বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সুপারিশ বিষয়ে মহানবীর নির্দেশনা

মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী:

সুপারিশ হলো কারও জন্য মধ্যস্থতা করা বা অন্যের প্রয়োজন সমাধা করার জন্য কারও কাছে আবেদন করা। এটি একটি সামাজিক কাজ। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি মহৎ কাজ। বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কারও উপকার করা কিংবা অপকার দূর করার জন্য কারও কাছে আবেদন করা সওয়াবের কাজ।

সুপারিশের এই আমলটি কখনো শরিয়তসম্মত, আবার কখনো বা শরিয়তসম্মত নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি কেউ কোনো ভালো (কাজের) সুপারিশ করে, তাহলে তাতে তার অংশ থাকবে, আর কেউ কোনো মন্দ (কাজের) সুপারিশ করলে, তাতে তার অংশ থাকবে; আর আল্লাহ সব বিষয়ে নজর রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৫)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি কারও বৈধ অধিকার ও বৈধ কাজের জন্য বৈধ পন্থায় সুপারিশ করবে, সে সওয়াবের অংশ পাবে। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি কোনো অবৈধ কাজের জন্য অথবা অবৈধ পন্থায় সুপারিশ করবে, সে আজাবের অংশ পাবে।

সুপারিশের সওয়াব ও আজাব সুপারিশ সফল হওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং সুপারিশ করলেই সওয়াব অথবা আজাব নির্ধারিত হবে। আপনি ভালো সুপারিশ করলে সওয়াবের অধিকারী হবেন এবং মন্দ সুপারিশ করলে আজাবের যোগ্য হয়ে পড়বেন আপনার সুপারিশ কার্যকর হোক বা না হোক।

ভালো কাজে সুপারিশ করা একটি সৎকর্ম। সৎকর্মে সাহায্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ২)

এ ছাড়াও স্পষ্টভাবে বিভিন্ন হাদিসে সুপারিশ করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার সাহায্য অব্যাহত রাখেন, যতক্ষণ সে কোনো মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যে ব্যাপৃত থাকে। তোমরা সুপারিশ করো, সওয়াব পাবে। অতঃপর আল্লাহ স্বীয় পয়গম্বরের মাধ্যমে যে ফয়সালা করেন তাতে সন্তুষ্ট থাকো।’

রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করতে পারে না, তাকে অপমানিত করতে এবং শত্রুর হাতে তুলে দিতে পারে না। আর যে তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেন। যে (দুনিয়াতে) কোনো মুসলমানের একটি বিপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেয় আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ২৪৪২)

মুয়াবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, ‘সুপারিশ করে সওয়াব অর্জন করো, তোমাদের কোনো প্রয়োজন দেখলে আমি তা মাথায় রাখি যে, কখন তা সমাধান করে সওয়াবের অংশীদার হব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩২)

আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণিত, নবীজি (সা.)-এর খেদমতে যখন কোনো অভাবী কোনো প্রয়োজনে এসে প্রয়োজন পূরণ করার আবেদন করত, তখন তার মজলিসে যারা থাকতেন তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনি বলতেন, ‘তোমরা এই অভাবগ্রস্তের জন্য আমার কাছে সুপারিশ করো, ফের তোমরা সুপারিশ করার সওয়াব পাও।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ১৪৩২)

তাফসিরে মাজহারিতে বলা হয়েছে, কোনো মুসলমানের অভাব-অনটন দূর করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করাও ভালো সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত। এতে দোয়াকারীও সওয়াব পায়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যখন কেউ মুসলমান ভাইয়ের জন্য নেক দোয়া করে, তখন ফেরেশতা বলেন, আল্লাহতায়ালা তোমারও অভাব দূর করুন।’

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার পরামর্শ নেওয়া হয়, সে একজন আমানতদার।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১২৮) আমানতদারি ও ধর্মরীতি রক্ষা করে যা ভালো মনে হয়, তা পরামর্শগ্রহীতাকে জানিয়ে দেওয়া ফরজ; এটা পরামর্শের হক।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার কাছে সুপারিশ করো। এটা জরুরি নয় যে, তোমাদের সুপারিশ আমাকে শুনতেই হবে; বরং ফয়সালা তো আল্লাহতায়ালার মর্জি মোতাবেকই করব।’

নবীজি (সা.) বলেন, ‘মুহম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করে, তাহলে এ ব্যাপারে আমি কারও সুপারিশ গ্রহণ করব না এবং তার হাত কেটে দেব।’ (সহিহ বোখারি)

উদার মন-মানসিকতা নিয়ে সুপারিশ করতে হবে। সুপারিশ যদি গৃহীত না হয়, তাহলে এ নিয়ে তার রুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নবীজি (সা.) কতটা উদার মন নিয়ে সুপারিশ করতেন তা বোঝা যায় একটি ঘটনা থেকে। দুই সাহাবি- মুগিরা (রা.) এবং বারিরা (রা.)। সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। বিয়ের সময় বারিরা (রা.) ছিলেন আরেকজনের দাসী। বারিরা (রা.)-এর মনিব হয়তো তার অমতেই তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন মুগিরা (রা.)-এর কাছে। বারিরা ছিলেন অত্যন্ত রূপসী। কিন্তু তার স্বামী মুগিরা (রা.)-এর গঠন-আকৃতি সুন্দর ছিল না।

এরপরের কথা উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) এই দাসীকে কিনে স্বাধীন করে দিলেন। বারিরা (রা.) যখন স্বাধীন হয়ে গেলেন, তখন ইসলামি শরিয়তের বিধানানুসারে তার বিয়েটি টিকিয়ে রাখার কিংবা ভেঙে দেওয়ার নৈতিক অধিকার লাভ করলেন। এই অধিকারের ভিত্তিতে তিনি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে দেন। মুগিরা (রা.) অনুনয়-কান্নাকাটি করেও বারিরার মন গলাতে পারেননি। অবশেষে রাসুল (সা.)-কে বললেন, আপনি আমার জন্য সুপারিশ করুন। রাসুল (সা.) বারিরাকে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে সুপারিশ করলেন তুমি যদি তাকে আবার গ্রহণ করে নিতে! সে যে তোমার সন্তানের বাবা! সদ্য মুক্তি পাওয়া এই নারী রাসুল (সা.)-কে প্রত্যুত্তরে যা বলেছিলেন তাতেই তিনি ইতিহাস হয়ে থাকতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাকে এর আদেশ করছেন? (আপনার আদেশ যদি হয় তাহলে আমার জন্য তা শিরোধার্য। আমার মতের সঙ্গে তা মিলুক আর না মিলুক, আমি আপনার আদেশই মেনে নেব। কিন্তু যদি আদেশ না হয় তাহলে ভিন্ন কথা) রাসুল (সা.) বললেন, আমি কেবলই একজন সুপারিশকারী। (অর্থাৎ এটা তোমার প্রতি আমার আদেশ নয়, পরামর্শ ও অনুরোধ) তখন বারিরা (রা.) বললেন, তাই যদি হয়, তাহলে তার কাছে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তাকে আবার গ্রহণ করে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২২৩৩)

এখানে রাসুল (সা.) তাকে বিষয়টি চাপিয়ে দেননি। তবে এ সুপারিশ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কারণে তিনি অসন্তুষ্টও হননি এটা বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION