শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। যারা স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফেরত যেতে আগ্রহী এমন রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হবে। প্রত্যাবাসন হবে সম্পুর্ন স্বেচ্ছায় কাউকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্পর্কে জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রত্যাবাসন ইস্যুর সকল বিষয়েই জাতিসংঘ সহ সকল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক জানান রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের টেকসই এবং ভলান্টারি প্রত্যাবাসন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মিয়ানমার উইং মাইনুল কবির এবং শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে যাওয়ার পর বিকেলে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে ব্রিফিংয়ে অংশ নেন তারা। তবে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল গণমাধ্যমে কোন কথা বলেনি।
ব্রিফিংয়ে শরনার্থী কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনা কালে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব ভিটে মাটি ফেরত সহ তাদের বেশ কিছু তাদের চিরাচরিত দাবি জানিয়েছে। আলোচনা কালে রোহিঙ্গারা রাখাইনে কোন ক্যাম্পে নয় নিজেদের ভিটে মাটিতেই ফেরত যেতে চান বলে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে উত্থাপন করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি দিয়ে ১৪ সদস্যর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ আসেন। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের রাখাইন ষ্টেটের সোস্যাল ওয়েলফেয়ার মিনিস্টার অং মাইউ।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান প্রত্যাবাসনকে সামনে রেখে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের দুজন সদস্যও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন। তারা টেকনাফে ২৬ নাম্বার ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এবার ২৮০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি মূলত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মূল আবাস মিয়ানমারের রাখাইনের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং স্বদেশে ফেরত গেলে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিষয়ের দীর্ঘ বর্ননা দেন।
রোহিঙ্গাদের সাথে আলোচনাকালে নাগরিকত্ব শিক্ষা চিকিৎসা এবং অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। এসময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের দাবি পুরন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করেন শরনার্থী কমিশনার। এসময় রোহিঙ্গাদের মধ্যে নেগেটিভ পজিটিভ দুইধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে শরনার্থী কমিশনার বলেন স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের তালিকা করেই রাখাইনে প্রত্যাবাশন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এর আগে গত ৫ মে রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইনে মংডু শহরের আশেপাশে পরিদর্শন করে এসেছেন। পরিদর্শন করে আসা রোহিঙ্গা নেতারা তখন জানিয়েছিলেন রাখাইনে এখনো প্রত্যাবাশনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা এসেছেন। অনেক রোহিঙ্গা দাবি তুলছেন, নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসনের। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবাসন চাই।
এর আগে, ১৫ মার্চ মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। সে সময় প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার ফিরে যায় দলটি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের রাখাইনে ফেরত নিতে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষর করলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। এই কমিটি দুটি সভা করলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফেরত যাননি।
ভয়েস/আআ