শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন: লাখো পর্যটকের ভিড়

জিকির উল্লাহ জিকু:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। বিকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে মা দেবীকে বিদায় জানানো হয়। এ উপলক্ষ্যে লাবনী সৈকতে জেলা প্রশাসনের উম্মুক্ত মঞ্চে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সরকারি টানা ছুটিকে কেন্দ্রে করে সৈকতে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। বুধবার প্রতিমা বিসর্জনের দিন হওয়ায় সৈকতে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। এতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধায় সৈকতে নেমে লাখো পর্যটক।  তবে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা বেশি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সম্প্রতির সেতুবন্ধন তৈরিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে সামিল হন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও। অশ্রুসজল চোখে আরও একটি বছরের জন্য দেবীকে বিদায় জানানো হয়। আগামী বছর দেবীর পুনরাগমনের আশায় বুক বাঁধবেন সকলে। দশমীই মূলত দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায় অর্থাৎ স্বামীগৃহে গমনের পাঁচ দিন পরেই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি।

প্রতিমা বির্সজন উপলক্ষে সমুদ্র সৈকতে নেয়া হয়েছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজে মাঠে সদা তৎপর ছিল র‌্যাব। এছাড়াও আনসার, ভিডিপি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার জন্য কাজ করে। এ মিলনোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফয়েল এমপি।

সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামন্ডপগুলোতে বিরহের সুর বেজে ওঠে। মা দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন কৈলাসে সন্তানদের আশীর্বাদ করে। সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামন্ডপগুলোতে ভক্তদের মাকে বিদায় দেওয়ার অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে দেখা যায়। দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন মন্ডপ থেকে প্রতিমা বহনকারী ট্রাকগুলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে আসতে থাকে। পুরো শহর জুড়ে নেয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিকেল তিনটার পর থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ভক্ত আর পর্যটকদের পদচারণায় লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। লাবনী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত সনাতন ধর্মবলম্বী আর সৈকত আগত পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে চলে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপ মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে সজন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতা সহ নানা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব। বিসর্জন মঞ্চ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ শেষে সমুদ্র সৈকতে শুরু হয় বিসর্জন। এরপর একে একে পুজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সাগর সৈকতে।

পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর জানিয়েছেন জেলায় ৩০৫ টি পুজা মন্ডপে পুজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮ টি প্রতিমা পুজা আর ১৫৭ টি ঘট পুজা। প্রতিটি পুজো মন্ডপে ছোট বড়ো ৬টি প্রতিমা রয়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২৮ টি ঈদগাও উপজেলায় ২৬ কক্সবাজার পৌরসভায় ২১ রামু উপজেলায় ৩২ চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভায় ৯২  পেকুয়া উপজেলায় ৯ কুতুবদিয়া উপজেলায় ৪৫ মহেশখালী উপজেলা ও পৌরসভায় ৩১ উখিয়া উপজেলায় ১৬ এবং টেকনাফ উপজেলায় ৬ টি পুজা মন্ডপের আয়োজন করা হয়।

এদিকে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন হলেও সৈকতে নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের মিলন ঘটে। বিসর্জন দেখতে আসা সুবর্না বড়ুয়া বলেন, আমরা বন্ধু-বান্ধব প্রতিবছরই বিসর্জন দেখার জন্য সৈকতে আসি। গতবছর করোনার কারণে আসেনি। এবারে অনেক ভালো লাগছে।

ঢাকা মিরপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সুধর্ম ও প্রিয়া বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের এই দৃশ্যটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজার সৈকতে এই মিলন মেলা না দেখলে বুঝা যাবেনা বাংলাদেশ যে একটা সম্প্রীতির দেশ।

চট্টগ্রাম থেকে আসা রনজিত বড়ুয়া বলেন, সাপ্তাহিক বন্ধ ও পূজার ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। বিসর্জনের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেখে খুবই ভালো লাগছে।

সৈকতের বালিয়াড়িতে সরেজমিন দেখা যায়, ভক্ত, পূজার্থী, দর্শনার্থী ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও সকল ধর্মের মানুষ বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জনে শামিল হয়েছেন। সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও দক্ষিণে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের তিন কিলোমিটার বেলাভূমিজুড়ে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক দৃষ্টান্ত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব নির্বিঘ্নে করতে আগে থেকেই বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয় পুরো কক্সবাজার জেলায়। তাছাড়া যে কোন প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ভক্তদের ভোগান্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পুরো এলাকায় জোরদার রয়েছিল প্রশাসনের নিছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, এ বছর জেলায় ৩০৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জানান, দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই উৎসবটি ব্যাপকভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান জানান, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েকশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION