবকারী, সমব্যথী, সান্ত¡না দানকারী ও সহযোগী।’ সিলসিলা সহিহা : ১৮৪৯, ১৯৫২
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিসে সতী নারীর বিশেষ ১০টি গুণের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো
মুমিন : যারা খাঁটিভাবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনপূর্বক নবীজির আনা সব বিষয়কে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নেন।
মুসলিম : যারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর হুকুম পালন করেন ও নবীজির আদর্শ মেনে চলেন।
তওবাকারী : যারা কোনো অন্যায় করলে জেদ না করে আল্লাহর কাছে তওবা করেন এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না বলে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
ইবাদতকারী : শরিয়ত নির্ধারিত ফরজ-ওয়াজিব ইবাদতগুলো সঠিকভাবে যারা আদায় করেন।
রোজা পালনকারী : ফরজ রোজা পালন করেন। সাধ্যমতো নফল পালনেরও চেষ্টা করেন।
গোপনীয়তা রক্ষাকারী : স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে পরপুরুষ থেকে আড়ালে রাখেন ও একান্ত গোপন বিষয়গুলোর হেফাজত করেন।
স্বামী অনুরাগী : স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির সঙ্গে গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন।
অধিক সন্তান প্রসবকারী : স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে অভাব-অনটনের ভয়ে যারা সন্তান জন্মদান থেকে বিরত না থাকেন।
সাহায্যকারী : যারা ইবাদত-বন্দেগিসহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সব কাজে স্বামীকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন।
সমব্যথী : স্বামীর দুঃখে যারা ব্যথিত হন এবং তাকে সান্ত¡না দেন।
সুতরাং কোনো নারী যখন এসব গুণে গুণবতী হবেন তখন তিনি হবেন দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পুরুষের প্রশান্তির উপকরণ। চক্ষুশীতলকারী বস্তু। নতুবা হবেন গলার কাঁটা। জীবন ধ্বংসকারী বিষ।
ভয়েস/আআ