মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আবারও নথি ফাঁস: ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশ সরকারে ব্যাপক অন্তর্দ্বন্দ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের অতি গোপন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যেই নতুন করে আরও ২৭ পৃষ্ঠা নথি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব নথিও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার। নতুন প্রকাশ্যে আসা নথিততে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক ও গভীর অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে উঠে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস নথিগুলো পর্যালোচনা করে এমন দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ৫৩ পৃষ্ঠার মধ্যে এসব নথি ছিল না। নতুন নথিগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধ নিহত ও আহতদের সংখ্যা নিয়ে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে দেশটির সরকারের দ্বন্দ্বের চিত্র উঠে এসেছে। এতে যুদ্ধে রুশ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গোপন করার জন্য সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নতুন নথিগুলোর রুশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুপ্রবেশের আরও বিস্তৃত চিত্র পাওয়া গেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অনুপ্রবেশের গভীরতা পূর্বের অনুমানের চেয়ে বেশি।

এক নথিতে মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ইউক্রেনে রুশ হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করার জন্য অভিযুক্ত করেছে দেশটির প্রধান অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)। রুশ গোয়েন্দা সংস্থাটির অভিযোগ, সামরিক বাহিনীর কাঠামোতে ঊর্ধ্বতন স্তরে খবর পাঠানোর দুর্বলতা ও কর্মকর্তাদের ক্রমাগত অনাগ্রহের বিষয়টি উঠে এসেছে।

নথিটি ২৮ ফেব্রুয়ারি নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে যুদ্ধের নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য রয়েছে। ইলেক্ট্রনিক আঁড়িপাতার মাধ্যমে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত গোয়েন্দা নথির প্রতিটি তথ্য সংগ্রহের নতুন পদ্ধতি ও উপায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এসব নথিতে মানব উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ খুব কম। ফলে ধারণা করা হচ্ছে ফাঁসকারী ব্যক্তি আরও উচ্চতর গোপন নথির প্রবেশগম্যতা রয়েছে। ফাঁস হওয়া নথিগুলোর বেশিরভাগ যোগাযোগে আঁড়িপাতার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, নথিগুলো একত্রে বিবেচনায় নিয়ে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ১৩ মাসের বেশি সময় ধরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেসব কারণে ইউক্রেনে সামরিক বিজয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন সেগুলোর ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।

এর মধ্যে রয়েছে এফএসবি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়সহ যুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জন্য দায়ী রুশ সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অভিযোগের আঙুল তোলা। ফাঁস হওয়া তথ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হতাহত নিয়ে অনুসন্ধানের বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলা হয়নি। কিন্তু এতে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছে এফএসবি।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এফএসবি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের হতাহতের সংখ্যায় রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ড, ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনী বা চেচনিয়ার দক্ষিণ রাশিয়ার প্রজাতন্ত্রের নেতা রমজান কাদিরভের যোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ইউক্রেনে ক্রেমলিন কর্তৃক মোতায়েন করা বিভিন্ন বাহিনী কখনও কখনও পরস্পরবিরোধী উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। এতে রাশিয়ার সামরিক প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

নথিতে বলা হয়েছে, এফএসবির হিসাবে যুদ্ধে রাশিয়ার হতাহতের সংখ্যা এক লাখ দশ হাজারের কাছাকাছি। তবে এতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হতাহতের সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হতাহতের সংখ্যা জানিয়েছিলেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। তখন তিনি বলেছিলেন যুদ্ধ শুরুর পর ৫ হাজার ৯৩৭ জন রুশ সেনা নিহত হয়েছে।

নথিতে হতাহতের পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়নি যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের মধ্যে প্রচার করছে। শেষবার যখন মন্ত্রণালয় প্রকাশ্যে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করেছিল সেপ্টেম্বরে, যখন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই কে শোইগু বলেছিলেন যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে 5,937 রাশিয়ান সেনা নিহত হয়েছে।

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধে ২ লাখ রুশ সেনা হতাহত বলে অনুমানের কথা জানিয়েছিলেন। অপর একটি ফাঁস হওয়া নথিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ার হতাহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ থেকে ২ লাখ ২৩ হাজারের মধ্যে বলে উল্লেখ রয়েছে। বিপরীতে ইউক্রেনীয় হতাহতের সংখ্যা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ থেকে ১ লাখ ৩১ হাজার হতে পারে। এর মধ্যে লড়াইয়ে নিহত ইউক্রেনীয় সেনার সংখ্যা ১৭ হাজার ৫০০।

নতুন নথিতে সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন ও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরোধ সম্পর্কে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। প্রিগোজিন প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, রুশ সেনাবাহিনী তাদেরকে গোলাবারুদ সরবরাহ করছে না। নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুতিন এই বিরোধ নিরসনের জন্য পুতিন ও শোইগুকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে প্রিগোজিন অভিযোগ আবারও তুলেছেন এবং শোইগু উত্তেজিত হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নতুন নথিগুলো ছবি হিসেবে ফাঁস হয়েছে। এর কয়েকটি পৃষ্ঠা নেই। এসব নথি মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের কার্যালয় ও পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ডিসকর্ড সার্ভারের একটি থেকে গেন্টাগনের নথি পাওয়া গিয়েছিল। এগুলোও ডিসকর্ডের আরেকটি সার্ভারে পাওয়া গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছিলেন, নথিগুলো খাঁটি। তবে কিছু পরিবর্তন ও কিছু ভুল থাকতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছিলেন।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION