মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ও ফজিলত

মুফতি আইয়ুব নাদীম:

দীর্ঘ এক মাসের ইবাদতের বসন্তকালের পর, সীমাহীন প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে দুয়ারে উপস্থিত মুসলমানদের শীর্ষ উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ মানে আনন্দ, খুশি ও উৎসব। এই আনন্দ, খুশি ও উৎসব উদযাপন করা মানুষের স্বভাবজাত একটি বিষয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ঈদ আছে। আছে আনন্দ, খুশি ও উৎসবের বিশেষ দিন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ঈদ আছে, প্রতিটি জাতিরই খুশির দিন আছে। আর এটা আমাদের ঈদ, আমাদের খুশির দিন।’ -সহিহ বুখারি

যেভাবে ঈদ পেলাম আমরা : আমাদের এই ঈদ উৎসব প্রবর্তন হয় যখন রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করেন। তখন সেখানকার অধিবাসীদের দেখলেন, বছরে দুটি দিন বিশেষভাবে আনন্দ ও খুশির সঙ্গে উদযাপন করে। আর সেই উৎসবে তাই হতো যা আমাদের দেশের মেলাগুলোতে হয়ে থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে এই উৎসবের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন, উত্তরে তারা বলল, আমরা জাহেলিয়াতের যুগে এই দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ ফুর্তি করতাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের এই উৎসবকে তীব্রভাবে অপছন্দ ও প্রত্যাখ্যান করে বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এই দুটি দিনের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। একটি ঈদুল আজাহা, আর অপরটি ঈদুল ফিতর।’ -আবু দাউদ

আমাদের ও অন্যান্য জাতির ঈদের পার্থক্য : মানবজাতির সৃষ্টির আসল উদ্দেশ্যেই যেহেতু মহান আল্লাহর ইবাদত তাই যাপিত জীবনে মোমিনের আনন্দ-উৎসব ও সুখ-দুঃখ, এক কথায় সবকিছু আল্লাহর জন্য হবে এবং কোন কাজই ইবাদত বহির্ভূত হবে না। মুসলিম জাতির আনন্দ ও উৎসব উদযাপনের যত দিন বা সময় আছে, তার অন্যতম একটি ঈদুল ফিতর। আর আমাদের এই ঈদ উৎসবে শরিয়ত বিরোধী কোনো কাজ যেমন নাচ, গান, বাজনা, আতশবাজি, পটকাবাজি ইত্যাদি কিছুই নেই। এক কথায় আমাদের আনন্দ-উৎসব শরিয়তের আদেশ-নিষেধর মধ্যে সীমিত। শরিয়ত সমর্থন করে না, এমন কোনো কাজ এখানে নেই। আর অন্যান্য জাতির ঈদ উৎসবে শরিয়ত বর্জিত ও নিষিদ্ধ এসব জিনিস আছে এবং এটাই তাদের আনন্দ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ও নিদর্শন।

ঈদের রাতের ফজিলত : হজরত আবু দারদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় উভয় ঈদের রাতে ইবাদত করবে, তার অন্তর সেদিন মরবে না যেদিন সমস্ত অন্তর মারা যাবে।’ -(ইবনে মাজাহ) আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত এবং অর্ধ শাবানের রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, তাহলে সেদিন তার অন্তর মারা যাবে না যেদিন সমস্ত অন্তর মারা যাবে।’ -মারেফাতুস সাহাবা

ঈদের রাতে দোয়া কবুল হয় : দোয়া মোমিনের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। আর নিজের জীবনে নেমে আসা অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে জীবনের ভাগ্যও ঘুরে যায়। আর সে দোয়া যদি কবুলের আশ্বাস পাওয়া যায় তাহলে হেলায়-খেলায় সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। এ প্রসঙ্গে হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাতে দোয়া বিফলে যায় না। এক. জুমার রাত। দুই. রজবের প্রথম রাত। তিন. শাবানের ১৫ তম রাত। চার. ঈদুল ফিতরের রাত। পাঁচ. ঈদুল আজহার রাত।’ -শুআবুল ইমান

ঈদুল ফিতরের শিক্ষা : একজন সফল ও প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, যে কোনো বস্তু থেকে কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা। সেই হিসেবে ঈদুল ফিতর থেকে শিক্ষা কি, তা জানা জরুরি। ঈদুল ফিতরের অসাধারণ শিক্ষা হলো, সেদিনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে মৃত্যু ও পরকাল ভাবনা পাওয়া যায়। তা কীভাবে? হ্যাঁ, তাই বলছি। ঈদুল ফিতরের গোসল স্মরণ করিয়ে দেয়, শেষ বেলার গোসলের কথা। আমাদের জীবনের আয়ু যখন শেষ হয়ে, জীবন সূর্য যখন অস্তমিত হয়, তখন প্রত্যেককেই বিদায় বেলার গোসল দেওয়া হয়। ঈদুল ফিতরের গোসল আমাদের দারুণভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের সেই গোসলের কথা। আজকে প্রায় সকলেই সাধ্যানুযায়ী নতুন পোশাক বা ভালো পোশাক পরিধান করে এসেছে। আজকের এই পোশাক স্মরণ করিয়ে দেয়, শেষ বেলার নতুন কাপড়, কাফনের কাপড়ের কথা। সেদিন সকলকে কাফনের নতুন কাপড় পড়ানো হবে। ঈদুল ফিতরের সুগন্ধি ব্যবহার স্মরণ করিয়ে দেয় শেষ বেলার সুগন্ধির কথা। আজকে সবাই সুগন্ধি লাগিয়ে এসেছে। এমন একদিন আসবে, যেদিন সকলকে শেষবারের মতো সুগন্ধি লাগিয়ে দেওয়া হবে।

ঈদুল ফিতরের নামাজ স্মরণ করিয়ে দেয়, শেষ বেলার জানাজা নামাজের কথা। আজকে সবাই নামাজ পড়তে এসেছে, একদিন এমন আসবে, যেদিন সকলকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসা হবে, আর তার ওপর নামাজ পড়া হবে।

এ ছাড়া ঈদুল ফিতর থেকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও ভ্রাতৃত্ববোধের মন-মানসিকতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ইত্যাদি মানবীয় ও কল্যাণকর গুণের শিক্ষা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ আমাদের, ঈদুল ফিতরের যথাযথ শিক্ষা নিয়ে, শরিয়ত নির্দেশিত সত্য, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন ও সমাজ গঠন করার তৌফিক দান করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION