বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
শুক্রবার ছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার মহাপ্রয়াণের দ্বিতীয় বার্ষিকী। প্রিয় তারকার স্মরণে কাল দোহার কনমেবল কর্নারে হয়েছে নানা আয়োজন। যেখানে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কিংবদন্তির ’৮৬-র বিশ্বকাপ হাতে মূর্তি উন্মোচন করেন। হাজারো ভক্ত স্মরণ করেন প্রিয় তারকাকে। মেসিদের ভাবনায়ও ছিলেন বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের ’৮৬-র সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন নিয়ে কাতারে আসা আর্জেন্টিনাকে প্রথম ম্যাচেই বড় ধাক্কা দিয়েছে সৌদি আরব। সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে অভিযানে আজ আর্জেন্টিনার দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়টা মেসিরা চান ম্যারাডোনাকে উৎসর্গ করতে।
কাল জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে দিতে হয়েছে অনেক প্রশ্নের জবাব। শোনাতে হয়েছে আশার বাণী। করতে হয়েছে মোড় ঘোরানোর প্রতিশ্রুতি। তাতে কি আর স্বস্তি ফিরে সমর্থকদের মনে? পুঁচকে সৌদি কাছে হারের পর কোনো কথাতেই আর আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না। সমর্থকরা মাঠে দেখতে চায় মুখের কথার বাস্তব প্রতিফলন। আজ সেটা করতে না হলেই তো সব শেষ।
‘মেক্সিকোকে হারাও, নয় তো বিদায় হও’ এরকম সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে অগ্নিপরীক্ষা দিতে নামবে আলবিসেলেস্তেরা। এক হারে যেমন সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে, একটা জয়ও পারে সব ঝড় থামিয়ে দলটিকে কক্ষে ফেরাতে। সমর্থকদের এই দলটার ওপরে ছিল অগাধ বিশ্বাস। এরাই তো ব্রাজিলকে হারিয়ে দেশকে ২৮ বছর পর এনে দিয়েছিল কোপা আমেরিকা শিরোপা। এরাই স্বপ্নের ঘুড়িটাকে দূর আকাশে পৌঁছে দিয়েছিল টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। তাহলে সৌদির সামনে সেই উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস কোথায় হারাল? কেনইবা হারাল?
স্কালোনি হারের ময়নাতদন্ত যতটুকুই করেছেন, তা প্রকাশ্যে আনেননি। সৌদির বিপক্ষে ঘর অরক্ষিত রেখে বারবার আক্রমণে ওঠার বড় শাস্তি পেতে হয়েছিল। স্কালোনির রক্ষণ কৌশল বিফলে গেছে। মেক্সিকোর বিপক্ষে তাই একাদশে পরিবর্তন অত্যাবশ্যকীয়। তবে স্কালোনি খেলার ধরনে পরিবর্তনের পক্ষে নন। যে কৌশলে দলটি এতদিন সাফল্য পেয়েছে, সেটি এক হারেই বদলে ফেলার লোক নন তিনি। তবে জানেন, মেক্সিকো তাদের কাজটা কঠিন করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। মেক্সিকোর কোচ গেরার্দো মার্তিনো এক সময় ছিলেন আর্জেন্টিনার দায়িত্বে। মেসি তার অধীনে বার্সেলোনাতেও খেলেছেন। এই আর্জেন্টাইন আজ নিজ দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু। ডাগ আউটে তাই পূর্বসূরিকে পেছনে ফেলার একটা তাড়নাও থাকবে স্কালোনির।
