শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

উত্তম চরিত্র উত্তম ইবাদতের সমতুল্য

মুফতি এনায়েতুল্লাহ:

উত্তম চরিত্র এমন একটি মহৎ গুণ, যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে উপস্থিত থাকা একান্ত প্রয়োজন। কেউ উত্তম চরিত্রের অধিকারী না হলে সে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনে কখনোই সক্ষম হয় না। উত্তম চরিত্রের কারণে মানুষ মর্যাদার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে। এমনকি সে সর্বত্র স্মরণীয় ও বরণীয় হয়। দার্শনিক আল্লামা জুরজানি (রহ.) সুন্দর চরিত্রের একটি যথার্থ ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন ‘কিতাবুত তারিফাত’ নামক গ্রন্থে। তিনি বলেন, ‘চরিত্র হচ্ছে- আত্মার বদ্ধমূল এমন একটি অবস্থা, যা থেকে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়া অনায়াসে যাবতীয় কার্যকলাপ প্রকাশ পায়। আত্মার ওই অবস্থা থেকে যদি বিবেক-বুদ্ধি ও শরিয়তের আলোকে প্রশংসনীয় কার্যকলাপ প্রকাশ হয় তবে তাকে আখলাকে হাসানা (উত্তম চরিত্র) নামে অভিহিত করা হয়।’

বস্তুত চরিত্র হচ্ছে, কোনো মানুষের মধ্যে এমন কতগুলো স্বতন্ত্র গুণাবলির সমাবেশ যা মানুষকে অন্যদের থেকে পৃথক করে। এগুলো এমন কিছু গুণ, যা মানুষকে সঙ্কল্পবদ্ধ হতে ও কঠিন কাজ সম্পাদনে সাহায্য করে। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘সচ্চরিত্র হলো হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, দানশীলতা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়া।’ -মিনহাজুল মুসলিম : ১১৫

সচ্চরিত্র ছাড়া ব্যক্তিগত, সমষ্টিগত, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তির আশা করা যায় না। একমাত্র সৎ স্বভাব দ্বারা সমাজে শান্তি স্থাপন সম্ভব। কেননা, চরিত্রহীন লোক নানাবিধ অন্যায়, ব্যভিচার, অত্যাচার, সংঘাত, কলহ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে, সচ্চরিত্রবান লোক নিজ চরিত্রগুণে সমাজ-চরিত্রকে সংশোধনের চেষ্টা করে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করে। সচ্চরিত্র ও উত্তম আদর্শ ব্যক্তির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ গুণে অলংকৃত ব্যক্তির জন্য রয়েছে জান্নাতের প্রথম শ্রেণির বাড়ির শুভসংবাদ। যেহেতু এই ব্যক্তি এমন এক মহৎ গুণের অধিকারী (সচ্চরিত্র ও উত্তম আদর্শ) যা ছিল নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ গুণ। যেমন কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ -সুরা কলম : ৪

এই মহান চরিত্রই হলো সর্বোৎকৃষ্ট গুণ, যা মুসলমানদের জন্য জগদ্বাসীর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ও পরকালে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম উপায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন যেসব আমল ওজন করা হবে তার মাঝে সবচেয়ে বেশি ওজনদার আমল হবে উত্তম আদর্শ। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির ওপর অসন্তুষ্ট যে অশালীন ও অসৎ চরিত্রবান।’ -সুনানে তিরমিজি : ১৯২৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘আমি কি তোমাদের বলব না, তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি কে? সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই। তিনি (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে তিনিই সর্বোত্তম, যে বয়সে বড় এবং স্বভাব-চরিত্রে ভালো।’ -মিশকাত : ৫১০০

নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সংবাদ দেব না, যার ওপর জাহান্নাম হারাম আর জাহান্নাম যার জন্য হারাম? তারা হচ্ছে- এমন ব্যক্তি যার মেজাজ নরম, কোমল স্বভাব, মানুষের সঙ্গে মিশুক এবং সহজ-সরল।’ -মিশকাত : ৫০৮৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন জিনিস মানুষকে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি বলেন, আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র। আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন জিনিস বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান।’ -সুনানে তিরমিজি : ২০০৪

আগেই বলা হয়েছে, উত্তম চরিত্র মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেবে। এটা নেকির পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে। এছাড়া কোরআন-হাদিসে উত্তম চরিত্র অর্জন ও নৈতিক জীবনযাপনের বহু পুরস্কারের বিবরণ রয়েছে। উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে ইমানে পূর্ণতা আসে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইমানের হিসাবে সর্বোত্তম মুমিন সেই যে চরিত্রের দিক দিয়ে সর্বোত্তম।’ -মুসনাদে আহমদ : ৭৪০২

অন্য হাদিসে উত্তম চরিত্রকে উত্তম ইবাদতের সমতুল্য বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উত্তম চরিত্র অর্জনের জন্য মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, উত্তম চরিত্র দ্বারা মুমিন নিয়মিত রোজা রাখা ও গভীর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার মর্যাদা অর্জন করবে। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিন উত্তম চরিত্রের দ্বারা স্থায়ী রোজাদার ও তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মর্যাদা অর্জন করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০

উত্তম চরিত্র দ্বারা পরকালে সর্বোত্তম জান্নাতে ঘর লাভের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) চরিত্রবানদের সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘যে তার চরিত্র সুন্দর করবে আমি সর্বোত্তম জান্নাতে তার জন্য ঘরের জামিনদার হব।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৪৮০২

উপরোক্ত বিষয়াবলি ছাড়াও উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে পরকালে নবী কারিম (সা.)-এর নৈকট্য লাভের কথা বলা হয়েছে। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিনে তোমাদের মধ্যে আমার বেশি প্রিয় এবং আমার মজলিসের বেশি নিকটবর্তী তারাই থাকবে, যারা তোমাদের ভেতর সর্বোত্তম চরিত্রবান।’ -সুনানে তিরমিজি: ২০১৮

পবিত্র কোরআন-হাদিসে উত্তম চরিত্রের কিছু দিক বর্ণিত হয়েছে। যেমন দয়াময় আল্লাহ বলেছেন, ‘…যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে; যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৩৩-১৩৪

বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কেবল সচ্ছল অবস্থায় নয়, বরং অসচ্ছলতার সময় এবং প্রত্যেক অবস্থায় ও সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর পথে ব্যয় করা। ক্রোধের কারণে উত্তেজিত হলেও নিজেকে সংবরণ করে নেওয়া এবং কেউ অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উত্তম চরিত্রের লক্ষণ।

লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক

muftianaet@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION