মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী:
পারলৌকিক সফলতাই আসল সফলতা। এটা কোরআন ও হাদিসের সারকথা। তাই ইহলৌকিক জীবনে যথাযথভাবে এমন সব নেক আমল করা, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়। এজন্য প্রয়োজন রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে নিজের জীবন পরিচালিত করা। আর তা অর্জনের জন্য ইসলাম কিছু মাধ্যম ও উপকরণ গ্রহণ করার নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন : নিজের আমলের হিসাব নেওয়া, নেক আমল ও আখেরাতের স্মরণ। এ সমস্ত উত্তম গুণাবলি সৃষ্টি করার এক প্রতিক্রিয়াশীল মাধ্যম হলো মৃত্যু এবং আখেরাতের বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে ভাবা।
আখেরাতের স্মরণের মাধ্যমে পার্থিব জীবনের অনিশ্চয়তার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অনন্ত অসীম প্রকৃত জীবন আখেরাতের জন্য নেক আমল করার আগ্রহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। আখেরাতের স্মরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো কবর জিয়ারত করা। এতে আল্লাহর ভয় অন্তরে সৃষ্টি হয়। এজন্য কবর জিয়ারত একটি উত্তম আমল। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে শহীদদের কবর জিয়ারত করতেন। রাসুল (সা.) এর পর সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও এ আমল অব্যাহত ছিল। তাই কবর জিয়ারত করা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এর ওপর মুসলিম উম্মাহর ইজমা বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এর বিপরীত ধারণা পোষণ করা ইমানদারের লক্ষণ নয়। তবে এ কথা ঠিক যে, ইসলামের প্রথম দিকে মুসলমানদের ইমান আনাটা নতুন হওয়ায় কবর জিয়ারত নিষেধ ছিল। পরবর্তী সময়ে এর অনুমতি দেওয়া হয়। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পারো। কেননা কবর জিয়ারত দুনিয়া বিমুখতা সৃষ্টি করে এবং আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।’- ইবনে মাজাহ
জিয়ারতের মুস্তাহাব সময় : কোনো নিয়ম না বেঁধে পুরুষদের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়েজ। প্রতি শুক্রবার না পারলে বৃহস্পতিবার বা শনিবার বা সোমবার জিয়ারত করার জন্য যাওয়া মুস্তাহাব।- রদ্দুল মুহতার ২/২৪২
তবে এ তিনদিনের মধ্যে শুক্রবারে যাওয়াই ভালো। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি জুমায় তার মা-বাবা বা তাদের একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।’- আল মুজামুল আওসাত
জিয়ারতের সুন্নত তরিকা : প্রথমে মৃতকে উদ্দেশ্য করে সালাম প্রদান করা। অতঃপর দরুদ শরিফ পাঠ এবং কুরআন মাজিদ থেকে তিলাওয়াত করা। বিশেষ করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা ইখলাস, সুরা তাকাসুর ইত্যাদি সুরা পড়া। তারপর হাত না উঠিয়ে মৃতদের জন্য ইসালে সওয়াব করা। তবে হাত উঠাতে চাইলে জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা যাবে।- রদ্দুল মুহতার ২/২৪২-২৪৩
ঈদের দিন কবর জিয়ারত : ঈদের দিন কবর জিয়ারত করা ভালো। তবে আবশ্যক মনে করা যাবে না। এবং কেউ না করলে নিন্দাও করা যাবে না।- মিরকাতুল মাফাতিহ ৩/৩১
কবরের কাছে গিয়ে যা করা নিষেধ : কবরবাসীর কাছে কিছু কামনা করা, নামাজ আদায় করা বা সিজদা করা, তার অসিলায় মুক্তি প্রার্থনা করা, সেখানে দান-সদকা ও মান্নত করা, গরু-ছাগল, মোরগ ইত্যাদি দেওয়া বা কোরবানি করা ইত্যাদি শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তাই কোনো কবর ঘিরে এমনটি করা ঠিক নয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কবরের ওপর মসজিদ নির্মাণকারী এবং তাতে বাতি প্রজ¦লনকারীদের অভিশাপ দিয়েছেন।’- সুনানে আবু দাউদ
যদি কেউ এমন মান্নত করে ফেলে তা পুরা করা জায়েজ নয়। পুরা করলে গোনাহগার হবে। কারণ গোনাহের কাজের মান্নত করলে তা শুদ্ধ হয় না। তাই তা পালন করা যাবে না। বরং তওবা করতে হবে।- আলমগিরি ১/২০৮
জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা : কবর বা মাজার জিয়ারতের জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়া ঠিক নয়। তবে সেখানে যদি ভিন্ন কোনো কারণে গিয়ে থাকে তাহলে সে এলাকার ওলি-বুজুুর্গদের কবর জিয়ারত করে আসাতে সমস্যা নেই। তবে রাসুল (সা.)-এর কবর জিয়ারতের বিষয়টি ভিন্ন। অন্যদের কবর বা মাজারকে এর ওপর তুলনা করা সঠিক নয়।- রদ্দুল মুহতার ২/৬২৭
আমাদের উচিত আপন আত্মীয়-স্বজন এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কবর জিয়ারত করে তাদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করা। এতে তারাও লাভবান হবেন এবং আমরাও মৃত্যুর কথা স্মরণ করে দুনিয়ার জীবনকে পরকালের জন্য সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।
ভয়েস/আআ