কোপা আমেরিকার সুবাদে দু’দলের দেখা-সাক্ষাতের ঘটনা কম নয়। এ পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ২৩টি। যার ১৫টিই জিতেছে আর্জেন্টিনা। দুটি মেক্সিকো। আর বাকি ছয় ম্যাচ ড্র। তবে শেষ ১০ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি মেক্সিকো। আর বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনই না। ১৯৩০ প্রথম বিশ্বকাপে ৬-৩, ২০০৬ বিশ্বকাপে ২-১ ও ২০১০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-১ ব্যবধানে। তবে সৌদি দুঃস্বপ্ন সামনে চলে আসলে এসব পরিসংখ্যান মিথ্যে হয়ে যায় নিমেষেই। স্কালোনি চান মেক্সিকোকে হারিয়ে সৌদি দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে দিতে, ‘সেদিনটা ছিল বড় কষ্টের। তবে পরের দিন যখন ঘুম ভাঙল, তখন থেকেই পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সবাইকে বুঝিয়েছি, একটা বাজে দিন আসতেই পারে। আমরা ৩০-এর ওপরে ম্যাচে অপরাজিত ছিলাম। সেই রেকর্ড এখন আর নেই। একটু খারাপ লাগছে রেকর্ডটা ভেঙেছে বিশ্বকাপে। তবে এটাও ভালো যে আমরা প্রথম ম্যাচটা হেরেছি, যা আমাদের সতর্ক হতে বাধ্য করেছে। নিজেদের ভাগ্য আমরা নিজেরাই গড়ে নিতে পারি। আমরা আমাদের দায়িত্বটা জানি। ছেলেরা পরের দুই ম্যাচ জিততে সেরাটা উজাড় করে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে একাধিক প্রশ্ন হয়েছে মেসিকে নিয়ে। কেমন আছেন খুদে জাদুকর? খেলবেন তো? কানাঘুষা ছিল বৃহস্পতিবার মেসি দলের সঙ্গে পুরোটা সময় অনুশীলন করেননি। পুরনো চোট মাথাচাড়া দেওয়ায় তার খেলা নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছিল। এসব উড়িয়ে দিয়ে আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, ‘মেসিকে নিয়ে কোত্থেকে যে এসব বানোয়াট তথ্য পায় মানুষ। সে অনেক ভালো আছে। সেটা শারীরিক ও মানসিক দুই দিক থেকেই।’
মেক্সিকোর বিপক্ষে আর্জেন্টিনা একাদশ কেমন হবে? স্কালোনি দিয়েছেন পরিবর্তনের ইঙ্গিত, ‘হয়তো একাদশে কিছু পরিবর্তন ঘটবে। তবে পরিষ্কার করে বলতে চাই আমাদের খেলার ধরনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বিশ্বাস করি যারাই সুযোগ পাবে তারা দারুণ ফুটবল খেলবে। তবে পরিবর্তনগুলো সৌদির ম্যাচ দেখে হচ্ছে না। পরিবর্তন আসবে প্রতিপক্ষ বদলাচ্ছে বলেই।’
না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো কিংবদন্তিকে খুশি করতে কাল মাঠে নামতে চান মার্তিনেজ। স্মৃতিতে ম্যারাডোনাকে তুলে এনে আজ দোহায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা তাকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করেছি। আমাদের আর্জেন্টাইনদের জন্য তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ উপায়েই স্মরণ করি। অবশ্যই তার চলে যাওয়ার দিনটা প্রত্যেকের জন্যই দুঃখের দিন। এবং আশা করি আগামীকাল আমরা তাকে খুশি করতে পারব।’
আর্জেন্টিনা কোচ বিশ্বাস করেন, মেক্সিকোও তাদের খেলায় কোনো পরিবর্তন আনবে না। কারণ দিন শেষে তাদেরও দরকার পয়েন্ট। নিজেদের ঘর সামলানোর পাশাপাশি মেসিদের গোলও করতে হবে। আর এই কাজটা কঠিন করতে আছেন গিলের্মো ওচোয়া। অভিজ্ঞ এই কিপার পোল্যান্ডকে জিততে দেননি বার্সা তারকা রবার্ট লেভানডফস্কির পেনাল্টি ঠেকিয়ে। ওচোয়া ছাড়া দলটিতে তারকার সম্ভার নেই। তবে দল হিসেবে বড্ড একতাবদ্ধ।
আরও একটা অতীত পরিসংখ্যান আশা দেখাবে আর্জেন্টিনাকে। ইউরোপের বাইরের দলগুলোর কাছে বিশ্বকাপ মঞ্চে কখনই পরপর দুই ম্যাচ হারেনি তারা। কঠিন বর্তমানকে অতীত পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলাতে পারলে আর্জেন্টিনা শিবিরে ফিরবে স্বস্তি। নইলে তৃতীয় বিশ্বকাপের অপেক্ষাটা দীর্ঘায়িত হবে। আর মেসিকে ট্র্যাজেডির নায়ক হয়েই বিদায় নিতে হবে।
ভয়েস/আআ