সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ভারত ডলারে নয়, রাশিয়ান তেলের দাম মেটাচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলের দাম আংশিকভাবে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দেশটির সরকারি এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়ার কিছু ব্যাংক ডলারে তেলের মূল্য নিতে চাইছে না বলে ভারতের কিছু পরিশোধনকারী কোম্পানি ইউয়ানের মতো অন্যান্য মুদ্রায় তেলের দাম পরিশোধ করছে। শুধু বেসরকারি পরিশোধনাগারগুলোই নয়, জুন মাসে প্রথম রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ইউয়ানে তেলের মূল্য পরিশোধ করেছে। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য দিয়েছে।

আরও দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারতের তিনটি বেসরকারি পরিশোধনাগারের মধ্যে দুটি পরিশোধনাগার আংশিকভাবে রাশিয়ার তেলের মূল্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধ করছে।

তবে কোনো সূত্রই নাম প্রকাশ করেননি। এ ছাড়া বেসরকারি পরিশোধনাগার, অর্থাৎ রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড, নারায়া এনার্জি ও মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড আর রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি।

এ বাস্তবতায় রয়টার্সের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি যে ঠিক কী পরিমাণ তেলের মূল্য ইউয়ানে পরিশোধ করা হচ্ছে, যদিও ইন্ডিয়ান অয়েল বেশ কয়েক কার্গো তেলের দাম ইউয়ানে পরিশোধ করেছে বলে তারা জানতে পেরেছে।

রাশিয়ার মতো চীনও নিজ মুদ্রা ইউয়ানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। বিশেষ করে চীনের ব্যাংকগুলো রাশিয়ার তেল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইউয়ানের ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

জাহাজ পরিবহনের তথ্য সংগ্রহ করে রয়টার্স জানিয়েছে, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারত দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ও সরাসরি রাশিয়ার কোম্পানির কাছ থেকে রুশ অপরিশোধিত তেল কিনছে। রাশিয়ার যেসব কোম্পানি তেল বিক্রি করছে, তাদের মধ্যে রয়েছে রসনেফট, লুকঅয়েল, গাজপ্রম ইত্যাদি।

এদিকে ইউয়ানের পাশাপাশি ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা দিরহামেও আংশিকভাবে রাশিয়ার তেলের দাম পরিশোধ করছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

ভারতের সরকারি এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে ডলারে মূল্য পরিশোধ করা, কিন্তু বিক্রেতারা অনুরোধ করলে অনেক ক্ষেত্রে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো ইউয়ান ও দিরহামে মূল্য পরিশোধ করে।’ তবে কোন পরিশোধনাগারগুলো ইউয়ান ও দিরহামে মূল্য পরিশোধ করছে, তা বলেননি তিনি।

এর আগে ভারতের তেল ও অর্থ মন্ত্রণালয় তেলের দাম রুপিতে পরিশোধের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেনদরবার করলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। রয়টার্স এই দুই মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলেও তারা মন্তব্য করেনি।

মার্চ মাসে রয়টার্সের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ভারত সরকার ব্যাংক ও কোম্পানিগুলোকে ইউয়ানে লেনদেন পরিহার করার আহ্বান জানায়। তবে এখন যে ইউয়ানে রাশিয়ার তেলের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে, তা ঠিক ভারত সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষণ কি না, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে মে মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি রেকর্ড পর্যায়ে উঠেছে। ফলে ভারতের আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের ৪০ শতাংশই এখন আসছে রাশিয়া থেকে, এক বছর আগেই যা ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে সৌদি আরব ও ইরাক থেকে ভারতের তেল আমদানি কমেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর পশ্চিমারা রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু সস্তায় তেল পাওয়ার কারণে ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি শুরু করে। বস্তুত, ভারত এখন রাশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করছে।

রাশিয়াও ডলারের বদলে রুবল ও ইউয়ানে তেলের দাম পরিশোধ করতে আমদানিকারক দেশগুলোকে চাপ দেয়। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া ডলার ও ইউরোতে লেনদেন করতে পারছে না। এতে ডিডলারাইজেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।

নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মানে না ভারত। অন্যদিকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন না-ও হতে পারে। তবে তা সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যাংকগুলো এ ধরনের আমদানির মূল্যছাড়ের ক্ষেত্রে সতর্ক।

মে মাসে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের আমদানি করা এক কার্গো তেলের দাম ডলারে পরিশোধ করতে রাজি হয়নি স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। সেই তেল কেনা হয়েছিল রসনেফটের কাছ থেকে।

সেই কার্গো যে ট্যাংকারে আনা হয়েছিল, তার নাম এনএস বোরা। রাশিয়ার বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় জাহাজ কোম্পানি সভকোমফ্লটের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত ফেব্রুয়ারিতে এই সভকোমফ্লটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, আর যুক্তরাজ্য দেয় মে মাসে।

ফলে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন বেসরকারি ব্যাংক আইসিআইসিআইয়ের মাধ্যমে ইউয়ান মুদ্রায় ব্যাংক অব চায়নাকে সেই কার্গোর মূল্য পরিশোধ করে বলে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ভারতের আরেক বেসরকারি পরিশোধনাগারও এ পদ্ধতিতে রাশিয়ার তেলের মূল্য পরিশোধ করছে।

তখন থেকে রসনেফটের তেলের মূল্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে এই পদ্ধতিতে পরিশোধ করে আসছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন।

বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই সূত্র রয়টার্সকে আরও জানায়, ‘ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন বিপদে পড়লেই ইউয়ানে মূল্য পরিশোধের জন্য চাপাচাপি করে।’ সেই সঙ্গে তারা রসনেফটকে অনুরোধ করেছে, তেল যেন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজে না পাঠানো হয়।

তবে রসনেফট এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। এ ছাড়া ভারতের আরেক রাষ্ট্রীয় পরিশোধনাগার ভারত পেট্রোলিয়াম ইউয়ানে রাশিয়ার তেলের মূল্য পরিশোধের পথ খুঁজছে বলে আরেক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

তবে বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো পক্ষই এ ব্যাপারে মন্তব্য করেনি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION