মাওলানা আবদুল জাব্বার:

কোরআন মাজিদের সুরা বাকারার ১৫২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’

ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, বর্ণিত আয়াতের আরবি ‘জিকির’ শব্দের বেশ কয়েকটি অর্থ হতে পারে ক. মুখ থেকে যা উচ্চারণ করা হয়, খ. অন্তরে কোনো কিছু স্মরণ করা ও গ. কোনো জিনিস সম্পর্কে সতর্ক করা।

পরিভাষায় জিকির হচ্ছে, বান্দা তার রবকে স্মরণ করা। হোক তা তার নাম নিয়ে, গুণ নিয়ে, তার কাজ নিয়ে, প্রশংসা করে, তার কিতাব (কোরআন মাজিদ) তেলাওয়াত করে, তার একত্ববাদ ঘোষণা করে, তার নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করে অথবা তার কাছে কিছু চেয়ে।

জিকির দুই প্রকার। কথার মাধ্যমে জিকির ও কাজের মাধ্যমে জিকির। প্রথম প্রকার জিকিরের মধ্যে রয়েছে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত, আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহের আলোচনা ও স্মরণ, তার একত্ববাদ ঘোষণা ইত্যাদি। আর দ্বিতীয় প্রকারে রয়েছে ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেওয়া, আল্লাহর হুকুম-আহকাম ও আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি।

প্রথম প্রকার জিকিরের মধ্যে কিছু জিকির আছে যা সময়, অবস্থা এবং সংখ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন, সকাল ও সন্ধ্যার জিকির, নামাজের পরের জিকির, খাওয়ার শুরু-শেষ, কাপড় পরিধান, মসজিদে প্রবেশ-বাহির ইত্যাদিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্মের দোয়া বা জিকিরসমূহ।

জিকিরের ফজিলত অসংখ্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘বান্দা যদি আল্লাহকে স্মরণ করে, তাহলে আল্লাহও তাকে স্মরণ করেন।’ হজরত আবু উসমান নাহদি (রহ.) বলেন, আমি সে সময়টির কথা জানি, যখন আল্লাহতায়ালা আমাদের স্মরণ করেন। উপস্থিত লোকরা জিজ্ঞেস করল, আপনি তা কেমন করে জানতে পারেন? বললেন, তা এজন্য যে, কোরআন মাজিদের ওয়াদা অনুসারে যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন আল্লাহ নিজেও তাকে স্মরণ করেন। কাজেই বিষয়টি জানা সবার জন্যই সহজ, আমরা যখন আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগ করব, আল্লাহতায়ালাও আমাদের স্মরণ করবেন।

অপর এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কি এমন একটি উত্তম আমলের সংবাদ দেব, যা তোমাদের মালিকের কাছে অধিকতর পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক, স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যয় করা থেকেও তোমাদের জন্য উত্তম, শক্রর সঙ্গে মোকাবিলা করে গর্দান দেওয়া-নেওয়া থেকে উত্তম? তারা বলল, হ্যাঁ অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, জিকরুল্লাহ। জামে তিরমিজি : ৫/৪৫৯

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দা যে পর্যন্ত আমাকে স্মরণ করতে থাকে বা আমার স্মরণে যে পর্যন্ত তার ঠোঁট নড়তে থাকে, সে পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে থাকি। সহিহ বোখারি : ৭৪০৫

হজরত মুআজ (রা.) বলেন, আল্লাহর আজাব থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে মানুষের কোনো আমলই জিকরুল্লাহর সমান নয়।’

জুন্নুন মিসরি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রকৃতই আল্লাহকে স্মরণ করে, সে অন্য সবকিছুই ভুলে যায়। এর বদলায় স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই সবদিক দিয়ে তাকে হেফাজত করেন এবং সবকিছুর বদলা তাকে দিয়ে দেন।’

ভয়েস/আআ