মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ঈদ হোক পুণ্যময়

আবদুল আউওয়াল:

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। কিন্তু এই খুশি কাদের জন্য? এই আনন্দের উদ্দেশ্য কী? কত দিন চলতে পারে এই আমোদ-প্রমোদ? ঈদ কী দেশীয় সংস্কৃতির অংশ? ঈদ কী নিজেদের বানানো কোনো আচার-অনুষ্ঠান, মন চাইলেই যা খুশি তা-ই করব? যেভাবে খুশি সেভাবে উদযাপন করব? অবশ্যই না। ঈদ ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। এরও স্বকীয়তা রয়েছে। আজকাল আমরা ঈদের নামে এমন অনেক কিছু করি যেগুলো ঈদের পবিত্রতাকে নষ্ট করে। ঈদের সঙ্গে যেগুলোর আদৌ কোনো সম্পর্ক থাকে না। ফলে দৃশ্যত আনন্দ মনে হলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তা আর আনন্দ থাকে না। হয়ে যায় বেদনার বিষয়; শয়তানের কাজকাম।

ঈদের ইতিবৃত্ত : জাহিলি যুগে মদিনার মানুষ বছরে দুটি উৎসব পালন করত। এতে তারা বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার আয়োজন করত। আমরা কমবেশি সবাই জানি, জাহিলি যুগের খেলা মানেই তীর-তলোয়ারের খেলা। ঘোড়দৌড়, মদ-জুয়ার আড্ডা, গানবাজনাসহ নানা অন্যায় কাজের আসর। তাই নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় গিয়ে যখন দেখলেন সেখানকার বাসিন্দারা তাদের উৎসবগুলো যথারীতি পালন করছে। এমনকি মুসলমানরাও এসব উৎসবে শামিল হচ্ছে। (অবশ্য তারা মুসলিম হওয়ার সুবাদে অন্যায় কাজে না জড়ালেও খেলাধুলায় লিপ্ত হতো।) তা নবীজির পছন্দ হয়নি। তাই জাহেলি যুগের নিছক বিনোদনকে চিরতরে বিলুপ্ত করে একটি সুন্দর ও অর্থবহ উৎসব চালুর নিমিত্তে ‘ঈদ’ নামক দুটি আনন্দ উৎসবের ব্যবস্থা করলেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখতে পেলেন সেখানের অধিবাসীরা বছরে দুটি আনন্দ উৎসব করছে। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বলো তো তোমাদের এ দুটি দিন কীসের? তখন তারা বলল, ‘আমরা জাহিলি যুগেও এ দিনে খেলাধুলা করতাম।’ তাদের এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য এ দুটি দিনের বিনিময়ে আরও উত্তম দুটি আনন্দপূর্ণ দিন দান করেছেন। একটি ঈদুল ফিতর ও অপরটি ঈদুল আজহা।’ -সুনানে আবু দাউদ ১১৩৪

ঈদে আনন্দের কারণ : ঈদের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুসলিম দুনিয়ায় খুশির রব পড়ে। আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। এ আনন্দের কারণ হিসেবে হাদিসে উল্লেখ আছে হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের রাতে ফেরেশতাদের মাঝে আনন্দ ও খুশির ঢেউ বইতে থাকে। একপর্যায়ে মহান আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘বলো তো যারা আমার কাজ করেছে তাদের কী পুরস্কার দেওয়া যায়?’ তখন ফেরেশতারা বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমরা তাদের পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার আবেদন করছি।’ তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম!’ -মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯৬

এটাই হলো মুসলমানদের আনন্দের প্রকৃত কারণ। যারা সারা মাস আল্লাহর জন্য রোজা রেখেছে, তারাবির নামাজ আদায় করেছে তারাই এই আনন্দের প্রকৃত হকদার। কিন্তু যারা নামাজ রোজা পালন করেনি তারা তো পাপী। আল্লাহর অবাধ্য। নবীজির ভাষায় তারা ‘চরম হতভাগা’। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই অপরাধী, কপাল পোড়ারাই পুণ্যবান মুসলমানদের ঈদের প্রকৃত আনন্দ উদযাপনের সুযোগ দেয় না। নানা রকমের পাপ কাজের আয়োজনের মাধ্যমে ঈদের পবিত্রতাকে নষ্ট করে। ঈদের কোনো গান হয় না। ঈদের কোনো নাটক সিনেমা হয় না। খেলাধুলা, রং-তামাশা, মদ জুয়াসহ হীন অপকর্মের সঙ্গে ঈদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ কথা প্রতিটি নামাজি ও রোজাদারকে বুঝতে হবে।

ঈদে করণীয় : সম্ভব হলে ঈদের রাত ইবাদতে কাটানো। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে ইবাদত করবে তার অন্তরকে আল্লাহতায়ালা রহমত ও বরকতের বারিধারায় পূর্ণ করে দেবেন।’ -সুনান ইবনে মাজাহ ১৭৮২

ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই উপযুক্ত ব্যক্তির সদকাতুল ফিতর আদায় করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের নামাজে যাওয়ার আগেই সদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিতেন। -(সহিহ বুখারি ১৫০৯) এরপর ঈদের নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে সম্ভব হলে খোলা ময়দানে জামাতের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। এ নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘হে মুসলিম জাতি, ভালো কাজের ক্ষমতাদাতা ও সওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহর কাছে তাড়াতাড়ি চলো। তোমাদের রাতে ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ। তোমরা তোমাদের রবকে খাইয়েছ (অর্থাৎ গরিব-মিসকিনকে ফিতরা দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছ) আজ এর পুরস্কার গ্রহণ করো।’ অতঃপর মুসলিমরা যখন ঈদের নামাজ পড়েন তখন একজন ফেরেশতা উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন, ‘তোমাদেরকে তোমাদের রব ক্ষমা করে দিয়েছেন! এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহমন নিয়ে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাও!’ -আল মুজামুল কাবির ৬১৮

ঈদুল ফিতর এখানেই শেষ। কোনো কারণে ঈদুল ফিতরের নামাজ শাওয়ালের ১ম দিন আদায় করতে না পারলে ২য় দিন আদায় করবে। এ ছাড়া আমরা যা কিছু করি এর হাতেগোনা কয়েকটি কাজ মোস্তাহাব হলেও বাকি সব সামাজিক কাজ। তবে স্মরণ রাখতে হবে সামাজিক কাজ করতে গিয়ে ঈদের নামে কোনো নোংরামি যাতে না হয়। দিনের পর দিন রং-ঢং চলতে থাকার সঙ্গে ঈদের কোনো সম্পর্ক নেই। ঈদ হোক পুণ্যময়। আনন্দ হোক পবিত্র আবহে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION