শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বিশ্বকাপের রঙে রঙিন বাংলাদেশ

খেলাধুলা ডেস্ক:
পূর্বের সূর্য যখন পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছিল, তখন ধর্মশালার সবুজ গালিচা সোনালি আভায় সেজেছিল। গোধূলির অপার্থিব সৌন্দর্য পাহাড়ের বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বসেছিল রঙের মেলা। ধর্মশালার আকাশে থাকা মেঘের রঙ ছিল একটিই বিশ^কাপ। স্টেডিয়ামের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা হিমালয়ের বরফচূড়াও যেন দশ দলের মহারণের অপেক্ষায় তখন।

রাত পোহালেই মুখোমুখি হুট করে আগুনে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। সবশেষ চার ম্যাচে দুই জয় ভাগাভাগি করায় এই ম্যাচ ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। তবে সেই উন্মাদনা সম্ভবত কেবল দুই দলের দেশে থাকা সমর্থক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর সফরে আসা সাংবাদিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভিসা জটিলতায় এখনো অনেক সমর্থকই ধর্মশালায় পৌঁছাতে পারেননি।

গ্যালারিতে তেমন ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ স্লোগানেও মুখরিত হওয়ার কথা নয়। তবে পেশাগত দায়িত্বপালনে ধর্মশালায় আজ জনা ত্রিশেক বাংলাদেশি সাংবাদিক থাকবেন। সেখানে আফগানিস্তানের একজনও গতকাল পর্যন্ত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নেননি!

ম্যাচের আগের দিন সকাল ও বিকেলে অনুশীলন সেরেছে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। দুই শিবিরে দুই রকম চিত্রের দেখা মিলল। বাংলাদেশ শিবির অনেকটাই চনমনে। খুব জোর দিয়ে অনুশীলন করেননি তারা। আফগানিস্তান অবশ্য ম্যাচের আগে জোর খাটুনি খেটেছে। স্পিনার থেকে পেসার, টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার সব ব্যাটারই প্রস্তুতি নিয়েছেন নিবিড়ভাবে। পেসারদের কাল বিশ্রাম দিয়ে অনুশীলন পর্ব সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাদের সময় কেটেছে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতিতে।

দৃশ্যে ছিলেন বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটাররাও। গত কয়েক দিনের ঘটনা তাদের আরও বেশি আলোয় নিয়ে এসেছে। নিয়মিত ওপেনার লিটনের সঙ্গে পাশাপাশি নেটে ঘাম ঝরিয়েছেন প্রস্তুতি ম্যাচে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করা তরুণ তানজিদ। প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতে তার সঙ্গী ৪৫ আর ৮৮ রান করার স্মৃতি। যুব বিশ^কাপজয়ী ক্রিকেটার ওই দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে পাস মার্ক পেয়ে ম্যাচ খেলার জন্য এগিয়ে থাকলেও তাকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে টিম কম্বিনেশনের দোহাইয়ে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষবারের মুখোমুখিতে মেহেদী হাসান মিরাজই ওপেনার ছিলেন। তিনি ছুঁয়ে ফেলেছিলেন তিন অঙ্কও। তাকে তাই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই খুব একটা। নতুন বল খেলায় এমনিতে নিয়মিত নন মিরাজ। গতকাল শুরুতে থ্রোয়ারদের খেলার পর নেটে স্পিনার ও পেসারদের সামনে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন ডানহাতি ব্যাটার। তাকে তাই ওপেনিংয়ে দেখাটাও অস্বাভাবিক কিছু হবে না। প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৭ ও ৭৪ রানের ইনিংসে ভরসা রাখার বার্তাটাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।

দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং, ফিল্ডিং সব অনুশীলনে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তবে প্রথম ম্যাচে একাদশে সুযোগ হবে কি না, তা নিয়েও অনেক জল্পনা। ব্যাটিং ধসের ভাবনায় যদি বাংলাদেশ বাড়তি ব্যাটার নিয়ে খেলে তাহলে মাহমুদউল্লাহকে একাদশে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাকে হাতও ঘোরাতে হতে পারে। কারণ বাড়তি ব্যাটার নিয়ে খেলানোর কারণে তিন পেসারের সঙ্গে একজন নিয়মিত বোলারকে পাবে না বাংলাদেশ। স্পিনে সাকিবের সঙ্গে মিরাজই ভরসা।

