শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
খেলাধুলা ডেস্ক:
নির্বাচক প্যানেলের প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু কথা বলবেন। পুনেতে বাংলাদেশ দলের হোটেল কানডারে মধ্যদুপুরে হাজির বাংলাদেশ থেকে আসা গণমাধ্যমকর্মীরা। কিন্তু ঘণ্টা তিনেক সময় পেরিয়েও তার দেখা মেলেনা। অগত্যা ফোনে জানানো হয়, টিম ম্যানেজমেন্টের বিধিনিষেধ! ধর্মশালায় যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল বিশ্বকাপ শুরুর আগে তা এখনও বলবৎ। কেবল ম্যাচের আগের দিনই পাওয়া যাবে দলের প্রতিনিধি।
হোটেলে পা রাখার সুবাদে একটা সুবিধা হয়েছে। ক্রিকেটারদের আনাগোনা চোখে পড়েছে। দেখে বোঝা গেছে তাদের মনোভাব। বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে আসলেও তাসকিন এখনও মেলে ধরতে পারেননি। তবুও তাকে আজ চনমনে দেখা গেছে। সাংবাদিকদের হাই-হ্যালো করে বেরিয়ে গেছেন মধ্যাহ্ন ভোজে। তার সঙ্গে থাকা শান্ত, তাওহীদ, তানজিদও ছিলেন বেশ প্রাণবন্ত। মাহমুদউল্লাহ প্রাণখোলা হাসি না দিলেও খানিকটা স্বস্তিতে আছেন বোঝা গেছে। তবে লিটন নিজের ওপর চাপ নিয়ে যে বেসামাল তা বোঝা গেছে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে।
অভিযোগ সাংবাদিকরা কেন হোটেলে! ওমন কাণ্ডের পর অস্বস্তি নিয়ে লিটন হোটেল ছেড়েছেন। বোঝা গেছে শেষ ম্যাচে গোল্ডেন ডাকের পর প্রবল চাপে আছেন এই ব্যাটসম্যান। কারণ, এই বছর তার নামের পাশে আরও চারটি শূন্য আগে থেকেই আছে। লিটন নিজ থেকে নিজেকে চাপে রাখলেও তার ওই আক্রমণাত্মক শটে দলের ইতিবাচকতা ও সাহসিকতার ছাপ এঁকেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর তৃতীয় ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বলে শাফল করে ছক্কা হাঁকাতে যাওয়ার চেষ্টা স্রেফ ক্রিকেটীয় দিক থেকে আত্মঘাতি। শুধু নিজের দিক থেকেই নয়, দলকেও প্রবল চাপে ফেলার ঘটনা। কিন্তু দল থেকে ওই ফ্রি লাইসেন্সই দেওয়া হয়েছে।
দলের সহকারী কোচ নিক পোথাস সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘সে (লিটন) তো ইতিবাচক একটি বার্তা দিয়েছে। বল যদি ৫ গজ এদিক-সেদিক যেত, তাহলে বাউন্ডারি হতো। তাহলে এখন এই আলোচনাই হতো না। আমরা চাই, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সাহসী হোক। আমার তাই কোনো আপত্তি নেই (তার শট নিয়ে)।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রবল প্রচলিত শব্দ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। টিম ম্যানেজমেন্ট সেই প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলে আসছেন দিনের পর দিন। পোথাস একটু বেশিই এগিয়ে। তাইতো বিশ্বকাপ মঞ্চে এসেও প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলছেন। অন্যান্য দলগুলো যেখানে ফলাফলের দিকে দৌড়াচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের সহকারী কোচ প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলছেন বেশ আগ্রহ নিয়ে, ‘আপনি পরিণতির কথা বলছেন, আমি বলছি প্রক্রিয়ার কথা। আমাদের আলোচনার প্রসঙ্গই তাই ভিন্ন। ওই বলটিতে বাউন্ডারি হয়ে গেলে আমাদের এই আলোচনাই হতো না।’
কোচ ভুল বলেননি নিশ্চয়ই কিন্তু তিন’শ বলের খেলায় যে আরো ২৯৯ বল পরে ছিল তা কে বোঝাবে?
লিটন পরের ম্যাচে কি করবেন সম্পূর্ণ তার ওপর। তবে ভারতীয় সমর্থকরা চান পাকিস্তানের মতো কিছু বাংলাদেশ না করুক। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ পুনেতে ভারতের বিপক্ষে। একদিন আগে আহমেদাবাদে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়েছে ভারত। বিশ্বকাপের ফেভারিটরা যেভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলেছে তা সত্যিই ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু পাকিস্তানের আত্মসমর্পনে যেটা হয়েছে ম্যাচ একটুও জমেনি। পুনে ব্যাট-বলের উষ্ণতা ছড়াক, রান উৎসব হোক এমনটা প্রত্যাশা করছেন পুনের হোটেলে কাজে আসা এক কার্গো জাহাজের ক্যাপ্টেন। নিয়মিত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে যাওয়া এই ভারতীয় অনড়গল বলতে থাকেন, ‘কে জিতবে সেটা পরের কথা। বাংলাদেশ ভালো খেলে ভারতকে হারাক তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু পয়সা উসুল করা ম্যাচ হোক। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই হোক। এভাবে ম্যাচ কি হয় নাকি। পাকিস্তান কাল দাঁড়াতেই পারল না।’
২০১১ সালে বিশ্বকাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল ভারত। শিরোপা জিতেছিল। এর আগে ১৯৮৩ এর শিরোপাও তারা পেয়েছিল। এবার ২০২৩ সালে আরেকটি শিরোপা চোখ তাদের। পরের ম্যাচ বাংলাদেশ কেমন করে সেটাই দেখার। একটা দাওয়াই টিম ম্যানেজমেন্ট দিয়েছে, হারলেও সাহস থাকতে হবে।’
সাহসীরাই বড় কিছু করতে পারে সেটাই এখন লাল সবুজ স্বপ্নসারথীদের প্রেরণা।
ভয়েস/জেইউ।