মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আজ শুভ বড়দিন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দেশের সব গির্জা সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন ও ফুল দিয়ে। রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালসহ তারকা হোটেলগুলোকেও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। শিশুদের আনন্দ ও তাদের উপহার দেওয়ার জন্য ঝুলি ভর্তি উপহার নিয়ে থাকবেন সান্তা ক্লজ। এমন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) ঘিরে। আজ ২৫ ডিসেম্বর শুভ বড়দিন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন।

আজকের এই দিনে বেথলেহেমে কুমারী মাতা মেরির গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার, মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে মহামতি যিশুর আগমন ঘটে পৃথিবীতে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশে ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বড়দিন উদযাপন করবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাগতিক সুখের পরিবর্তে যিশুখ্রিস্ট ত্যাগ, সংযম ও দানের মাধ্যমে পারমার্থিক সুখ অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য স্থাপনসহ অশান্ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যিশুখ্রিস্টের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণীয়।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আবহমানকাল থেকে এদেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, সব শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে তার সরকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।’

বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। উৎসবের এই দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নানা অনুষ্ঠান। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র।

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, সারা দেশে ছোট-বড় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো গির্জা রয়েছে। ঢাকায় আছে ৮৪টি। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা (পবিত্র জপমালার গির্জা), রমনা ক্যাথেড্রাল গির্জাসহ দেশের অন্যান্য গির্জায় সকালে এবং নির্ধারিত সময়ে বিশেষ প্রার্থনা হবে। অনুষ্ঠান নির্বিঘœ করতে ইতিমধ্যে গির্জাগুলোতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনটি উপলক্ষে খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে কেক, পিঠাসহ নানা ধরনের বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকবে।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রভু যিশু আলোর দিশারী। মানুষের শান্তি কল্যাণ ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত করতেই পৃথিবীতে তার আবির্ভাব। তাই প্রভু যিশুর জন্মদিনটি আমাদের কাছে একটি বড়দিন। আমরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’

আমাদের কবি নজরুল সরকারি কলেজ প্রতিনিধি জানান, খ্রিস্টানদের বড়দিন উপলক্ষে পুরান ঢাকার প্রাচীন গির্জাগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। সেন্ট টমাস ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, হলিক্রস চার্চ, আর্মেনিয়ান চার্চ ও ঢাকা ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জার পাশাপাশি টানানো হয়েছে বড়দিনের স্টার এবং সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস-ট্রি।

সদরঘাটের ঢাকা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ফাদার জোসেফ বাড়ৈ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দিন উৎসবমুখর পরিবেশে এই দিনটি পালন করা হবে। বড়দিন সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করি।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মার্ক মিলন বলেন, ‘বড়দিন আমাদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র দিন। যিশুখ্রিস্ট আমাদের পাপ ক্ষমা করতেই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই এই দিনে আমরা একসঙ্গে যিশুর প্রশংসা, সংগীত, বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা করে তার আশীর্বাদ পেতে চেষ্টা করি।’

বড়দিনে নিরাপত্তা হুমকি নেই : আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বড়দিন উপলক্ষে হামলার কোনো হুমকি নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কাকরাইল চার্চে বড়দিন (ক্রিসমাস ডে) উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইজিপি।

তিনি বলেন, আজ থেকে বড়দিনের উৎসব শুরু হয়েছে। সারা দেশে সাদাপোশাকে ও ইউনিফর্মে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ।

বড়দিন উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। আপনারা জানেন হলি আর্টিজান ঘটনার পরে দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ঘটনা নেই।’

দেশবাসীকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উৎসব আজ থেকে শুরু হয়েছে। এই উৎসব উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইউনিফর্ম ও সাদাপোশাকে নিয়জিত রয়েছেন। সারা দেশে বড়দিনের আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রতিটি ভেন্যু ও এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছি। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা উৎসবমুখর পরিবেশে আপনাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।’

দুই জঙ্গি পলাতক আছে, এ কারণে আপনারা কোনো শঙ্কায় আছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘কিছুদিন আগে দুই জঙ্গি পালিয়েছে। তারা কেন পালিয়েছে, সেটা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি জানা যাবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের কাছে এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। যেখানে, যে অবস্থায়, যে পরিস্থিতিতে, যেমন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা সেটাই নিচ্ছি।’

দুই জঙ্গির পলায়ন, নতুন জঙ্গির উত্থান ও রাজনৈতিক উত্তাপ এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। একটা ঘটনা ঘটেছে (দুই জঙ্গি পালানো), সে জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, আমরা সেটা নিচ্ছি। এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’

বড়দিনের নিরাপত্তায় র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স :বড়দিন উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে র‌্যাব। যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স, হেলিকপ্টার, ডগ স্কোয়াড ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।

গতকাল শনিবার র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রবিবার বড়দিনে সারা বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দঘন পরিবেশে উৎসব পালন করবেন। এ উপলক্ষে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্তসংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত, চার্চগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের স্ট্রাইকিং রিজার্ভ, ফুট ও মোবাইল প্যাট্রল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার, চেকপোস্ট, সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি ঠেকাতে রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাবের চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হবে। অনলাইনে মিথ্যা অপপ্রচার ও গুজব ঠেকাতে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিমের সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION