সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:০৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

খুব কাছে রমজান অপেক্ষা সইছে না মুমিনের

মুফতি আতিকুর রহমান:
১১ মার্চ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ মার্চ বাংলাদেশে রমজান শুরু হতে পারে। দিনের হিসাবে মাত্র ৩ দিন পর হলেও মুমিনের আর তর সইছে না। যদিও মুমিনের হৃদয়ে রমজানের পবিত্র হাওয়া বইতে শুরু করেছে শাবান মাসের শুরু থেকেই। কিন্তু বাস্তবে তো রমজানকে ছোঁয়া যাচ্ছে না। আমলের বসন্তে বিচরণ করা যাচ্ছে না। মাত্র তিন দিন বাকি। খুব কাছে রমজান। এই ভেবে মুমিন ক্ষণে ক্ষণে শিহরিত হচ্ছে। কেননা মুমিন সারা বছর অপেক্ষা করে রমজানের। অপেক্ষার পালা যখন ঘনিয়ে আসে তখন সামান্য অপেক্ষাও মধুর যন্ত্রণায় পরিণত হয়। আকাশের নতুন চাঁদ রমজানের প্রবেশদ্বার। সেই দ্বার খোলার অপেক্ষায় মুমিন।

রমজান নিয়ে মুমিনের কেন এত অপেক্ষা? কেন এত ব্যাকুলতা? কারণ রমজান অন্যান্য মাসের তুলনায় অত্যধিক ফজিলত, বরকত, রহমত ও মাগফিরাতময়। এ মাস আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন ও তাকওয়া অর্জনের। তাই বিশ্বের মুমিন মুসলমানরা প্রতি বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই মাসের। এই মাস পেলে তারা সাদরে গ্রহণ করেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আহলান ওয়া সাহলান মাহে রমজান।

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধীর আগ্রহে রমজান মাসের অপেক্ষা করতেন। তার কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল রমজান মাস। তিনি রমজানের আগে বিশেষ ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও উদ্বুদ্ধ করতেন। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন রমজান মাস পাওয়ার জন্য। রমজানের চাঁদ উদিত হলে তিনি অত্যন্ত খুশি হতেন। রমজানের চাঁদকে স্বাগত জানাতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের সুসংবাদ দিতেন। এছাড়াও তিনি শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রেখে রমজানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতেন। শাবান মাসে তিনি এত বেশি নফল রোজা রাখতেন, যা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না। তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন এবং বলতেন, তোমাদের মধ্যে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, ততটুকু নফল আমল করো। কারণ তোমরা (আমল করতে করতে) পরিশ্রান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত মহান আল্লাহ নেকি দেওয়া বন্ধ করেন না।’ (সহিহ বুখারি) অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি।’ -সুনানে আবু দাউদ

মুমিন এই কারণেও বিশেষভাবে রমজানের অপেক্ষা করে যে, মহান আল্লাহ বান্দাকে রমজান মাসের রোজার প্রতিদান বিশেষভাবে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য। কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধুই আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ -(সহিহ মুসলিম) মহান আল্লাহর কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রমজানের রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। মহান আল্লাহর কাছে বান্দা সব আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান মহান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। মহান আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, বান্দাকে যে প্রতিদান মহান আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান অনুযায়ী দেবেন।

রমজানের রোজার ফজিলত এবং রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের অনেক বর্ণনা রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মহান আল্লাহর কাছে মিশকের সুঘ্রাণের চেয়েও উৎকৃষ্ট।’ -ইবনে মাজাহ

জান্নাতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে রোজাদারের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররাই প্রবেশ করতে পারবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে করে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।’ -সহিহ বুখারি

রোজা বান্দার গুনাহসমূহকে মুছে দেয়। বান্দাকে নিষ্কলুষ করে তোলে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি) রোজাদার ব্যক্তির জন্য রোজা কিয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহর কাছে জান্নাতের সুপারিশ করবে। এই বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ -মুসনাদে আহমদ

রমজানের যে গভীর মাহাত্ম্য এবং অপার ফজিলত তা যথাযথভাবে অর্জন করার জন্য মুমিনদের সঙ্গে সঙ্গে গোনাহগার-পাপিষ্ঠরাও নিজেদের আত্মনিয়োগ করেন। তাই তো রমজানের আগমনে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তিতা তৈরি হয়ে যায়। মানুষের চালচলনে থাকে কোমলতার ছোঁয়া। মানুষ কথাবার্তায় হয় সংযমী। সমাজ ও রাষ্ট্র চিত্রে আসে কল্যাণকর পরিবর্তন। রমজান পালনের সুবিধার্থে বন্ধ রাখা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অফিস আদালতের জন্য নির্ধারণ করা হয় নতুন সময়সূচি। দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্য গ্রহণ করা হয় নানা উদ্যোগ। মসজিদগুলো হয় ইবাদত মুখর। মানুষের মধ্যে দেখা যায় ভালো কাজের প্রতিযোগিতা। মানুষ বেশি বেশি দান সদকা করে। ফরজের পাশাপাশি মনোযোগী হয় নফল আদায়ে। রমজানের আগমনে এভাবে দেশের সর্বত্র বিরাজ করে এক ধর্মীয় আবহ।

রমজানে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার ত্যাগ করে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যন্ত্রণা ভোগ করা হয়। এ যন্ত্রণা মানুষের পাপকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে আত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ করে তোলে। দরিদ্র অনাহারীর মতো অভুক্ত যন্ত্রণার স্বাদ আস্বাদন করে মানুষ। এতে দরিদ্রের প্রতি দরদ জাগ্রত হয়। শেষ বিচার দিবসের ভয়াবহ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কথা স্মরণ হয়। তাই মুমিন ব্যক্তি রমজানের আগমনে ব্যাপক খুশি হন এবং যথাযথভাবে রমজান পালনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট

atikr2047@gmail.com

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION