বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

জেলে পল্লীতে ফিরেছে প্রাণ চাঞ্চল্য

নিরাপদ আশ্রয়ে মাছ ধরার ট্রলার

বশির আল মামুন, চট্টগ্রাম ব্যুরো:
দীর্ঘ ৬৫ দিন অলস সময় কাটানোর পর অবশেষে সাগরে গেলেন চট্টগ্রামের উপক‚লীয় এলাকার জেলারা। এখন যেন উৎসব চলছে উপক‚লীয় এলাকায়। জেলে পল্লীতে ফিরে এসেছে প্রাণ চাঞ্চল্য। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েফে। ফলে ফের শুরু হয়ে গেছে জেলেদের মাছ ধরা। এতে গত দুই মাসের অধিককাল ধরে নির্জীব থাকা

জেলেপল্লীগুলোতে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তারা সাগরে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে তারা সাগরে যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের বেঁধে দেওয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ২৩ জুলাই শেষ হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় শুক্রবার (২৪ জুলাই) থেকে সমুদ্রে মাছ শিকারে বাঁধা নেই জেলেদের। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে নগরীর ফিসারীঘাটে গিয়ে দেখা গেছে এরই মধ্যে মাছ ধরার বোট ও ট্রলারগুলো মেরামত করা হয়েছে। জালের ক্রুটি সারানো হয়েছে।

ফিশিং ব্যবসায়ী আর জেলেরা জানিয়েছেন, প্রায় সব মা মাছই এসময়ের মধ্যে ডিম ছাড়ে। নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগের দুই মাসে জেলেদের জালে যে হারে ইলিশ ধরা পড়েছিল আগামী কয়েকদিন একই হারে ইলিশ জালে আটকা পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে নগরীর ফিসারীঘাট ও উপক‚লের কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা নৌকা ও জাল মেরামতসহ সবরকম প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে। কয়েকটি ঘাটে দ্বিগুণ শ্রমিক ও মজুরি দিয়ে নৌকা মেরামতসহ জাল মেরামতের কাজ করা হচ্ছে। অনেকে নৌকায় জাল উঠানোর কাজ করছেন।

জেলেরা জানান, সবরকম প্রস্তুতিও শেষ করে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে সবাই মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে। শুক্রবার ভোর থেকেই উপক‚লের লক্ষাধিক জেলে সাগরে অবস্থান নিয়েছেন।
জানা গেছে, সরকারি নিষেধাজ্ঞার এই ৬৫ দিন মাছ শিকার থেকে বিরত থেকেছেন বেশিরভাগ জেলে। এদের মধ্যে যেসব অসাধু জেলে নদীতে মাছ শিকারে গেছেন তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক হয়ে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন। এবছর অভিযানের সফলতা দেখছে মৎস্য অধিদফতর। তাদের ধারণা পর্যাপ্ত পরিমাণ মা ইলিশ ডিম ছাড়বে। চলতি বছরের চেয়ে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।

চট্টগ্রাম ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নুর হোসেন জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও সমুদ্রে নিন্মচাপের সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। সমুদ্র এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। এরপরও দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেলেরা সমুদ্রে গেছেন। আর সমুদ্রে না গেলে আবহাওয়া সংক্রান্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি এবার মাছ শিকার ভালো হবে।তিনি বলেন, সমুদ্র অশান্ত হলেও ভয় নেই জেলেদের। তাদের দু’চোখে এখন কেবল মাছ শিকারের স্বপ্ন। তাই জেলে পাড়ায় এখন উৎসবের আমেজ চলছে। এর সাথে সাথে দাদন ব্যবসায়ীদের উৎপাত বেড়েছে। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। এখানকার প্রায় ১২ হাজার ফিশিং বোট সাগরে ও নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। চট্টগ্রামের বাশঁখালী, আনোয়ারা, সিতাকুন্ড, মিরসরাই, মোট্রা, কক্সবাজরের সদর উপজেলা, টেকনাফ, মহেষখালী, কতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার প্রায় ৬ লাখ জেলে নদীতে ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বিকল্প কোন কর্মসংস্থান নেই।

বৃহস্পতিবার ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশ শিকারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। কেউ কেউ পাথরঘাটা পৌর শহরের পাইকারি মুদি দোকানে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রায় সকল ফিশিং বোটেই ইতোমধ্যে মাছ ধরার জাল তোলা হয়েছে। অনেক জেলে জালের বুননে এখনো ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা অন্যান্য মাছের সাথে এবার জালে বড় ইলিশ ধরা পড়বে। চট্টগ্রাম ছাড়াও কক্সবাজার, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরশ^রাই, মহেষখালী ওকুতুবদিয়া উপক‚লজুড়ে বিরাজ করছে এ উৎসব।

চট্টগ্রাম জেলা সহকারী মৎস মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকায় ৬৫ দিন বঙ্গোপ সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ায় জেলেরা সাগরে যেতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা, বাশঁখালী, সিতাকুন্ড, মিরসরাই উপজেলায় এবং চট্টগ্রাম মেট্রো এলকার কাট্টলী, হালিশহর, পতেঙ্গা, সদরঘাট, ফিরিঙ্গি বাজার, পাথরঘাটা এলাকায় প্রতি পরিবারে চাউল বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৭ হাজার মাছধরার বোট রয়েছে। এসব ট্রলারের লক্ষাধিক জেলে সাগরে অনুক‚ল আবহাওয়া থাকা সাপেক্ষে সাগরে রওয়ানা দিতে পারেন। তবে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অধিকাংশ ট্রলার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও শুক্রবার-শনিবারের মধ্যেই শতভাগ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যাবে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারীঘাট, কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাট থেকেই জেলার অধিকাংশ ট্রলার সাগরে যায়। বাকী ট্রলারগুলো জেলার অন্যান্য উপক‚ল থেকে সাগরে আসা-যাওয়া করে।
বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছধরার বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর সাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপক‚লের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এসব বোটগুলো সাগর উপক‚লে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।

বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদসহ মূল্যবান প্রাণিজ রক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও ছিল এ নিষেধাজ্ঞার আওতায়। উল্লেখ্য প্রজননকালে দীর্ঘ ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে সাগর মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION