শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বড় সমাবেশের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি বিএনপির

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি প্রণয়নের পরিকল্পনায় ব্যস্ত রয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ নিয়ে মিত্রদের সঙ্গেও দফায় দফায় মতবিনিময় করছেন দলের নেতারা। আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে সেটি সফল করার বিষয়টিই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। গত ২৮ জুলাইয়ের চেয়েও বড় সমাবেশের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

এবারের মহাসমাবেশ থেকেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও সংস্থার অফিস ঘেরাও ও সেখানে অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হতে পারে চূড়ান্ত পর্বের আন্দোলন কর্মসূচি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা স্পষ্টভাবে না বললেও আভাসে বুঝিয়েছেন, সামনের কর্মসূচি হবে লাগাতার এবং কঠোর। শুরুতে না হলেও শেষ অবলম্বন হিসেবে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কথা বিবেচনায় রয়েছে তাদের। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির যে বৈঠক রয়েছে সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। এদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হরতাল এবং অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যেতে কিছু দ্বিধায় রয়েছেন। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের আন্দোলনের সময় দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধে জনজীবন প্রায় অচল করে পড়েছিল। কিন্তু সেই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি। সম্প্রতি সমমনা দলগুলো তাদের সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক সংলাপের সময় হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার সুপারিশ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আন্দোলনের ধরন কী হবে তা নির্ভর করবে সরকার আমাদের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ওপর। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ এবং তা সেভাবেই থাকবে। কিন্তু আমাদের ওপর হামলা হলে আত্মরক্ষা করার অধিকারও আমাদের আছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, বিএনপি ও তার মিত্ররা ২৮ অক্টোবরের পর ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার মাধ্যমে ঢাকার রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল নিয়েছে। তার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছেÑ পদত্যাগের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছেÑ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার যে কথা রয়েছে, তা ঠেকিয়ে দেওয়া। তারা চাইছে নির্বাচন কমিশন যাতে তফসিল ঘোষণা থেকে পিছিয়ে আসে। যাতে পদত্যাগের ‍জন্য সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানানো হবে।

এদিকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে ঢাকায় এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের বসে পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে সেটিকে অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। একেবারেই অপপ্রচার।’ গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করা হবে জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চান।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীকে ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলিনি। আমরা বলেছি, ২৮ তারিখের কর্মসূচির পর যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং আমাদের পরবর্তী কর্মসূচির জন্য অপেক্ষা করবে।’ এ প্রসঙ্গেই তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি পালাবার কোনো পথ নাই। সময় শেষ। আমরা নিশ্চয়তা দিতে চাই ২৮ অক্টোবর আমাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হবে। এর নিরাপত্তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নিজস্ব সিকিউরিটি ব্যবস্থা যেটা প্রয়োজন, সেগুলো আমরা নিয়েছি।’ ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সফল করতে দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের নিয়ে এই যৌথসভা হয়।

সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশ থেকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওইদিন বিএনপি ছাড়াও ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টিসহ বিভিন্ন সমমনা দল আলাদাভাবে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

মহাসমাবেশ নয়াপল্টনেই, ডিএমপিকে চিঠি

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনেই করা হবে। বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মের মধ্যেই চিঠি দিয়ে বিষয়টি আমরা ডিএমপিকে অবগত করেছি। আমি মনে করি অবগত করা হচ্ছে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়। সেটা আমরা করেছি। এখন সরকারের দায়িত্ব, ডিএমপির দায়িত্ব। আমাদের এই সমাবেশের নিরাপত্তাসহ যা কিছু করার তারা করবেন।’

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতো হবেÑ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটাতেই বুঝা যায় যে সরকারের উদ্দেশ্য খুব খারাপ। আপনাদের মনে আছে নিশ্চয় ১০ ডিসেম্বরের (২০২২ সাল) আগে ৭ ডিসেম্বরে বিনা প্ররোচনায়, বিনা উস্কানিতে আমাদের অফিসে আক্রমণ করেছে, আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমাদের ৪৫০ থেকে ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। এগুলো তারা করেছে আমাদের সমাবেশ পণ্ড করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। আমরা ১০ ডিসেম্বর আমাদের সমাবেশ করেছি। এখানে না হলেও অন্য জায়গায় করেছি, শান্তিপূর্ণভাবে করেছি। আমাদের ২৮ তারিখের সমাবেশও সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আবদুস সালাম, লিটন মাহমুদ, ইউনুস মৃধা, উত্তরের আবদুল হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, মোস্তাক মিয়া, অনিদ্য ইসলাম অমিত, শরীফুল ইসলাম, মাশুকুর রহমান মাশুক, মাহবুব আলম নান্নু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের মজিবুর রহমান, কাজী মনিরুজ্জামান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, লিয়াকত আলী, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর মধ্যে মানিকগঞ্জের আফরোজা খানম রীতা, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সীগঞ্জের কামরুজ্জামান রতন, ঢাকার আবু আশফাক খন্দকার, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, শাহ রিয়াজুল হান্নান, নারায়ণগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ইউসুফ খান টিপু, টাঙ্গাইলের ফরহাদ ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION