শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন
ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান:
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম আলোচনার কেন্দ্রে আসে প্রতি বছর যখন ৭ নভেম্বর আসে। দলটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে এটি পালন করে। দিবসটির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য ১৯৭৫ সালের ৩ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির স্মৃতিচারণ আবশ্যক।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরই জিয়াউর রহমান নিজ পেশায় ফিরে যান। নানা কারণে তৎকালীন সরকার ও রাজনীতি সম্পর্কে ওই সময়ের সেনাবাহিনীর মধ্যে তৈরি হয় নেতিবাচক মনস্তত্ত্ব। অনেকের মতে গণতন্ত্রচর্চার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। সরকার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আসে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা চালু হয়। সামগ্রিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর মাঝারি পর্যায়ের কিছু ক্ষুব্ধ ও হঠকারী কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করে নিজেই সেনাপ্রধান হন। সেদিনই বঙ্গভবনে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের নিরাপদে দেশত্যাগ করার সুযোগ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি রাখায় সৈনিক ও জনতার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই গণ-অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা চরিতার্থ করার জন্য জাসদ ও গণবাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে গণবাহিনীর প্রধান কর্নেল তাহেরের ভূমিকা মূল্যায়ন করতে গিয়ে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাকে সেই গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে অগ্রসর তিনি হননি, তিনি অগ্রসর হয়েছিলেন খালেদ মোশাররফের ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ উদ্যোগকে নস্যাৎ করতে (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রকাশনা, ৭ নভেম্বর ২০১২)। দেশপ্রেমিক জনসাধারণের মধ্যে সর্বত্র একই আলোচনা হচ্ছিল, যদি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করা না যায় তাহলে দেশ ‘বিপ্লবীদের’ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে অথবা অনাকাক্সিক্ষত সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এর ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর রাজপথে নেমে আসে সিপাহী-জনতা। গৃহবন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা জিয়াউর রহমান। তিনি প্রতিশোধপরায়ণ ছিলেন না, ছিলেন মানবিক গুণে উদ্ভাসিত এক বিচক্ষণ ব্যক্তি। খালেদ মোশাররফ জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেছিলেন, কিন্তু সিপাহী-জনতার বিপ্লব শুরু হওয়ার পর জিয়াউর রহমান খালেদ মোশাররফের অবস্থান জেনে টেলিফোনে উষ্মা প্রকাশ করলেও খালেদ মোশাররফ ও তার সঙ্গীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ কথা মরহুম নওয়াজিশ আলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনকে জানিয়েছিলেন বলে তিনি তার ‘বাংলাদেশ রক্তাক্ত অধ্যায় : ১৯৭৫-১৯৮১’ বইয়ে উল্লেখ করেন। যদিও পরে খালেদ মোশাররফসহ তার সঙ্গীরা সিপাহীদের হাতে প্রাণ হারান।
গৃহবন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান কঠোর হাতে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। অনেকের সংশয় ছিল যে, তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। ঐতিহাসিক গওহর আলী তার সন্দেহের কারণ হিসেবে চার ভাগে বিভক্ত সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করেছিলেন (১৯৭৬, নিউজিল্যান্ডে ইন্টারন্যাশনাল টিভি)। বহুবার বৈষম্য ও অবজ্ঞার শিকার হয়েও বাংলাদেশকে একটি কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে গঠনের নিমিত্তে জিয়াউর রহমান সর্বস্তরের জ্ঞানী-গুণী মানুষের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। ৭ নভেম্বরের রাজনৈতিক তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে তিনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশে প্রকাশ্য রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের হাল ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। জাতিগত পরিচয় নির্ধারণেও ৭ নভেম্বরের তাৎপর্য অতুলনীয়। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিকাশ লাভ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এর দার্শনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। অনেকের মধ্যে সংশয় ছিল এটি কি রাজনৈতিক দল নাকি একটা ‘প্রবণতা’। সংশয়ের কারণ হলো, সাধারণত ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থেকে, রাজপথে কিংবা আলোচনার টেবিলে এ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। সেই বিবেচনায় বিএনপি ব্যতিক্রম। এটি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা জিয়াউর রহমানের মস্তিষ্কজাত রাজনৈতিক মতাদর্শ। সংগত কারণে অনেকের ধারণা ছিল, সরকারের মেয়াদ শেষ হলেই বিএনপি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাবে। সব সন্দেহ ও সমালোচনাকে ভুল প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন।
জাসদের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব প্রয়াসকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যরা বিপ্লবের প্রথম প্রহরেই ‘সৈনিক সৈনিক, ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই’ স্লোগান তোলেন এবং ১২ জন অফিসারকে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় যেসব রাজনৈতিক নেতা ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তাদের অনেকে এখন ১৪ দলের নামে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের শিবিরে রয়েছেন। অনেকে অবশ্য বিএনপির সঙ্গেও পরে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। বিপ্লব ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র পেছনে ফেলে ক্ষমতার হিস্যা নিতেই তারা এদল-ওদলে ভাগ হয়ে আছেন। তাদের তাত্ত্বিক গুরু সিরাজুল আলম খান পাঁচশ আসনের সংসদ নিয়ে বেশ কিছুকাল হইচই করে এখন রাজনীতি থেকে পুরোপুরি ‘অবসর’ নিয়েছেন (সোহরাব হোসেন, প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর ২০১৮)। পরের ইতিহাস কারও অজানা নয়। বিপ্লবী ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তথা আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের বাণী জাতীয়তাবাদী দর্শনের কাছে নিষ্প্রভ হয়ে যায়।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের বাঙালি ও অবাঙালিসহ সব নাগরিকের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পরিচয় হিসেবে ‘বাঙালির’ স্থলে ‘বাংলাদেশি’ পরিভাষা ব্যবহার করার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ শুধু ধারণাগত বিষয় নয় বরং এটি দেশপ্রেমের চেতনাস্নাত একটি প্রণোদনা, যা সব নাগরিককে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় সমান গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন দেশব্যাপী বুদ্ধিজীবী সমাজে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। অধ্যাপক আহমদ শরীফ এই রাষ্ট্র দর্শনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদে প্রান্তিক আদিবাসীরাও গোত্র, ভাষা, সংস্কৃতি নির্বিশেষে সবাই সমমর্যাদা ও সম-অধিকারের স্বীকৃতি পায়, জিম্মি থাকে না (আহমদ শরীফের ডায়েরি, ভাব-বুদবুদ, পৃ. ৬৪)।’ তবে তিনি জিয়াউর রহমান কর্তৃক সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ যুক্ত করাকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করেননি। তার মতে, ‘এর ফলে পূর্ণ নাগরিক হিসেবে মানসিক অধিকার ও স্বাধীনতাচর্চার ক্ষেত্রে অমুসলিম নাগরিকরা বৈষম্যের শিকার হবেন’ (প্রাগুক্ত)। আমার বিবেচনায়, দুটি কারণে আহমদ শরীফের শেষের মন্তব্যটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। প্রথমত, জিয়া প্রবর্তিত জাতীয়তাবাদী দলের নীতিমালা অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের প্রতি আস্থা রেখে দলের সমর্থক, কর্মী, কিংবা নেতৃত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে অমুসলিমদের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। দ্বিতীয়ত, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রবন্ধে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একদিকে যেমন ধর্মভিত্তিক নয়, তেমনি আবার ধর্মবিমুখও নয়। এই জাতীয়তাবাদ আবার প্রত্যেকের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মীয় অধিকারকে নিশ্চিত করে।’ জিয়াউর রহমান সাংবিধানিকভাবে দেশকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেননি, যা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের উদারনৈতিক চেতনা দ্বারা সুরক্ষিত। জিয়াউর রহমান সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ সংযুক্ত করার মাধ্যমে মূলত রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি একদিকে যেমন অমুসলিম নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় সমুন্নত রেখেছেন, অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মানসিক অধিকার ও স্বাধীনতাচর্চার প্রতি সংবিধানে আন্তরিক সমর্থনের নিদর্শন যুক্ত করেছেন। পণ্ডিত আহমদ ছফার একটি উক্তিতে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছফা বলেন ‘ইসলামের সম্ভাবনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগহীন রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ এ দেশে নেই (আহমদ ছফা, বাঙালি মুসলমানের মন, ১৯৮১)।’ নিরোধ বরণ চৌধুরী ১৯৬৬ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় পাঁচ পর্বে মুদ্রিত ‘পূর্ববঙ্গের সমস্যা’ নামক প্রবন্ধে এ ধরনের একটি সমন্বয়ধর্মী অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র দর্শনের উন্মেষের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদের মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনীতির নিষ্পত্তি হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ওই ধরনের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আবেদন একাত্তর-পরবর্তী বাস্তবতার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। বায়ান্ন, ছেষট্টি, ঊনসত্তরের স্মৃতি নিয়ে বসে থেকে তো আর জাতিরাষ্ট্র তৈরি করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের প্রয়োজনে সমঝোতা ও ঐক্যের রাজনীতি এবং জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বলা চলে, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের বৃহত্তর নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের আকাক্সক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। ঐক্যের বদলে গোষ্ঠীতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। জাতীয় ঐক্য তো দূরের কথা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধান শক্তিটিও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এর ফলে জাসদের মতো একটি রাজনৈতিক প্রবণতার জন্ম হয়। বাহাত্তরে প্রয়োজন ছিল নতুন রাজনীতি, নতুন কৌশল। একটি জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তার কার্যকারিতা সম্পন্ন করেছিল। আওয়ামী লীগ এরপর পুরনো মনস্তত্ত্বের ঘেরাটোপ থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। ১৯৪৭ সালের পর ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মনে করতে শুরু করে, মুসলিম লীগের বিরোধিতা মানেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশদ্রোহ। একাত্তরের পর আওয়ামী লীগও বিরোধীদের সমালোচনার মধ্যে সব সময় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেতে থাকে। সরকার বিরোধিতা আর রাষ্ট্রদ্রোহ একাকার করে ফেলে। এখান থেকেই শুরু রাজনৈতিক সংকটের। এর ধারাবাহিকতা চলছে আজও (মহিউদ্দিন আহমদ, বিএনপি : সময়-অসময়, ২০১৭, পৃ-১৩৪-১৩৫)।’
বর্তমানে যা ঘটে যাচ্ছে, তা সবার জানা। গণতন্ত্রের চর্চা নেই, আইনের শাসন নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। জিজ্ঞাসা হলো, এ অবস্থায় বিএনপির করণীয় কী? মূলত রাজনৈতিক সংকট রাজনীতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির সংগ্রাম ও নেতৃত্বের ধারাবাহিক একটি ঐতিহ্য রয়েছে। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে মুক্ত করেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। খালেদা জিয়া স্বৈরশাসক এরশাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে আপসহীন নেত্রীর উপাধি লাভ করেছেন। আজ সময় এসেছে বিএনপির নিজ দলের রচিত সংগ্রামের অতীত ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামের বিরতিহীনভাবে লিপ্ত হওয়ার। জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারকে বাধ্য করতে হবে। তাই ঐতিহাসিক প্রয়োজনে গঠিত হওয়া দায়িত্বশীল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সর্বাত্মক সংগ্রাম রচনাই হওয়া উচিত বিএনপির ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবসের’ অঙ্গীকার।
লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
kamrul@juniv.edu