বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
পুরনো ৯৭৪টি কন্টেইনার ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। সেখানেই কাল সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ফেভারিট ব্রাজিল। ৪৪ হাজার আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়ামের বড় অংশই দখলে ছিল ব্রাজিল সমর্থকদের। ম্যাচের অনেক আগে থেকেই আনাগোনা শুরু হয় ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী হতে আসা ব্রাজিল সমর্থকদের। প্রথম ম্যাচে সার্বিয়াকে রিচার্লিসনের জোড়ায় হারানোর পর থেকেই সেলেসাও সমর্থকদের চোখে-মুখে খেলে যাচ্ছে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস। এই ব্রাজিল অবসান ঘটাবে দু’দশকের শিরোপা অপেক্ষা। এমনই আস্থা তিতের দলের ওপর। তবে একজনে আস্থাটা নড়ে গেছে খোদ ব্রাজিলিয়ানদেরই। তিনি দলের সবচেয়ে বড় তারকা নেইমার। সার্বিয়া ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পেয়ে গ্রুপ পর্বে আর খেলা হচ্ছে না তার। বিশ্বকাপ এলেই চোটের সঙ্গে সখ্য গড়েন পিএসজি তারকা। এটা চলছে সেই ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকেই। চোটের কারণে মারাকানায় জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। মেশিন জার্মানি সেই ম্যাচে ব্রাজিলকে দেয় ৭-১ হারের লজ্জা। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপটাও নেইমার খেলেছেন চোট নিয়ে। এবারও ঘটল একই ঘটনা। তাই ব্রাজিলের কারও কারও কাছে রীতিমতো শত্রুতে পরিণত হয়েছেন ব্রাজিলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ গোল করা নেইমার। তবে দলসহ অনেকেই নেইমারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দিচ্ছেন সাহস। তাদের বিশ্বাস, নেইমার ফিরবেন বীরের মতো।
সার্বিয়ার বিপক্ষে নেইমারকে ৯ বার ফাউল করা হয়েছিল। বিশ্বকাপ অভিযানে তিনি এসেছিলেনও বিশ্বের সবচেয়ে ফাউলপ্রবণ ফরোয়ার্ডের রেকর্ড সঙ্গী করে। নেইমারের শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে গতকালের ম্যাচ দেখতে আসা ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাওলো লুকাস বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওকে দেখে আসছি সবসময় ফাউলের শিকার হতে। এটা কেবল বল পায়ে রাখার জন্য হয় না। ওর আসলে ফাউল এড়িয়ে খেলার শারীরিক সামর্থ্যই নেই। বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে ও সবসময় চোটের অজুহাতে ম্যাচ মিস করে; যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ নেইমারের ভক্ত হয়েও এবার প্রিয় তারকার ইনজুরিতে পড়াটা ভালো চোখে দেখছেন না সাও পাওলোর ফেরনান্দা ফ্রান্সিসকা। পেশায় শিক্ষক এই নারী বলেন, ‘বিশ্বকাপে নেইমারের ম্যাজিক দেখব বলেই এত পয়সা খরচ করে এসেছি। অথচ সে প্রথম ম্যাচেই চোটকে কাছে টেনে নিল। এরকম ও নিয়মিতই করে। এভাবে ও কখনই বিশ্বসেরা হতে পারবে না।’ গ্যাব্রিয়েল গ্যাসপারের কাছে নেইমার নন, ব্রাজিলকে শিরোপা এনে দিতে পারেন কেবল রিচার্লিসন ‘এই দলে নেইমারের চেয়ে রিচার্লিসনের গুরুত্ব অনেক বেশি। নেইমার অভিনেতা। আর রিচার্লিসন ব্রাজিলের আগামীর আশার বাতিঘর।’
নেইমারের পাশে থাকা ভক্তের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। অনেকের মতে, নেইমারকে নিয়ে বিতর্কটা উসকে দিচ্ছে আর্জেন্টাইন কিছু সমর্থক। হোসে মার্কোসের বিশ্বাস, নেইমার ফিরবেন রাজার মতোই ‘একজন ভালো খেলোয়াড়কে সামলে রাখার দায়িত্ব ফিফার। সার্বিয়া ম্যাচে ওকে বড় নৃশংসভাবে ফাউল করা হয়েছে। তারপরও ও দলের স্বার্থেই মাঠে ছিল পুরোটা সময়। আমি মনে করি ওকে যারা হিংসে করে, যারা ব্রাজিলের ভালো চায় না, তারাই এসব বাজে কথা ছড়াচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নেইমার ফিরে আসবেন ঠিক ব্যাটম্যানের মতো।’ সতীর্থ ও কোচদের অবশ্যই পাশেই পাচ্ছেন নেইমার। দূর থেকে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেক তারকাও। যাদের অন্যতম ব্রাজিলকে ২০০২ বিশ্বকাপ জেতানো স্ট্রাইকার রোনালদো। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন রোনালদো নেইমারের চোটে কিছু ব্রাজিলিয়ান ভক্তকে নগ্ন উল্লাস করতে দেখে ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন প্রতিক্রিয়া ‘তুমি যেভাবে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছো, যে পর্যায়ে পৌঁছে গেছো, আমার বিশ্বাস সারা বিশ্বের অনেক মানুষ তোমাকে ভালোবাসে ও তোমার অবদানকে স্মরণ করে।’ তিনি আরও লিখেন ‘তোমার সাফল্য, তোমার শীর্ষে ওঠাটা হয়তো অনেকেই সহ্য করতে পারে না, তোমাকে ঈর্ষা করে। তোমার চোটে যারা উল্লাস করে, তাদের দেখে মনে হয় আমরা কি সত্যিই অধিনায়ক সমাজে বাস করি? এটা কেমন জগৎ? আগামী প্রজন্মের কাছে কেমন বার্তা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি? তাই আমি এখানে সেই সমাজের বিরোধিতা করে বলছি, তুমি আরও শক্তি নিয়ে ফিরে আসো, এই বিরতি যেন তোমার গোলের, জয়ের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দেয়।’
ব্রাজিলের হয়ে আগের দুই বিশ্বকাপে ছয় গোল করেছেন নেইমার। এবার দোহায় এসে গোল না পেলেও নিজের সহজাত কারুকাজে নজর কেড়েছিলেন। তবে গোড়ালির চোট তাওক ছিটকে দিয়েছে। এজন্য আক্ষেপ করছেন অনেকেই।
ভয়েস/আআ