লিটন, সাকিবের অনুশীলন ছিল আঁটসাঁট। প্রয়োজনের বেশি অনুশীলন না করা সাকিবকে গতকালও বেশি সময় কাটাতে দেখা যায়নি; বরং লিটন লেগস্পিনার, চায়নাম্যানকে নিয়ে নেটে বাড়তি সময় দিয়েছেন। রশিদ খান ও মুজিবকে সামলানোর জন্য বোলারের মাথার ওপর দিয়ে এবং এগিয়ে এসে ইনসাইড আউট শট খেলার প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল তার ব্যাটিংয়ে। ঠিকঠাক কয়েকটি টাইমিং মিলিয়েছেন। আবার ভুলও করেছেন।

বিশ্বকাপ নিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কথা বলছেন দীর্ঘদিন। পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, দল বাছাই থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বাড়তি জোর দিয়েছেন।

মাঠে নামার আগে নিজেদের লক্ষ্য আরও একবার সামনে আনলেন তিনি, ‘আমরা প্রত্যেকেই বিশ^কাপ জিততে চাই। যেহেতু বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে, আমরা যদি চার থেকে পাঁচটি ম্যাচ জিততে পারি তাহলে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। এটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেখানে পৌঁছাতে সব উপকরণ আমাদের রয়েছে, ভালো দল আছে। সেমিফাইনালে খেলা আমাদের প্রথম লক্ষ্য।’

শেষ বিকেলে উইকেট থেকে কভার তুলে ঘাস ছাঁটাই হয়েছে। সঙ্গে হয়েছে পরিচর্যা। বিকেলে অনুশীলন করা আফগানিস্তানের কোচ-ক্রিকেটাররা উইকেট দেখেছেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। দুপুরের আগে মাঠ ছাড়া বাংলাদেশ উইকেটের পরিবর্তনের চিত্রটা দেখতে পায়নি। নিজেদের রণকৌশল আজ সকালের জন্য জমিয়ে রেখেছেন হাথুরুসিংহে।

সাত সকালে উইকেট দেখেই ঠিক করবেন একাদশ, ‘সকালে জিনিসটা নিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অবস্থায় থাকব।’

শৈল শহরে ক্রিকেটের উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনের কারিগর নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় রাজনীতির টেক্কা অনুরাগ সিং ঠাকুর। সাবেক বিসিসিআই সভাপতি বর্তমানে ক্রীড়া, যুববিষয়ক মন্ত্রী এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দায়িত্বে। ধর্মশালায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিশ্বকাপের যতগুলো ফেস্টুন চোখে পড়েছে, পাশেই রয়েছে অনুরাগ সিংয়ের ছবিসংবলিত বিশাল পোস্টার। মাঠের দেয়ালেও শোভা পেয়েছে তার ছবির তুলির আঁচড়।

তার সঙ্গে কাজ করা স্থানীয় তরুণ ভিনিদ সিং খুব আগ্রহ নিয়েই বললেন, ‘এখানে অনুরাগ স্যারই সব। সেটা ক্রিকেট হোক আর রাজনীতি।’

এই বিশ্বকাপ ঘিরে ধর্মশালা আর দুই দলের স্বপ্ন বেশ বড়। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ প্রথমবার আয়োজন করতে যাচ্ছে ধর্মশালা। গত দুদিনে আয়োজকদের অক্লান্ত পরিশ্রম চোখে পড়েছে বেশ। কেবল পাঁচ ম্যাচের জন্য তাদের যে আনন্দযজ্ঞ, তা স্টেডিয়ামে আসা দর্শক ও টিভির পর্দায় চোখে পড়বে। গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে রানের ফোয়ারাও ছুটবে। ব্যাট-বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য থাকবে। বাকিটা মাতানোর পালা দুই দলের ক্রিকেটারদের। মেঘের ভাঁজে ভাঁজে আশ্চর্য সুন্দরের খেলা চলবে এমনটাই প্রত্যাশা। আফগানিস্তানের চেনা আত্মবিশ্বাসে তাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত লাল-সবুজের স্বপ্নসারথিরাও।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION